আজকাল মানুষের বিশেষ একটি অনুভুতি যন্ত্রটি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেটি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। ক্ষতিকর। যে অনুভুতি যন্ত্রটি যুগে যুগে সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ্য করেছে। যে অনুভুতি যন্ত্রের প্ররোচনায় ব্রুণোর হত্যাকান্ড ঘটেছে, যে অনুভুতি যন্ত্রের চোখ রাঙানীতে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন গ্যালিলিও; যে অনুভুতি যন্ত্রের নৃসংশতায় সমাজচ্যুত হয়েছেন ইবনে সিনা, ওমর খৈয়াম থেকে এই বাঙলার নজরুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।
নজরুল বড় আক্ষেপ করে সাম্যবাদী কবিতায় লিখেছিলেন, তোমার মিনারে চাড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়। খুবই নির্ভুল ছিল তাঁর এই পর্যবেক্ষণ। আজ এই একবিংশ শতকে এসেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক কবি নজরুলের এই আক্ষেপটি। বিজ্ঞান দর্শন সাহিত্য শিল্পকলা জ্ঞানের সকল শাখার বিকাশের ক্ষেত্রে যে বাধাটি আসে তা আসে ঐ বিশেষ অনুভুতি যন্ত্রটি থেকেই। এই অনুভুতির দোহাই দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষগুলো স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলো মানুষের সমস্ত শুভ চিন্তার অগ্রযাত্রাকে। যে অন্ধতাকে অতিক্রম করে বিজ্ঞানের আজকের এই অগ্রযাত্রা সেই অন্ধতা সেই পশ্চাতপদতা পুনরায় অধিকার নিতে উদ্যত হয়েছে আজকে। মানুষের সম্মিলিত অর্জনের বেদীমুলে দাঁড়িয়ে আবার তারা স্তবগান গাইছে অন্ধকারের। বিরোধিতা করছে মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধির। কী আশ্চর্য, আজ যে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে এইসব অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষগুলো বিরোধীতা করছে মুক্তচিন্তার, কন্ঠরোধ করতে চাইছে মুক্তবুদ্ধির, সেই প্ল্যাটফর্মটিও তাদের তৈরী নয়। সেটিও তৈরী হয়েছে মুক্তচিন্তার মানুষের অক্লান্ত শ্রমে সাধনায়।
এইসব অনুভুতি সম্পন্ন মানুষগুলো বেশ ভন্ড প্রকৃতির হয়ে থাকে। প্রমানিত সত্যকে মিথ্যা বলতে এ গ্রহে এদের জুড়ি নেই। যুক্তির বদলে ফ্যালাসী, ইতিহাসের বদলে গল্প বানাতে এইসব মুর্খ অথবা জ্ঞানপাপীদের দক্ষতা রীতিমতো ঈর্ষনীয়। এই যে আজ এরা বিরোধীতা বিবর্তনবাদ নামক করছে একটি প্রমানিত সত্যের; আমি খুব অবাক হবো না যদি আজ থকে পঞ্চাশ বছর পর শুনি এরা হাজার দেড়হাজার বছর আগেকার গ্রন্থে খুঁজে পায় বিবর্তনবাদের উৎস সুত্র, এবং দাবী করে এটাও তাদের গ্রন্থের কৃতিত্ব বলে।
এবং অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সেই পশ্চাৎপদ অন্ধকারাচ্ছন্ন অনুভুতি যন্ত্রটি রক্ষায় মরিয়া সমাজ রাষ্ট্র সহ ছোটখাটো সমস্ত প্রতিষ্ঠান উপপ্রতিষ্ঠান। স্থিতিশীলতা দোহই দিলেও মুলত বাণিজ্যক স্বার্থ এ ক্ষেত্রে প্ররোচিত করে প্রতিষ্ঠান সমুহকে। আর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালকদের বানিজ্যিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে এই বিশেষ অনুভুতি যন্ত্রটিকে সুরক্ষিত করার প্রয়াস চলে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



