আমার পোস্টের শিরোনামটি দেখে হয়তো অনেক ধর্মনিরপেক্ষ (আজগুবি, স্ববিরোধী ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে অগণতান্ত্রিক মতবাদ এর কারণ) রাজনৈতিক দলের সমর্থক ব্লগাররা খানিকটা অবাক হতে পারেন।
সে যাই হোক, ৫ম সংশোধনী বাতিল করে পুনরায় ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে ফেরত যাওয়ার উদ্যোগে আমি খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম যে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভাগ্যে কি আছে? বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ণ কি চিরতরেই রহিত হয়ে যাচ্ছে কি না? ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ পরিষ্কার করে ফেলল কি না?
চিন্তার এক পর্যায়ে আমি অবাক হলাম (সত্যিই) যে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোকে কম করে হলেও ৫০ বছর এগিয়ে দিল। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান কর্মকান্ড আমাকে হতাশ করছিল, আমি চিন্তান্বিত ছিলাম আগামী একশত বছরেও তারা তাদের চলমান কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি দিয়ে এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না? এ পরিস্থিতির জন্য আমি বর্তমান সরকারকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।- আপনারা দেশ থেকে ইসলাম দুর করতে গিয়ে ইসলামের বিজয়কেই তরান্বিত করে দিলেন।
এবার আসুন আমার দাবির পক্ষের যুক্তি গুলো পেশ করি।
১। প্রথমেই মনে রাখা দরকার যে সংবিধান কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয় (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এটি খুব ভালভাবে বিশ্বাস করেন) যে তা অপরিবর্তণশীল। আজ পরিবেশে পরিস্থিতি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অনুকুলে থাকায় তারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণোযন করছে, ভবিষ্যতে ধর্মের প্রতি আস্থাশীল রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে ধর্মীয় মুল্যবোধ উচ্চকিত করার সাংবিধানিক অধিকার রাখে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান দেখে ধর্মীয় দলগুলো খুব বেকায়দায় পড়ে হতোদ্দম হয়ে যাবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে তা যর্থার্থ নয়।
২। এ কথা ঠিক যে ধর্মীয় দলগুলো ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় সরাসরি ধর্মীয় নাম ও এজেন্ডা নিয়ে হয়তো রাজনীতি করতে পারবে না, কিন্তু যে কোন সাধারণ নাম নিয়ে তারা রাজনীতির মাঠে অবস্থান করতে পারবে। ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে পরিবর্তন আনবে এ ধরনের ইশতিহার দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ক্ষমতায় এসে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংবিধান পরিবর্তনও করতে পারবে। ( এটা যে আগামী নির্বাচনেই করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাদকতাতো আর নেই)
৩। ইসলামী আন্দোলন একটি আদর্শবাদী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর গতির এবং সময়সাপেক্ষ। রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগণকে এ আদর্শের সক্রিয় কর্মী-সমর্থক ও এ আদর্শের ধারক-বাহক হিসেবে তৈরি না করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়টিকে সবসময় মাথায় রাখে। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় এ প্রক্রিয়াটি আরো বেশী ধীরগতির হবে ঠিক তবে এ প্রক্রিয়াকে (আদর্শিক রাষ্ট্র তৈরির প্রক্রিয়া) তার চলমান গতিতে রেখে ইসলামীদলগুলো ভিন্ন নামে সাময়িক রাজনৈতিক সাফল্য লাভে অগ্রসর হবে। এ প্রক্রিয়ায় তারা তাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার চেয়ে কম সময়ে ক্ষমতায় চলে আসবে (হয়তো তখনও দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানই থেকে যাবে)।
৪। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে ইসলামী দলগুলোর নেতা-কর্মীরা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের চেয়ে অনেক বেশী চরিত্রবান, সৎ, শিক্ষিত (আনুপাতিক হারে) এবং অনেক কম দুর্নীতি পরায়ন। আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়সাপেক্ষ গতির কারণে তাদের এ ভাল গুণগুলোর মূল্যায়ন কম ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় যখন আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তাদের মূখ্য বিষয় নয় তখন জনগণের নিকট তাদের উত্তম গুণাবলীর মূল্যায়ন হতে বাধ্য। তুরষ্ক এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তুরষ্ক একটি আদর্শিক ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও সে দেশে ইসলাম পন্থীরাই নিজেদের যোগ্যতা, ন্যায়পরায়ণতা ও উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর কারণে আজ ক্ষমতায়।
