আমার স্কুল খুব একটা ভালো লাগতো বলা যাবেনা, সেই সাত সকালে ঘুম থেকে উঠা, আর ঘুম ঘুম চোখেই ২ টা ক্লাস শেষ। ঘুমাতাম দেখে ম্যাডাম দাড় করিয়ে রাখতো, দাডিয়ে দারীয়ে ঘুমাতে গিয়ে যে কতবার ঠাস হয়েছি... আমার অনেক পছন্দ ছিল ১ টাকার অরেঞ্জ ফ্লেভারের আইসক্রিম। মাঝে মাঝে টাকা থাকলে খেতাম। খুব বেশি ভাগ্য ভালো থাকলে ললিজ কিনতে পারতাম। বছরে মনে হয় ৪-৫ টার বেশি না। এখন ইচ্ছা থাকলেও খেতে পারিনা। মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত!! তখন কত কম চিন্তা ছিল, ঘুমাতে গেলে এটা ওটা কিছু মাথায় নিয়ে ঘুমাতামনা। ঘুম মানে আসলেই ঘুম।
আমাদের স্কুলের সামনে ২ টাকার চটপটি পাওয়া যেতো। এত্ত এত্ত মজা লাগতো, এত ভালোলাগা আর তৃপ্তি নিয়ে এখন আর কিছু খাইনা। ভাইয়ার সাথে খিটমিটও হয়না ও বেশি খেয়ে ফেলেছে ক্যানো এটা নিয়ে। এখন চাওয়া পাওয়ার চেয়ে জীবন ঠিক ভাবে চালিয়ে নেয়াই বড় হয়ে গেছে। আমার স্কুলের হোমওয়ার্ক ভাইয়া অনেকদিনই করে দিত। বিনিময়ে আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকতাম। ও ইচ্ছা করেই হাতের লেখা বাজে করে লিখতো। আমি এখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কেবল চুল পাকাতে পারি, বয়সও বাড়াতে পারি, চামড়ায় ভাজ পরবে, কিন্তু ওইসব সরল চাওয়া পাওয়ার দিন ফিরে পাবোনা।
তখন রাতে প্রায়ই লোডসেডিং হতো। আমরা সবাই দল বেধে মাঠে বের হতাম। আড্ডা দিতাম, রাতটাও আমাদের খেলার আর গল্পের একটা বাধাধরা সময় ছিল। ক্লাস ফাইভ এ বৃত্তি পাই। কোন প্রত্যাশা ছিলনা, তাও পেলাম। আব্বু বিকেলে এসে জানলো। এরপর পিচ্চি আমাকে দু’হাত দিয়ে তুলে ঘাড়ে উঠিয়ে ফেললো। আর কিছুনা, আম্মু আদর করে দিয়েছিল এটা মনে আছে। আব্বু একটু পর বের হয়ে যায়। ভাগ্যকূলের একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে। ১ কেজি সাদা মিষ্টি। পাশের বাসায় দেয়া হয়। আমার ফুপুকে পাশের বাসা থেকে ফোন করা হয়। আমাকে ফোনে কথা বলতে হয়, আমি আনইজি ছিলাম, জানতামনা কি বলবো। আমার পুরোপুরি মনে আছে সব। আজকে আব্বু নেই, আমি এখন নোবেল পেলেও আমাকে কেউ ঘাড়ে উঠাবেনা। হাজার বার চাইলেও না। বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে আমাকে একটা ব্রিক গেম কিনে দেয়া হয়। এখনও রেখে দিয়েছি, আব্বুর স্মৃতি। আব্বু নিজে আমাকে নিয়ে গিয়ে কিনে দিয়েছিল। দাম ছিল ৩০০ টাকা। আমার কাছে কোটি টাকারও বেশি...
