somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এখন ধর্ষিতা.... পঞ্চায়িত সমর

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুধার বাবাকে বিভোর হলওয়েতে আসার সময় ধরে রেখেছিল, মানুষটা এখন হতবিহ্বলভাবে হাটছে। চোখ থেকে তার অনবরত পানি পড়ছে। ওদের পিছু পিছু হাটছে মৌন, সেও চোখ মুছছে, তার প্রার্থনা আজ শুনেনি বিধাতা!

মৌন হাটছিল, একটু দুরত্ব রেখে বিভোর আর তার পাশের মানুষদের থেকে। কেমন সহজে ওরা এনাউন্স করলো, যেনো কোনো অনুভুতি ওদের মাঝে জড়ো হয়নি, ওরা একটা মেয়ের পরিবারকে ডাকছে, ওদেরকে এতবড় একটা দুঘটনার কথা জানাবে, কোন কষ্টবোধ নেই ওদের! নাহ, দুর্ঘটনা কেমনে হয়? এতো স্বঘোষিত মিথ্যা বললো সে, ভাবলো মৌন। ধুর, এখন আমি কাব্য করছি, এখন আমি নিজের ভুল ধরছি! ছিঃ, আমারতো কষ্ট পাওয়া দরকার। অনেক কষ্ট, অনেক অনেক বেশি! আমি কি করবো এখন, আরো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা? কেন করবো, তিনি আমার কথা তখন শুনলেন না। হ্যা, আমি বিভোরকে অভিশাপ দিয়েছিলাম, সেদিন যখন সে সুধাকে বাগদত্তা জেনেছিল সেদিন, যেনো সে কখোনো সুখি না হয়। কিন্তু পরক্ষনেই তা ফিরিয়েও তো নিয়েছি,হয়ত বিভোরের সাথে সুধার সুখ জেনে! তাহলে ঈশ্বর আমার সুধা কেন ধর্ষিত! মৌন নিজেকে বুঝতে পারলো না, নিজের মনেই সে যুদ্ধ শুরু করে দিলো। পরক্ষনেই অবাক হলো সে, ভাবতে চাইলো বিভোর কি ভাবছে, প্রশ্ন করলো নিজেকে, এখন কি বিভোর সুধাকে বিয়ে করতে রাজি হবে, চাইবে তা পাশে থাকতে! হয়ত না! আর না হলে সুধার জীবনে কেমন ঢেউ উতলে উঠবে?

সাতরে শেষে ওরা অপারেশন থিয়েটারের পাশে এসে দারিয়ে রইলো অপরাধীর মত; কিছুক্ষন বাদে ডক্টর প্রণয় বের হলেন। বিভোরের বাবা লক্ষ্য করলেন মানুষ কমে আসছে, হসপিটালের কর্মীরা মানুষকে চলে যেতে বলছেন, যা তাকে একটুও সস্তি দিলো না, এত মানুষের শব্দে নিজেকে ভুলেছিলেন। এতক্ষন দাড়িয়ে থাকা কেউ কেউ যেতে আপত্তি করছে। বিভোর তার বাবার মুখে নকল সস্তির আভা দেখে কেমন বাকরুদ্ধ বোধ করলো। এখন তার বাবার চোখে সে তাকিয়ে আছে। বিভোরর বাবা রাশেন সাহেব ছেলের অদ্ভুত আচরনের বিপরীতে কিছু বলতে না পেরে আবার অসস্তিতে পড়লেন।

বিভোরের মাথায় এখন দুমুখো চিন্তা। সে বসেছে ওয়েটিং সিটে, সুধার বাবার পাশেই সে। ডক্টর একটু আগে বিভোরকে ডেকে প্রশ্ন করলো তার পরিচয়। বিভোর পরিচয় দিতেই বললো সুধার পরিবারের কেউ নেই কিনা। সুধার বাবা আছেন বললো সে, ডক্টর তার সাথে কথা বলতে চাইলেন। কথা বলার সময় বিভোর সাথে থাকতে চাইলো। ডক্টর একটু ভেবে বললো ঠিক আছে। ডক্টর সুধার অবস্থা পরিষ্কার করে বলতে চায় বলে কথা শুরু করলেন। বিভোরের কেমন যেনো চিন্তা হল। পরিষ্কার শব্দটা হয়ত ডক্টর ভেবেই বলেছে, কিন্তু শব্দটা এত দৃষ্টিকটু লাগলো কেনো! হয়ত আজকাল কারো মানসা পরিষ্কার নয় বলে। কি সব ভাবছি আমি। মনযোগ দাও বিভোর, নিজের ভাবনাদের শাসন করলো সে।

