somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবু মুহাম্মদ মুরতাঈশ কচি প্রচার বিমুখ একজন

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইন ও সংস্কৃতি অঙ্গনে ছিল যার অবাধ বিচরণ। দুটি অঙ্গনে ছোট-বড় সকলের কাছে তিনি কচি ভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কচি ভাই ছিলেন কাজ পাগল একজন মানুষ। ুধা-দারিদ্র মুক্ত বাংলার স্বপ্ন দেখতেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন আইনজীবী। আইন পেশার মাধ্যমে যা কিছু অর্জন করতেনা, তা তিনি সাংস্কৃতি অঙ্গণে ব্যায় করতেন। আইনের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য নাট্যাঙ্গনকে বেছে নিয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন, শান্ত-ধরি স্থির। অথচ এই মানুষটি কে দুর থেকে দেখে মনে হয়েছে কঠিন প্রকৃতির লোক। কিন্ত তাঁর চরিত্রে এমন কিছু গুনাবলী ছিলো, যার দ্বারা তিনি সহজেই ছোট বড় সকলকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জয় করে নিতেন। সৌহার্দে তাঁর মধ্যে কৃত্রিমতা ছিলো না, বন্ধুত্বে ছিল উদার- অকৃপন। সৌম্যতা, সততা-শিষ্টাচার ও মনের দৃঢ়তা ছিলো তাঁর চরিত্রের বড় গুন। বাইরের সৌন্দর্য নয় মনের সৌন্দর্য ও সৌকুমার্য দিয়ে যে সবার মন জয় করা যায়, অমৃত্যু তিনি তাই করে গেছেন।
১৯৫৭ সালের ১ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু মুহাম্মদ মুতাহ্হারের ওরফে তাহা মাস্টার। মুরতাঈশ কচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৩ সালে বিচার বিভাগে মুন্সেফ হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট , ঢাকা আইনজীবী সমিতির, গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিার্থীদের সমস্বিত সংগঠন বাংলাদেশ আইন সমিতির দু দফায় সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলঅদেশ সরকার-এর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থানুকুল্যে পরিচালিত ‘লিগ্যাল এন্ড জুডিশিয়াল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রজেক্ট’ এর জাতীয় আইন উপদেষ্টা হিসেবে কর্মকরত ছিলেন। তা ছাড়া দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতি ছিল তার গভীর টান। বিচারক পদে বসে সাধারন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে সম্ভব ছিলেনা। আর এ কারনেই তিনি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় আইন পেশায় যোগদান করেছিলেন। তাই আইন পেশার পাশাপাশি বাকি সময় তিনি দিয়েছেন থিয়েটার কর্মে। বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার আন্দোলনে রয়েছে তার অপরিসীম অবদান। প্রথশ দিকে বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রবস্থায় প্রয়াত নাট্যকার ও নির্দেশক এস এম সোলায়মানের নেতৃত্বে প্রতিষ্টা করেন পদাদিক নাট্য সংসদ। এসএম সোলায়মানের মঞ্চ নাকট ‘াতন রুস্তমের গপ্পো, কাজী রফিক রচিত ও নির্দেশিত মনসার পালা, কামুরজ্জামান রুনুর নির্দেশনায় বাদল সরকারের বল্লবপুরের রুপকথা এবং কামাল উদ্দিন নীলুর বের্টোলপ ব্রেখট‘র নাট্যরুপ দেওয়া ম্যাক্সিম গোর্কিও মার মতো বিশ্ববিখ্যাত নাটকে অভিনয় করেন। অভিনয়ের েেত্র ছিল তার অসাধারণ পর্যবেন মতা। নাটকের মাধ্যমে তিনি অপ শক্তির বিরুদ্ধে নির্যাতি মানুয়ের মুক্তির লড়াইয়ে তিনি ছিলেন এক অকুতোভয় সৈনিক। অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। মঞ্চের বাইরে ছিলেন তিনি একজন সংগঠক। আজকের দিনে প্রয়োজন কচি ভাইদের মতো লোক বড় প্রয়োজন। কচি ভাই মতার খুব কাছাকাছি থেকেও কখনো তার অপব্যবহার করেনি। আওয়ামী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও প্রতিপ দলের সঙ্গে ছিলে সৌহাদপুর্ন সর্ম্পক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বিরোধী দলের কাতারে এসে দাড়াতে দেখিছি। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কচি ভাই আপনি চাইলেই... উত্তরে তিনি বলেছিলেন, দলকে বুঝতে হলে নিজেকে বিরোধী দলের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে জনগনের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে সহজ হবে। আমাদেও দেশের রাজনীতিরা মতার দম্ভে ভুলে যায় তার অতীত।’ মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ ছিল তাঁর মুলমন্ত্র। তাই মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ছিল মর্মস্পর্শী যন্ত্রণা। তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য তিনি নাট্যাঙ্গনকেই বেছে নিয়েছিলেন। তার কাছে থিয়েটার ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মুল দর্শন ছিলো সমাজের পরিবর্তন ও নির্যাতিত, নিস্পেশিত মানুষের মুক্তি।
১৯৯৯ বাংলাদেশ আইন সমিতির উদ্যোগে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচারকদেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শীর্ষক সেমিনারে বলেছিলেন, বিচার বিভাগের সাথে সংযুক্ত ধারনা হলো বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারকদের স্বাধীনতা। তিনি প্রশ্ন রেখে ছিলেন, এই বিচারকদের স্বাধীনতার বিষয়টি কি শুধুমাত্র পৃথকীকরণের মধ্যেই নিহিত? বিচারকদের স্বচছতা ও জবাবদিহিতার ব্যাপারে একটি জটিলতা রয়েছে বলে আমাদের সংবিধান প্রণেতাগন এ সংক্রান্তে কতকাংশ সংসদেও উপর ন্যাস্ত করেছিলেন। পরে সংশোধন করে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের উপর ন্যাস্ত করেছেন। তিনি নিম্ন আদালতের বিচারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে কার্যকর বিধান প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তার চিন্তা চেতনার ছিল স্বচ্ছ এবং বাস্তবতা। ২০০২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রোজ শুক্রবার নজম্মা এই মানুষটি মৃত্যু বরণ করেন। সন্তানের এই মৃত্যুকে সহজভাবে মেনে নিতে মা রাবেয়া খাতুন তাই তিনিও কিছুদিন পর তাঁর মাও মৃত্যু বরণ করেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×