৫। বর্তমান সরকার ৭২ এর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে যাওয়ার পাশাপাশি একটি অত্যন্ত ভাল কাজে হাত দিয়েছে। তা হল ৭১এর মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার কার্য। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়ার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি ইসলামী দলকে বেকায়দায় ফেলা (মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তরিক হলে তারা ৯৬তে এ দলটির সাথে ঐক্য করতো না)। যাই হোক, আমি এ বিচারের একজন সক্রিয় সমর্থক। আমি চাই অতি দ্রুত এই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাক। এতে ৭১ কে কাজে লাগিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলটির রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ভবিষ্যত পথ বন্ধ হবে এবং অপর দিকে বড় এই ইসলামী দলটির গুটিকয়েক অভিযুক্ত নেতৃত্বের বিনিময়ে বাংলাদেশের মাটিতে স্বচ্ছ রাজনীতির পথ উম্মোচিত হবে।
৬। ইসলামী দলগুলোকে দেশের মানুষের সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে যত না বেশী উদ্বীগ্ন হতে দেখা যায় তার চেয়ে বেশী তাদের নিজেদের গা বাচানোতেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। যেমন, তাদের উপর জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধ পৃভিতি অপবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেই সময় ব্যয় করতে হয়। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে এ দলগুলোর একটি মাত্রই এজেন্ডা থাকবে, তা হল জনগণের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে কথা বলা। এতে জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব বাড়বে।
৭। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো কিছু সৎ, চরিত্রবান লোক তৈরি করতে পারলেও দেশের অর্থনীতি, সাংস্কৃতি, বিচার প্রভিতি পরিচালনার লোক তৈরি করতে পারে নি। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় টিকে থাকতে তাদের অনেক বেশী রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য লোক তৈরী করতে হবে। এ সুয়োগে তাদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর পরিচালনার লোক বর্তমানের চেয়ে অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
৮। ইসলামী দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসবে। যেখানে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি, সেখানে কে মাথায় টুপি দিল আর না দিল এ নিয়ে বিদ্যমান মতপার্থক্যগুলো দুর হয়ে, ইসলামীদলগুলোর এক প্লাটফর্মে আসার পথও প্রসস্থ হবে।
উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো ছাড়াও ইসলামী দলগুলোর আরো অনেক পজেটিভ দিক আছে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের ছায়ায়। যাক, আশা করছি, ইসলামী দলগুলো হতাশ না হয়ে আরো বিপুল উদ্দীপনায় ইসলামী পুনর্জাগরনের পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইসলাম যে মানবতার জন্য সবচেয়ে উপকারী একটি আদর্শ তা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য তাদের চেষ্টা, কর্মতৎপরতা ও যোগ্যতাকে আরো বৃদ্ধি করবে। সভ্যতা পুণপ্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাদের পুর্বসূরিদের মত ত্যাগের সেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কতটুকু করতে পারে তা সময়ই বলে দেবে।
"তিনিই সে সত্ত্বা যি্নি তাঁর রাসূলকে সঠিক বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন যেন সকল মত-পখ ও আদর্শের উপর ইসলামকে বিজয়ী করে দিতে পারেন, এতে মুশরিকদের যতই অর্ন্তজ্বালা হোক" (ছফ-০৯)
"(ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হতে) যদি তোমরা ফিরে যাও তবে তোমাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে আর তোমাদের পরিবর্তে অন্য একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।" (তওবা-৩৯)
তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরা এমনি্তেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখে নেননি তোমাদের মাঝে কারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছে এবং এ পথে অবিচল থেকেছে। (ইমরান-১৪২)
"নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র বিধান হল ইসলাম।" (ইমরান-১৯)
"আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন বিধান অন্বেষণ করে তা গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভূক্ত হবে।" (ইমরান-৮৫)
"আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা কর এবং এব্যাপারে মতপার্থক্য করো না।" (শুরা-১৩)
আজ যারা ইসলাম ছাড়া অন্য মতবাদগুলো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন সেই সকল ভাইয়েরা উপরোক্ত কোরআনের আয়াতগুলোর বিপরীতে কি নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর সাহস করছেন?(যদি আল্লাহতেই আপনাদের বিশ্বাস না থাকে তবে ভিন্ন কথা) আপনাদের ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালের ধর্মহীনতা আপনাদের ধ্বংসই নিয়ে আসবে দুনিয়া-আখিরাতে।
আসুন আমরা আবার ইসলামের পতাকা তলে সামিল হই আর পৃথিবীতে ইসলামের সুমহান বিধানের সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠিত করে সকলকে নিয়ে স্রষ্ট্রার আনুগত্য ও তাঁর সন্তুষ্টির পথে অগ্রসর হই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