১৩-৫-১১
সুধা জানালায় বসে আছে। ছোটবেলায় একটা গল্পের বই পড়েছিলো সে, রানীকে অপহরন করে নিয়েছিল এর রাক্ষস ইন্দ্রপুরী হতে। রাজা সে রাক্ষসকে হত্যা করে রানীকে ইন্দ্রনগরে ফিরিয়ে আনে তাদের আলো। এমনতো গল্পেই হয়, ভাবলো সে! তার রাজপুত্র আজকে আসবে তাকে ফিরিয়ে নিতে, কথা দিয়েছিল। কিন্তু,
সে আসেনি।
সে ফিরেনি।
সে ভুলোমনের ছলে,
ভুলেছে তাহার প্রেম।

কেউ এখন মায়া দেখালে অসহ্য লাগে সুধার, হতাশ নয় সে পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে। ভালবাসা দোহাই এখন নির্লজ্জের আস্ফালনের মত শোনায়। তার সাথে কেউ তেমন কথা বলেনা। হসপিটাল থেকে ফেরার পর এখন সে নিজের ঘরে চুপচাপ বসে থাকে। মাঝে একদিন বিভোর এসেছিল। সুধার সাথে কথা বলেছিল। প্রনয়ের কথন ছিলো না সে। সে সুধাকে বিয়ে করতে পারছেনা পরিবারের মতে, তবে তারা নিজেরা যদি পরিবার ছাড়াই বিয়ে করে তবে সুধা তাকে বিয়ে করবে কিনা জানতে চাইলো। সুধা নিষেধ করলো বিভোরকে। বিভোরের চোখে ভয় দেখেছিল সেদিন সুধা, সে ভয় তার পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য। তাই সে বিভোরকে ফিরে নিজের পথে যেতে বললো, সে নিজেকে দেখবে বলে পালিয়ে এলো নিজের শোবার ঘরে। এইতো হবার ছিলো, সুধা ভেবেছিল। সুধা কাদেনি। সে বড় একা পরে গেলো, তাই করুনা হচ্ছিল নিজের জন্য তার মনে। সেদিন রাতে সে চোখের ধারাকে রোধ করেনি, বরং মৃত্যু কামনায় আকাশে তাকিয়েছিল। তার বাসায় এখন নরকের আগুনে উত্তপ্ত থাকে। সুধার বাবা সুধাকে বুঝাতে এসেছিল, সুধা কথাটি বলেনি। পরবর্তিতে বাসা পরিবর্তনের কথা তুলেছিলো সুধার বাবা। বাসা খুজে পাবার পর্যন্ত তা স্থগিত হলো।

বিভোর তার পরিবারকে কনভিন্স করতে চাইলো। সে উধাহরন দেখাতে চাইলো। কোন মনিষী তার পুত্রের সাথে কোন বিধবার বিবাহ করিয়ে কি করে বিধবা বিবাহ প্রথা শুরু করেছিল বলেছিল। কিন্তু যে বসে আছে বুঝবেনা বলে, তাকে বুঝায় কার সাধ্যি? পরিবারের ইচ্ছার বাইরে সে সুধাকে বিয়ে করতে ইচ্ছাপোষন করতে চাইলো। সুধা তাকে নিষেধ করলে সে ফিরে আসে তার চিরপরিচিত ভুবনে। হয়ত এখানেই তার স্থান, সে ভাবে। শেষ পর্যন্ত পরিবারের ভালবাসার কাছে হেরে গেলো তার সুপ্ত প্রেম! তার পরিবার তাকে বলে দিলো, তারা বিধবা কাউকে হয়ত পুত্রবধু হিসেবে দেখতে পারবে, কোন এক ধর্ষিতাকে নয়। বিভোরের মনে কাটা গেথে গেলো। সে নীরবে নিজের রুমে হেটে গেলো।

মৌন সুধার বোনের সাথে কথা বলেছিল। মৌন জীবনে প্রথমবার নিজেকে কারো জন্য উপযুক্ত নয় ভাবলো নিজেকে। সুধা বিয়ে করবে না জানিয়ে দিয়েছে বিভোরকে জানলো সে। মৌনের তখন রাগ হলো। সেই হয়ত কিছু সপ্তাহ পুর্বে বিভোরের সাথে সুধার বিয়ে হবে বলে কষ্ট পেয়েছিলো। আজকে তার মনে হলো, বিভোরের সাথেই সুধার বিয়ে হতে হবে।
________________________(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×