ইসলাম, মহান স্রষ্টার একমাত্র মনোনীত বিধান, পৃথিবীতে তাই তা তার নিজ সৌরভে প্রস্পুটিত হবে এটিই স্বাভাবিক। মানবজাতি তাদের স্রষ্টাকে ভুলে তাঁর মনোনীত বিধানের আনুগত্য যখনই পরিহার করে অন্য পথ অবলম্বন করেছে তখনই তিনি তাঁর প্রেরীত নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানুষকে পুনরায় ইসলামের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন এটিই সে শাশ্বত পথ যা বার বার ফিরে আসছে।- হে মানুষ কোথায় যাচ্ছ তুমি? বিশ্বযাহানের পালনকর্তার স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে? (ফা আইনা তাজহাবুন, ইন হুয়া ইল্লা যিকরুল লিল আলামীন)
খেলাফাত আলা মিনহানুন নাবুয়াতের ধ্বংসের পর হতে ধীরে ধীরে মুসলমানগন ইসলামের পূর্নাঙ্গ ধারণা হতে অল্প অল্প করে তাদের অজান্তেই দুরে সরতে শুরু করে। বার বার ইসলামী পুনর্জাগরণের নেতৃত্ব দানকারী মুজাদ্দীদগণ মুসলমানদের ইসলামের সেই পূর্নাঙ্গ অবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর ইসলামী পূনর্জাগরণের সম্ভাবনা আবার প্রস্ফুটিত হচ্ছে। নিচে তারই কিছু কারণ এবং চিহ্নের প্রতি দৃষ্টি আকষৃণ করছি।
১। ইসলাম ও জাহিলিয়াত অনুসারন সুস্পষ্ট হওয়াঃ
মানুষ খুব দ্রুত "ইসলাম ও জাহিলিযাত" এ দুটি প্রান্তিক অবস্থাণের দিকে ধাবমান। এক সময় ছিল মুসলিমের ঘরে জন্মনিয়ে বুঝে হোক আর না বুঝে হোক সন্তান ইসলামী রীতিনীতি অনুসরণ করেছে। এখন আর তা হচ্ছে না। যে ইসলাম পালন করছে সে খুব সচেতনভাবে অধ্যয়নের মাধ্যমে জেনে শুনেই তা করছে।আর যে ইসলাম সম্পর্কে অধ্যযন করছে না সে অবচেতন ভাবেই এর বিরোধীতা করছে। পিতা-মাতাকে নামায পরতে দেখেছে তাই নামায পরছে এ ধরনের লোকজনের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।
একটা সময় ছিল যখন দেখা যেত ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ইসলামের বিপরীত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন) কর্মীও ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফযরের নামায পরে কোরআন তিলাওযাত করতো। এখন এর সংখ্যা খুবই কম। দাড়ি-টুপি জাতীয় সুন্নতের বিরোধীতা এখন তাদের বোরকা-ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মত ফরয বিষয়ের বিরোধীতায় পর্যবসিত হচ্ছে- অর্থাৎ ইসলাম পালনকারীগণ সচেতনভাবেই ইসলামের দিকে ঝুঁকছে আর ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুনাফিক শ্রেণীর লোকজন অবচেতনভাবেই ইসলাম বিমুখীতার প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাচ্ছে, যা মুলত ইসলাম এবং জাহিলিয়াতকে অনেক বেশী সুস্পষ্ট করছে।
২। যুব সমাজের ইসলামের প্রতি আগ্রহঃ
সংখ্যাগত দিক থেকে কম হলেও আনুপাতিক দিক থেকে যুব সমাজ ইসলামের বিষয়ে অতিতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। একটা সময় মসজিদে বৃদ্ধ লোকজনদের বেশী দেখা গেলেও বর্তমানে যুবকদেরই বেশী দেখা যাচ্ছে। পর্দার ব্যাপারে যুবতী নারীরা অনেক বেশী সচেতন।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রদের মাঝে এক সময় নাস্তিক্যবাদী আন্দোলনের প্রতি প্রচুর আগ্রহ থাকলেও বর্তমানে তা ইসলামের প্রতি, ইসলাম জানার প্রতি এবং সে বিধান প্রতিষ্ঠার প্রতি।
৩।বিশ্বব্যাপী বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামী জাগরণঃ
ওযাজ মাহফিলের মাধ্যমে ইউসুফ-জুলেখা, আর কারবালার কাহিনী বয়ান করে মুসলমানদের আবেগতাড়িত করার মাধ্যমে ইসলাম পালনের দিকে আগ্রহী না করে বর্তমান সময়ে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং যুক্তিনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে আহবান করা হচ্ছে, যা অন্য সকল মহাদর্শের উপর ইসলামে শ্রেষ্ঠতত্ব বুঝতে বেশী সাহায়ক। ইসলামে সকল সমস্যা সঠিক সমাধান রয়েছে এ ধরনের তত্ত্বীয় আলোচনার পরিবর্তে নির্দিষ্টভাবে- ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমাধানগুলোর বাস্তব প্রক্রিয় অনুসন্ধানের জন্য গবেষনা শুরু হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী অনেকগুলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামের অনেকগুলো প্রায়োগিক বিষয়ে পিএইচডি ও গবেষনা (প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হলেও) এ পথকে আরো অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