এরপর ক্লাস এইটেও বৃত্তি পাই। আব্বুর আর রেজাল্ট জানা হয়নি। মনে আছে, পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আব্বু আমাকে কিকরে নিয়ে গেলো, খাওয়ালো, পরিক্ষার আগে নতুন কলম আর জ্যামিতি বক্স কিনে দিল, এসবই... রেজাল্ট জানতে পারলে এবার অন্তত কোলে নিতে পারতো, ঘাড়ে তুলতে না পারলেও। আমিতো ততদিনে অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিলাম। আব্বু মারা যাবার পর আমরা খুব অল্প সময়েই অনেকটা বড় হয়ে যাই। কঠিন সময় আমাদের খুব তারাতাড়ি বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আব্বুর অফিস থেকে পাওয়া কিছু টাকা আর অল্প কিছু সঞ্চয় দিয়ে আম্মু অনেক কষ্টে আমাদের চালিয়ে নেয়। প্রতি রাতে আম্মুর লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না আমাদেরও কাঁদাতো প্রতিদিনই। প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হত আমরা গরিব হয়ে গেছি। খুব ছোট মনে অনেক বড় কষ্ট আর ওই বয়সেই ভবিষ্যতের চিন্তা কি ভয়াবহ ব্যাপার আমাদের মত যারা এর ভেতর দিয়ে যায়, কেবল তারাই জানে।
যাইহোক, চলে যাই আরো আগে, মনে হয় ক্লাস থ্রি তে ছিলাম। আমাদের এক টিচার ছিলেন, ক্লাসে ক্যানো জানি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই, তোরা কে কি সবচেয়ে অপছন্দ করিস?” আমার সময় আসলে আমি বললাম বাসায় গ্রাম থেকে মানুষ আসলে, ওরা নোংরা আর অনেকদিন জ্বালায়। টিচার বলেছিলেন, “তোর অনেক বড়লোক আত্মীয় আছে?”। আমি বললাম, “আছে”। টিচার বললেন, “তোরা যখন তাদের বাসায় যাস, তখন ওরাও তোর মতই ভাবে”। আমার এখনও মাথায় রয়ে গেছে। কিছু কিছু শিক্ষা ভুলতে হয়না। ভুলে গেলে ছোট মনের মানুষ হয়ে যেতে হয়। কেই বা চায় ছোটলোক হতে?
আমার ব্লগে সময় শেষ হয়ে আসলো বলে। স্কুলের কথা বলতে গিয়ে আসলে কিছুই বলা হয়নি। ব্যক্তিগত দুঃখ, কষ্ট, ভালোলাগা, অনুভূতি, আবেগ এসবই চলে এসেছে বেশি। গুছিয়ে লিখতে পারলামনা তাড়াহুড়ার কারণে। পড়ে কেউ বিরক্ত হলে দুঃখিত।
আমার স্কুল খুব একটা ভালো লাগতো বলা যাবেনা, সেই সাত সকালে ঘুম থেকে উঠা, আর ঘুম ঘুম চোখেই ২ টা ক্লাস শেষ। ঘুমাতাম দেখে ম্যাডাম দাড় করিয়ে রাখতো, দাডিয়ে দারীয়ে ঘুমাতে গিয়ে যে কতবার ঠাস হয়েছি... আমার অনেক পছন্দ ছিল ১ টাকার অরেঞ্জ ফ্লেভারের আইসক্রিম। মাঝে মাঝে টাকা থাকলে খেতাম। খুব বেশি ভাগ্য ভালো থাকলে ললিজ কিনতে পারতাম। বছরে মনে হয় ৪-৫ টার বেশি না। এখন ইচ্ছা থাকলেও খেতে পারিনা। মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত!! তখন কত কম চিন্তা ছিল, ঘুমাতে গেলে এটা ওটা কিছু মাথায় নিয়ে ঘুমাতামনা। ঘুম মানে আসলেই ঘুম।
আমাদের স্কুলের সামনে ২ টাকার চটপটি পাওয়া যেতো। এত্ত এত্ত মজা লাগতো, এত ভালোলাগা আর তৃপ্তি নিয়ে এখন আর কিছু খাইনা। ভাইয়ার সাথে খিটমিটও হয়না ও বেশি খেয়ে ফেলেছে ক্যানো এটা নিয়ে। এখন চাওয়া পাওয়ার চেয়ে জীবন ঠিক ভাবে চালিয়ে নেয়াই বড় হয়ে গেছে। আমার স্কুলের হোমওয়ার্ক ভাইয়া অনেকদিনই করে দিত। বিনিময়ে আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকতাম। ও ইচ্ছা করেই হাতের লেখা বাজে করে লিখতো। আমি এখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কেবল চুল পাকাতে পারি, বয়সও বাড়াতে পারি, চামড়ায় ভাজ পরবে, কিন্তু ওইসব সরল চাওয়া পাওয়ার দিন ফিরে পাবোনা।
