somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিফেন কিংয়ের গল্প: কুয়াশার অন্যপাশে

১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাসা থেকে বের হলো পিট জ্যাকব। সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে ছুটে এলো কুয়াশা। সে দেখলো, গাঢ় কুয়াশা তার বাসাটাকে গিলে ফেলেছে। সামনে কুয়াশায় তৈরি একটা চাদর ছাড়া সে আর কিছইু দেখতে পাচ্ছে। তার ভেতর অদ্ভূত এক অনুভূতি তৈরি হয়। মনে হয়, পৃথিবীর কোথাও আর কেউ নেই, সে-ই হলো এ গ্রহের শেষ মানুষ।

আচমকা কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো পিট জ্যকাবের। মাথাটা বন বন করে পাক খাচ্ছে, আর মোচড় দিচ্ছে পেট। অনেক উপর থেকে দ্রুতগতিতে লিফট নেমে এলে যেমনটা লাগে, মনে হচ্ছে ওইরকমই একটা পড়ন্ত লিফটের মধ্যে সে দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য ওই অনুভূতিটা দীর্ঘক্ষণ টেকসই হলো না। শরীরটাকে একটু নাড়া দিয়েই অদ্ভূত অনুভূতিটা চলে গেল।

জ্যাকব পিট এবার ধীর পায়ে হাঁটতে থাকেন। হালকা হাওয়ায় কুয়াশা কাটতে শুরু করে। কিন্তু কুয়াশা কাটতে শুরু করার সাথে সাথে পিটের চোখ আতঙ্কে আর বিস্ময়ে কপালে ওঠলো। একি, এসব কি হচ্ছে! কোথায় এলো সে?

পিট একটা শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানে কোনো শহর থাকার কথা নয়। কারণ তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের শহর চল্লিশ কিমি দূরে!

এ কেমন শহর! সবকিছুই একদম অচেনা। এই জীবনে এরকম আগে কখনো সে দেখেনি।

অদ্ভূত সুন্দর সব অট্টালিকা, অনেক উঁচু। প্রতিটা ভবন যেন আকাশ ছুঁয়েছে। লোকজন সব স্বচ্ছ পলিথিন কনভেয়র বেল্টের উপর দিয়ে হাঁটছে। এ কোথায় এলো পিট!

কয়েক কদম এগিয়ে একটি ভবনের সামনে থামকে দাঁড়ালো। ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরে লেখা আছে- এপ্রিল ১৭, ২০৯৭। ঠিক দেখছে তো? চোখ কঁচলে আরেকবার ভালো করে দেখলো। না, ভুল দেখেনি। ভবিষ্যতে চলে এসেছে পিট, কিন্তু কিভাবে?

এটা কিভাবে সম্ভব! পিট বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। একটু পরেই বিস্ময়ের ঘোর কেটে আতঙ্ক গ্রাস করলো তাকে। সীমাহীন সেই আতঙ্কে থর থর করে কাঁপতে লাগলো সে। সামনে দেখতে পেলো কুয়াশার পর্দা, খুব দ্রুত সেটি সরে যাচ্ছে। সরে যাওয়ার আগেই ওটার ভেতর ঢুকে পড়তে হবে। সরতে থাকা কুয়াশার দিকে সে দৌড় দিল।

অচেনা ও উদ্ভট ইউনিফর্ম পড়া একজন পুলিশ রাগান্বিত কণ্ঠে তাকে ডাক দিলো, হেই হেই..। তার ডাক কান না দিয়ে ছুটতে থাকলো পিট। ভুমি থেকে ছয়-সাত ইঞ্চি উপরে চলমান অদ্ভুত গাড়িগুলোতে ধাক্কা খাওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল।

বিশ্বের সেরা দৌড়বিদের মতোই দৌড়ে সে কুয়াশার মধ্যে ঢুকে পড়লো, আর সঙ্গে সঙ্গেই আবার সবকিছু ফাঁকা হয়ে গেল...।

জ্যাকব পিটের ভেতর ফিরে এলো আবার সেই অনুভূতি। প্রথমে অস্বস্তি, তারপর মাথা বন বন আর পেট মোচড়। সবশেষে সেই পড়ে যাবার অনুভূতি। এরপর আবার কুয়াশা সরতে লাগলো।

যাক, পিটের মনে প্রশান্তি। নিজের জায়গায় ফিরে আসা সম্ভব হলো। কিন্তু কিসের কি!

হঠাৎ বিকট আওয়াজ। গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়ানো সে। একটা অদ্ভুত প্রাণী চিৎকার করছে। প্রাণীটিকে সে এর আগে চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখেছে। এবার বাস্তবে দেখলো।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রকা- প্রাণী ব্রান্টোসোরাস, তীক্ষè দাঁত বের করে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ওর ছোট ছোট চোখে ভয়ঙ্কর জিঘাংসা। বেরিয়ে এসেছে দুই পাটির ধারালো দাঁত। তাকে টুকরো টুকরো করে খুবলে খেতে ছুটে আসছে প্রাণিটি। আতঙ্কে জমাট হয়ে যাওয়া পিট অনুভব করে প্রাণ বাঁচানোর আদিম তাগিদ।

ফের সে দৌড় দিলো কুয়াশার দিকে। মাটি ফুঁড়ে উদয় হলো আরেকটি ব্রান্টোসোরাস। অল্পের জন্য সেটার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া থেকে নিজেকে সামলালো সে। দুর্দান্ত গতিতে দৌড়ে সে আবার কুয়াশার ভেতর ঢুকে পড়লো...।

শোনো, কুয়াশা নিশ্চয়ই কখনো কখনো তোমাকে ঘিরে ধরে। পরের বার যখন কুয়াশা ঘিরে ধরবে কান পাতলে নিশ্চয়ই শুনতে পাবে কারো পায়ের শব্দ। তাকে ডাক দিও...।

ওটা পিট জ্যাকব হতে পারে, কুয়াশায় এখনও সে ঠিকানা খুজে বেড়াচ্ছে...।

দয়া করে বেচারাকে একটু সহযোগিতা করো।

(স্টিফেন কিংয়ের গল্প ‘দ্যা আদার সাইড অফ দ্যা ফগ’ অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×