আমার ধারনা এমন কোনো বিষয় নেই যেটা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখেন নি।
কত-সহস্র কবিতা উনি লিখেছেন!!
কয়েক দিন ধরে চাঁদ নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় হঠাৎ মাথায় এলো বরিবাবুর কি কি ছড়া-কবিতা-গানে চাঁদের উপস্থিতি আছে তা খুঁজে দেখি।
আমি কবিতা ফ্রেন্ডলি লোক নই, তাই মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো ফলাফল দেখে আমার মাথায় চাঁদ ভেঙ্গে পড়েছে।
সেই ভাঙ্গা চাঁদের ১০টি টুকরো আপনাদের জন্য আজকে রইলো এখানে।
৬১।
এ পুলক কোথা ছিল, প্রাণ ভরি বিকশিল,
তৃষা-ভরা তৃষা-হরা এ অমৃত কোথা ছিল।
কোন চাঁদ হেসে চাহে, কোন্ পাখি গান গাহে,
কোন সমীরণ বহে লতাবিতানে।
৬২।
সে যেন আসবে আমার মন বলেছে,
হাসির পরে তাই তো চোখের জল গলেছে।
দেখলো তাই দেয় ইশারা তারায় তারা,
চাঁদ হেসে ওই হল সারা তাহাই লখি॥
৬৩।
সারা জীবন দিল আলো
সূর্য গ্রহ চাঁদ--
তোমার আশীর্বাদ হে প্রভু,
তোমার আশীর্বাদ।
৬৪।
সন্ধ্যাতারা উঠে অস্তে গেল,
চিতা নিবে এল নদীর ধারে,
কৃষ্ণপক্ষে হলুদবর্ণ চাঁদ
দেখা দিল বনের একটি পারে,
শৃগালসভা ডাকে ঊর্ধ্বরবে
পোড়ো বাড়ির শূন্য আঙিনাতে--
৬৫।
দূর স্বর্গে বাজে যেন নীরব ভৈরবী।
ঊষার করুণ চাঁদ শীর্ণমুখচ্ছবি।
ম্লান হয়ে এল তারা; পূর্বদিগ্বধূর
কপোল শিশিরসিক্ত, পান্ডুর, বিধুর।
৬৬।
কুসুমের মালা গাঁথা হল না,
ধূলিতে পড়ে শুকায় রে।
নিশি হয় ভোর, রজনীর চাঁদ
মলিন মুখ লুকায় রে।
৬৭।
লাগবে আলোর পরশমণি পুব আকাশের দিকে,
একটু করে আঁধার হবে ফিকে।
বাঁশের বনে একটি-দুটি কাক
দেবে প্রথম ডাক।
সদর পথের ঐ পারেতে গোঁসাইবাড়ির ছাদ
আড়াল করে নামিয়ে নেবে একাদশীর চাঁদ।
৬৮।
বেণুশাখারা আড়াল দিয়ে চেয়ে আকাশ-পানে
কত সাঁঝের চাঁদ-ওঠা সে দেখেছে এইখানে।
কত আষাঢ় মাসে
ভিজে মাটির বাসে
বাদলা হাওয়া বয়ে গেছে তাদের কাঁচা ধানে।
সে-সব ঘনঘটার দিনে সে ছিল এইখানে।
৬৯।
আঁধার শাখা উজল করি হরিত-পাতা-ঘোমটা পরি
বিজন বনে, মালতীবালা, আছিস কেন ফুটিয়া ।।
শোনাতে তোরে মনের ব্যথা শুনিতে তোর মনের কথা
পাগল হয়ে মধুপ কভু আসে না হেথা ছুটিয়া ।।
মলয় তব প্রণয়-আশে ভ্রমে না হেথা আকুল শ্বাসে,
পায় না চাঁদ দেখিতে তোর শরমে-মাখা মুখানি ।
৭০।
কবি বলে লোকসমাজ আছে তো মোর ঠাঁই,
তিন বছরের প্রিয়ার কাছে কবির আদর নাই।
জানে না যে ছন্দে আমার পাতি নাচের ফাঁদ,
দোলার টানে বাঁধন মানে দূর আকাশের চাঁদ।
আগামী পর্বে আরো ১০টি চন্দ্র পংক্তি থাকবে।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০১
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০২
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০৩
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০৪
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০৫
রবিবাবুর চন্দ্রকণা - ০৬