তখন রাতে প্রায়ই লোডসেডিং হতো। আমরা সবাই দল বেধে মাঠে বের হতাম। আড্ডা দিতাম, রাতটাও আমাদের খেলার আর গল্পের একটা বাধাধরা সময় ছিল। ক্লাস ফাইভ এ বৃত্তি পাই। কোন প্রত্যাশা ছিলনা, তাও পেলাম। আব্বু বিকেলে এসে জানলো। এরপর পিচ্চি আমাকে দু’হাত দিয়ে তুলে ঘাড়ে উঠিয়ে ফেললো। আর কিছুনা, আম্মু আদর করে দিয়েছিল এটা মনে আছে। আব্বু একটু পর বের হয়ে যায়। ভাগ্যকূলের একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে। ১ কেজি সাদা মিষ্টি। পাশের বাসায় দেয়া হয়। আমার ফুপুকে পাশের বাসা থেকে ফোন করা হয়। আমাকে ফোনে কথা বলতে হয়, আমি আনইজি ছিলাম, জানতামনা কি বলবো। আমার পুরোপুরি মনে আছে সব। আজকে আব্বু নেই, আমি এখন নোবেল পেলেও আমাকে কেউ ঘাড়ে উঠাবেনা। হাজার বার চাইলেও না। বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে আমাকে একটা ব্রিক গেম কিনে দেয়া হয়। এখনও রেখে দিয়েছি, আব্বুর স্মৃতি। আব্বু নিজে আমাকে নিয়ে গিয়ে কিনে দিয়েছিল। দাম ছিল ৩০০ টাকা। আমার কাছে কোটি টাকারও বেশি...
এরপর ক্লাস এইটেও বৃত্তি পাই। আব্বুর আর রেজাল্ট জানা হয়নি। মনে আছে, পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আব্বু আমাকে কিকরে নিয়ে গেলো, খাওয়ালো, পরিক্ষার আগে নতুন কলম আর জ্যামিতি বক্স কিনে দিল, এসবই... রেজাল্ট জানতে পারলে এবার অন্তত কোলে নিতে পারতো, ঘাড়ে তুলতে না পারলেও। আমিতো ততদিনে অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিলাম। আব্বু মারা যাবার পর আমরা খুব অল্প সময়েই অনেকটা বড় হয়ে যাই। কঠিন সময় আমাদের খুব তারাতাড়ি বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আব্বুর অফিস থেকে পাওয়া কিছু টাকা আর অল্প কিছু সঞ্চয় দিয়ে আম্মু অনেক কষ্টে আমাদের চালিয়ে নেয়। প্রতি রাতে আম্মুর লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না আমাদেরও কাঁদাতো প্রতিদিনই। প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হত আমরা গরিব হয়ে গেছি। খুব ছোট মনে অনেক বড় কষ্ট আর ওই বয়সেই ভবিষ্যতের চিন্তা কি ভয়াবহ ব্যাপার আমাদের মত যারা এর ভেতর দিয়ে যায়, কেবল তারাই জানে।
যাইহোক, চলে যাই আরো আগে, মনে হয় ক্লাস থ্রি তে ছিলাম। আমাদের এক টিচার ছিলেন, ক্লাসে ক্যানো জানি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই, তোরা কে কি সবচেয়ে অপছন্দ করিস?” আমার সময় আসলে আমি বললাম বাসায় গ্রাম থেকে মানুষ আসলে, ওরা নোংরা আর অনেকদিন জ্বালায়। টিচার বলেছিলেন, “তোর অনেক বড়লোক আত্মীয় আছে?”। আমি বললাম, “আছে”। টিচার বললেন, “তোরা যখন তাদের বাসায় যাস, তখন ওরাও তোর মতই ভাবে”। আমার এখনও মাথায় রয়ে গেছে। কিছু কিছু শিক্ষা ভুলতে হয়না। ভুলে গেলে ছোট মনের মানুষ হয়ে যেতে হয়। কেই বা চায় ছোটলোক হতে?
আমার ব্লগে সময় শেষ হয়ে আসলো বলে। স্কুলের কথা বলতে গিয়ে আসলে কিছুই বলা হয়নি। ব্যক্তিগত দুঃখ, কষ্ট, ভালোলাগা, অনুভূতি, আবেগ এসবই চলে এসেছে বেশি। গুছিয়ে লিখতে পারলামনা তাড়াহুড়ার কারণে। পড়ে কেউ বিরক্ত হলে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:৫৩