৪।ইসলামের প্রতি অপপ্রচার মূলত হিতে বিপরীতঃ
পৃথিবীব্যাপী ইসলামী পূনর্জাগরনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে এবং ইসলাম হতে মানুষকে দুরে রাখার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়টি আসলে প্রচন্ডভাবে হিতে বিপরীতই হচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রপচারের ফলে ইসলামের সঠিক রুপ কি তা জানার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে না বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন- জিহাদ এবং জঙ্গিবাদকে একত্রিত করার যে প্রচারনা চলচে এর ফলে মুসলমানরা জিহাদ কি এবং জঙ্গীবাদ কি?- তা জানার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে ও এ দুটি জিনিস যে এক নয় তা পৃথক করার ব্যাপারে অনেক সচেতনার পরিচয় দিচ্ছে। এ ব্যাপারে বলা যায় , ইসলাম এমন একটি লৌহখন্ড (রুপক) যাতে চৌদ্দশত বছর যাবত পরিচর্যার অভাবে মরিচিকা পড়ে অনুজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ইসলাম বিরোধী শক্তি এটিকে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে যতই এর উপর আঘাত করছে ততই তা থেকে মরিচিকাগুলো দুরীভুত হচ্ছে, তা ব্যবহার উপযোগী হচ্ছে এবং তার আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হচ্ছে।
৫।দাওয়াত এবং রাজনীতির মাধ্যমে ইসলাম বাস্তবায়ন প্রচেষ্টাঃ
মুসলমানদের কিছু অংশ দেশে দেশে মানুষকে ইসলামের প্রতি আহবানের জন্য সফর করছে। এর একটি ভাল প্রভাবও তৈরী হচ্ছে। দেশে দেশে রাজনৈতিকভাবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে (ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে হলেও শুরু হয়েছে) ইসলামী পুণর্জাগরনের প্রতি আগ্রহ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামী পুনর্জাগরণের বিভিন্ন দিকগুলো পরবর্তীতে আরো আলোচনায় আসবে ইনশাল্লাহ।
তবে, ইসলামের বিপরীত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকারীদের বলতে চাই, আপনারা স্রষ্টার মনোনীত বিধান বাস্তবায়ন পক্ষে থেকে ইসলামের পুনর্জাগরনকে ত্বরান্বিত করবেন? না আপনাদের কতগুলো বস্তাপঁচা ব্যর্থ মতবাদ প্রতিষ্ঠার হঠকারি সিদ্ধান্তেই অটল থাকবেন?
যেহেতু ইসলাম স্রষ্টার মনোনীত পূর্ণাঙ্গ ও শাশ্বত জীবন বিধান এবং এ বিশ্বজাহান তাঁরই আদেশের আজ্ঞাবহ এবং তিনি মানুষকে সাময়িক সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে প্রেরণ করে পরীক্ষা করছেন কে তাঁর আদেশ-নিষেধ মত জীবন অতিবাহিত করে আসে--তাহলে কেন আমরা স্রষ্টার বিধানের বিপরীত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হচ্ছি। আমাদেরতো তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে, তাঁর দেয়া সময় কি করে এ পৃথিবীতে কাটিয়ে এসেছি হিসেব দিতে হবে। জেনে শুনে কেন আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছি যা আমাদের পুড়ে ছাই করে দেবে? কেন এমন মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর যা আসলে তাসের ঘর ছাড়া আর কিছুই নয়?
স্রষ্টা আমাদের কিছু সময় পৃথিবীতে আমাদের ইচ্ছামত চলার সুযোগ দিয়েছেন বলে এতটা বিদ্রোহী হওয়ার কি য়োক্তিকতা রয়েছে? তিনি এখন আমাদের ছাড় দিয়েছেন কিন্তু যখন হিসেব গ্রহণ করবে তখন কি করে পার পাব?- পৃথিবীতেতো আমরা তাঁর বিধানের বিপরীত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছিলাম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




