এটা ডাইরী থেকে নয়, যতটুকু মনে আছে, তা থেকেই লিখছি।
আমার স্কুল জীবন খুবই সাধারন, যতটা সাধারন হলে সাধারন বলা যায় তার থেকেও সাধারন। অনেকের অনেক সৃতি থাকে, আমার খুব বেশী সৃতি নেই যাকে অসম্ভব প্রিয় বলা যায়। তারপরেও অনেক কিছুই মাঝে মাঝে এসে মুখে এক চিলতে হাসি এনে দেয়, আবার ভ্রু কুচকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলে, কিছুতেই মনে করতে চাইনা। আমি সবসময় বিশ্বাসী ভালো স্মৃতি বেশী করে ভাবতে, আর বাজে স্মৃতিগুলো মনে পড়লে ওগুলোকে তাড়িয়ে সুন্দর স্মৃতিগুলোকে নিয়ে আসায়।
আমার ছোট্ট বেলার বন্ধু বলতে তেমন করে কাকে বলি? অনেকেই প্রিয়, তার মধ্যে আলাদা করে বলতে গেলে আমার প্রতিদ্বন্দী বন্ধু এরিন, যে আমার ক্লাসের খাতা চুরি করে ছিড়ে ফেলায় ওস্তাদ ছিল ( টের পাওয়ার পর আমিও একই কাজ করতাম ), যাতে আমার রেজাল্ট খারাপ হয়। হুম, ওই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, যার সাথে আম্মুর কলে বসে কতদিন একসাথে খিচুড়ী আর ডিম ভাজা খেয়েছি। আম্মুর খিচুড়ী ওর অনেক প্রিয় ছিল। ক্লাসে বসে একজন আরেকজনের পেছনে বসে কত যে কালি দিয়ে আরেকজনের স্কুল ড্রেসের ১২ টা বাজিয়েছি! ইচ্ছে করেই কালি নিয়ে পিছনে আস্তে করে লাগিয়ে দিতাম। একজন আরেকজনকে একটু হিংসা করতাম ঠিকই, কিন্তু তাও আমরা ছিলাম সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, এটা বুঝেছি যখন ওরা আমাদের এলাকা ছেড়ে অন্য যায়গায় চলে যাচ্ছিলো, তখন। মাঝে মাঝে যখন ওরা বেড়াতে আসতো, তখন কী যে আনন্দ হতো তা বলার মত না, অনেক কথা জমা থাকতো, যে কথা কেবল খুবি পছন্দের কাউকে বলা যায়, আমি ওকে বলতাম। ও আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
মনে আছে, তখন খুবই ছেলেধরার যন্ত্রনা ছিল। আমার সব সময় মনে হত আসে পাশে ছেলে ধরা ঘুরছে। একদিন আমাকে আম্মু কিসের জনয় জানি বকেছিলো, আমি অনেক পরে অনেক জায়গা ঘুরে ৩-৪ ঘন্টা পর বাসায় আসলাম। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিলনা। আম্মুতো ভয়ে অস্থির। আমি বললাম আমার সামনে ছেলে ধরা ছিল, তাই আমি একটা দোকানের পিছে চুপ করে লুকিয়ে ছিলাম। মিথ্যাটাও ঠিক মত বলতে পারতামনা। ভয়ানক পিটান খেয়েছিলাম।
ক্লাস ৭ এ থাকতে প্রথম ডাইরই কিনি, এর আগে ডাইয়রিই ছিলনা। মনে আছে, কাগজ কেটে চারকোণা করে কেটে স্ট্যাপল করে ডাইরী বানিয়ে লেখার অদ্ভুত একটা চেষ্টা নিয়েছিলাম। এখন আছে ওগুলা। এরপর অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে (সম্ভবত ৬০ টাকা) দিয়ে একটা পিচ্চি নোটবুক টাইপের ডায়রি কিনলাম। নাম দিয়েছিলাম দানটু মানটু ডায়রি। ওই ডায়রিটা কেনার সময় আমার সাথে ছিল নুপূর আর কুমকুম। কুমকুমের বিয়ে হয়েছে, ও খুব স্মার্ট আর স্বাধীনচেতা ছিল, আজকে ও পুরোপুরি বন্দী জীবন কাটাচ্ছে বলে শুনেছি। ওর কথা আমি মনে করতে চাইনি। আমি শুধু ভালো স্মৃতিগুলোই মনে করতে চাই।
ভাইয়া আমার ডায়রি পড়ে ফেলতে চাইতো লুকিয়ে লুকিয়ে, তাই আমারো চেষ্টা থাকতো যাতে ও আমার ডায়রি খুজে না পায়। আমিও ওর ডায়রি লুকিয়ে পড়ে ফেলতাম। স্কুলে থাকতে আমার কিছু বান্ধবী ছিল অনেক আগেই পেকে গিয়েছিল। কারণ, তাদের বাসায় সারাদিন ডিস চলতো। হিন্দী সিরিয়াল আর ইংলিশ মুভি দেখে পাকনা হয়ে গিয়েছিল। প্রথম যখন মানব মানবীর সম্পর্কের কথা বুঝতে শিখলাম, তখন গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। একটা ছেলেকে শরীর স্পর্শ করতে দেয়ার চিন্তা মাথাতেই আনতে পারছিলাম্না আমরা কয়েকজন। নুপূর ডিক্লেয়ার করল ছেলেরা আর ব্যাঙ অথবা কুকুর ছাড়া আর কিছুই না, কারন তারা হয় ঘোত ঘোত করে, নাহলে ঘেউ ঘেউ করে। সেও কিছুদিন হয় এই ঘোত ঘোত অথবা ঘেউ ঘেউ করা কারও সাথে সারা জীবন থাকবে বলে মন্ত্র পড়েছে। যাইহোক, আবার অনেকের সে কি উৎসাহ এসব নিশিদ্ধ ব্যাপারে। ছেলেদের মত মেয়েদেরও এসব ব্যাপারে নিজেদের একটা জগত আছে, ছেলেদের আর মেয়েদের জগতের পার্থক্য খুব বেশীই বেশী। আমাদের জগতে স্বপ্নের স্থান অনেক বেশি। আজকে যখন ভাবছি, তখন মনে হচ্ছে কত বোকাই না ছিলাম। কত তুচ্ছ ব্যাপার আর সাধারন কিছু ঘটনায় আমরা কত আনন্দের রসদ খুজে নিতাম।
চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:২৬