মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ‘গ্রেনেড' ব্যবহার করছে পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্যাস গ্রেনেড নামে পরিচিত গ্রেনেড মূলত ব্যবহার হচ্ছে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। অতি সম্প্রতি এর ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পন্ড করে রাজপথে নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে না দেয়ার উদ্দেশেই পুলিশ এ গ্রেনেড, ব্যবহার করছে। এতে করে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের ফলে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহারের ফলে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু পুলিশ বলছে অন্য কথা। তাদের মতে, জামায়াত-শিবির দমনে এই দু'প্রকার গ্রেনেড ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে এসব গ্রেনেড আমদানি করা হয়।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশের এবার জামায়াত-শিবির দমনে ‘গ্রেনেড' ব্যবহার করছে পুলিশ। অন্যান্য সময় বিরোধী দলের বিশেষ করে শিবির-জামায়াতের মিছিল সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলী ব্যবহার করলেও শিবির ঠেকাতে সম্প্রতি পুলিশ এই বিশেষ ধরনের ‘গ্রেনেড' ব্যবহার শুরু করেছে। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, জামায়াত-শিবির কর্মীরা যেভাবে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের ওপর হামলা করছে তাতে করে তাদের প্রতিহত করতে সবকিছুই ব্যবহার করা হবে।
তনি বলেন, ‘তারা রাস্তায় নামলেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে। সুতরাং আমরা তাদের প্রতিহত করবো। এটা যেভাবেই হোক'।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ঠেকাতে গুলী ও গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহার করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ডাঃ তাহেরের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় শিবির মিছিল বের করলে সেখানেও পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশের হাতে ‘গ্রেনেড' সদৃশ বস্তু দেখে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিগ্বিদিগ ছুটতে থাকে।
এদিকে, একই সময়ে মতিঝিল এলাকায় শিবির আরেকটি ঝটিকা মিছিল বের করলে সেখানেও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সিলেট জামায়াতের এক মিছিলে পুলিশ সর্বপ্রথম এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। তবে, শিবির দমনে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহারের ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পথচারী, নারী, শিশুদের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহারের ফলে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহারের ফলে শ্বাসপ্রশাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বানচালে এবারই প্রথম পুলিশের হাতে এ ধরনের বস্তু দেখা যাচ্ছে।
এ সম্পর্কে শিবিরের প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ ইয়াহিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি বানচালে এ ধরনের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অস্ত্র ব্যবহারের কোনো নজির নেই। সরকার এ জাতীয় ভয়ঙ্কর বস্তু পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে পুলিশের মর্যাদাহানি করছে। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদীদের সোচ্চার হতে হবে বলেও মত দিয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি এভাবে জামায়াত-শিবির দমন করতে চায়, তাহলে এটা তাদের জন্য এক সময় বুমেরাং হবে।
বিষয়টি স্বীকার করে তেজগাঁ শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ কর্মকর্তা ওসি আবু আহমদ ফারুক বলেন, আমরা চার্জ করার জন্য নিয়ম মেনেই প্রয়োজন মাফিক শটগান, সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেড গ্যাস ব্যবহার করছি।
এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সরকার পুলিশকে রক্ষীবাহিনীতে রূপান্তর করতেই এ ধরনের ভয়ঙ্কর অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের মিছিলে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরকার ন্যক্কারজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



