এমন সময় দেখলাম যাদের সাথে লঞ্চে পরিচয় হয়েছিল তারা লঞ্চ থেকে নামছে। দেরি কেন জিজ্ঞেস করাতে একজন বলল সে নাকি ভুলে একটা ব্যাগ রেখে এসেছিল, ওই ব্যাগটা আনতে আবার লঞ্চে গিয়েছে। মনে মনে চিন্তা করে হাসলাম,আমরা তো দুই হাতে পাঁচ পাঁচ দশটা আঙুল নিয়ে নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে চলে এসেছি। রাতে কোথায় থাকবে জিজ্ঞেস করাতে তারা বলল রাতে এইখানে থাকলে নিরাপদ হবে না। তারা হাতিয়া শহর এ থাকবে। চিন্তা করে দেখলাম তাদের সাথে যখন একসাথেই আসলাম তখন রাতে এক হোটেলেই থাকি। সবাই মিলে সেই অদ্ভুতদর্শন গাড়িতে উঠলাম। নলছিরা ঘাট থেকে ওছখালি( হাতিয়ার থানা শহর) ১০ টাকা ভাড়া। গাড়ির সব সিট কাঠের তৈরি, তার উপর সবাই গাদাগাদি করে উঠে বসলাম। গাড়িতে অনেক মহিলা উঠলো, তারা কেউ একা না, এক এক জনের সাথে মিনিমাম ২ টা করে আণ্ডাবাচ্চা, বস্তা, মুরগি, হাঁস আরও কত কি!!!!!!!!!! একবার চিন্তা করে দেখুন আমাদের কি অবস্থা??????? গাড়িতে নিঃশ্বাস নেয়ার মত অবস্থা নেই কিন্তু পথ যেন আর শেষ হয় না। আইনস্টাইন এর ‘’theory of relativity’’ ঐদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শহর আসলো। আমরা গাড়ি থেকে নেমে সিঙ্গাপুরের দিকে রওনা দিলাম( হোটেল সিঙ্গাপুর )। ঐখানে ডাবল বেড এর রম্ম এ চার জন থাকা যাবে না তাই আমাদের হংকং ( একই মালিকের আরেকটা হোটেল) এ যেতে বলল। আমরা হেঁটেই সিঙ্গাপুর থেকে হংকং এ আসলাম । হাতিয়া ডাক বাংলো আর সরকারী কলেজ এর পাশেই হোটেল হংকং। মাত্র ২০০ টাকা করে ডাবল রুম এর ভাড়া। প্রতিটা বেড এ দুই জন হাত পা ছাড়িয়ে থাকতে পারবে। রুম এ attached ওয়াশরুম, সোফা এবং বারান্দা ও ছিল। জায়গাটা আমার আর মাসুম এর অনেক পছন্দ হইছিল। আমরা দুই জন মিলে প্ল্যান করলাম যদি পালিয়ে বিয়ে করা লাগে তাহলে বউ নিয়ে কিছুদিন হংকং এ এসে থাকব। ভালো একটা হাইডিং প্লেস। গোসল করার পর মনে হল সারাদিনে ভাত খাওয়া হয় নি। মনে পড়ল কাল সকালে ছোট ভাই ঢাকা চলে যাবে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখেছিলাম ব্যাপক আয়োজন চলছে। আম্মু দুপুরে ফোন দিছিল, বলছিলাম আমি একটু দূরে এক ফ্রেন্ড এর বাসায় ঘুরতে আসছি, সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবো। যাই হোক, চিরিং মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। খাওয়ার সময় চিন্তা করছিলাম হাতিয়া পিডিবি অফিস এ একবার খোঁজ নিয়ে দেখবো নাকি পরিচিত কেউ আছে কি না। বাবা মা যেহেতু পিডিবি তে চাকরি করে তাই হাতিয়া তে পরিচিত কেউ থাকাই স্বাভাবিক।কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ল বাবা যদি একবার শুনে আমি সাগর পাড়ি দিয়ে হাতিয়া ঘুরতে এসেছি তা হলে আমার আর রক্ষা নাই। আমাকে প্যাকেট কইরা হাতিয়া থেকে নোয়াখালী পাঠানো হবে। খাওয়া শেষ হলে মাসুম বোমা ফাটাল, বলল হাতিয়া পর্যন্ত এসেছি, নিঝুম দ্বীপ না দেখে যাবো না। দুইটা মোবাইল ফোন বিক্রি করে দিবো। মাসুম কে বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হল না, সে যাবেই। কি আর করা? আমরা বের হলাম মোবাইল সেট বিক্রি করতে।
নিঝুম দ্বীপ এর অভিযানঃ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার গল্প, পর্ব- ২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন