সূত্র, সেদিন অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সকে কালোটাকা বলে উল্লেখ করলেন।তিনি আরও নিশ্চিত করলেন বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে অল্পশিক্ষিত মূর্খ লেবারের যারা দেশে টাকা পাঠায় তা কালোটাকা।গতবছর প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো এই কালোটাকার পরিমান ছিল ৭০ হাজার কোটি টাকা।অর্থমন্ত্রনালয় কতৃক সম্প্রতী করা এক গবেষনায় দেখা যায় বাংলাদেশের মার্কেটে, গ্রাম থেকে প্রত্যান্ত এলাকায়, প্রচুর কালোটাকার উপস্থিতি দেখা যায় যা বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।এই অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ব্যপক প্রভাব ফেলে।মারকেটে কালোটাকার দৌরত্ব বেড়ে যায়।
অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা অন্য দেশে কাজ করে আয় করে আমার দেশে পাঠাচ্ছে।এদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয় না।যার ফলে এই বিপুল পরিমান টাকাগুলো অপ্রদর্শিত থেকে যায়, যা কালোটাকা।তিনি আরও বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় শিক্ষিত উচ্চবিত্তের যারা বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠান, তাঁদের আয়কর দিয়েই তা পাঠাতে হয়।এ ক্ষেত্রে তাদের ওই অর্থ কালো হওয়ার সুযোগ নেই।তবে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূর্খ অর্ধশিক্ষিত, গ্রামের লেবার শ্রেণীর প্রবাসীরা যারা হুন্ডির মত অবৈধ্য পথে দেশে টাকা পাঠান তাদের আয়ের উপর সরকারের ট্যাক্স বসানোর কোন সুযোগ থাকে না।তিনি আরও বলেন দেশে আসা রেমিটেন্সের সিংহ ভাগই অবৈধ্য পথে আসে, যারফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিপুল পরিমান কালোটাকা থেকে যায়।এক দমে এটুকু বলে তিনি থামলেন।
আলোচনাঃ কালো টাকার উৎস নিয়ে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য গবেষণা হয়েছে, রেমিটেন্সকে কালো টাকার স্পর্শের উর্ধ্বে রাখার ক্ষেত্রে দুই দশকেরও আগেই অনেক অগ্রগতিও হয়েছে।বাংলাদেশেও গবেষনা হয়েছে, কিন্তু কোনো গবেষণায়ই এর আগে প্রবাসী আয়কে কালোটাকার উৎস হিসেবে দেখায় নি।কারন দেশের রাজস্ব নীতি ট্যাক্স থেকে সেল্ফ ও বর্তমানে ইউনিভার্সাল সেল্ফ হওয়ায় ট্যাক্স আদায়ের পরিধি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় চলে গেছে।সেখানে মার্কেটে প্রচুর কালোটাকা/অপ্রদর্শিত টাকার উপস্থিতি গবেষনার এই ফলাফল নিয়ে আসে।
মন্ত্রী বলছেন প্রবাসীদের আয়ের যে রেমিটেন্স বৈধ্য পথে দেশে আসছে তা সাদা টাকা।আর যা অবৈধ্য পথে আসে সেগুলি কালোটাকা।উল্লেখ্য, রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি, সেদিন শুনলাম এর পরিমান বার বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।কিন্তু এর মাত্র ২০% আসে বৈধ্য পথে ও ৮০% আসে অবৈধ্য পথে।আরেক তথ্যে দেখাযায় এই ৮০% এর পরিমান বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা।এবং আরব সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের যে ৭০ লাখ মূর্খ অর্ধশিক্ষিত দরিদ্র প্রবাসী মুজুরেরা থাকে তারাই মূলত অবৈধ্য পথে টাকা পাঠায়।এ টাকাই কালোটাকা যা ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং রেমিটেন্সের প্রায় পুরোটা।কারন ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসরত মধ্যবিত্ত প্রবাসীরা সেখানে যা আয় করে তা তারা সেখানেই ব্যয় করে ফেলে, বা তারা সেখানেই সেডেল করেছে।আবার মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তের অনেক প্রবাসী দেশ থেকে পিতামাতা বা নিজের কালোটাকা সেখানে পাচার করে দুই হাতে খরচ করে তাই দুই হাতে খরচ করে, যেমন নেতা আমলা চোরাকারবারীদের ছেলেমেয়েরা।
গ্রামের মূর্খ অশিক্ষিতরা, আরবে যাওয়া মুজুর মিসকিনেরা, যারা বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন থেকে প্রতারিত হতে শুরু করে নানা দলাল, ফরিয়া, রাজনীতিবিদ, আমলার হাতে।যেদিন দেশে ফিরে আসে, সেদিনও এয়ার্পোর্টে তাদের মালামল নিয়ে টানাহেচড়া পর্যন্ত করে কাস্টমস অফিসারেরা।আর বাড়ি গিয়েও যারা বিদেশ ফেরত ধূর হিসাবে গ্রামের টাউট বাটারপারদের খপ্পরে পরে।সে দেশ, গ্রাম, বাড়ি ছেরে যাওয়া নিসংঙ্গ অর্ধশিক্ষিত বিদেশ বিভ্যুয়ে ছেলেটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রাতদিন মুজুরি করে, দেশি টাকায় মাসে যে মাত্র বিশ, ত্রিশ বা পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনের চাকরী করে - যা এখানকার ছোট ছোট চোরেরাও তাদের এক সন্ধ্যার ফ্যামিলি চাইনিজের দেয়-দেশে দরিদ্র পরিবারের কাছে টাকা পাঠায়।ছেলেটি যে টাকা বেতন পায়, নিজের পেট কেটে প্রায় পুরোটাই দেশে বউছেলেমেয়ে পরিজনের জন্য পাঠায়।এই টাকার উপরও থাকে সমাজের প্রতিটি অংশের লোলুপ দৃষ্টি, ঘামে কেনা এই কাঁচা টাকাকে নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলছে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক হাজার রকমের ফন্দি ফিকির ও ধান্দাবাজী আর সাদাকালোর খেলা।এই যে আজ অর্থমন্ত্রী এ গুলোকে কালোটাকা বললেন তা তিনি একেবারে মিথ্যা বলেননি।কিন্তু যা বলেননি তাহলো, এই বিপুল রেমিটেন্স এর সুজোগ কাজে লাগিয়ে গত দুই দশক ধরে রাষ্ট্র, অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশব্যাংক, রাজনীতিবিদ, আমলা ও লুটেরা গোষ্ঠি নিজেদের দুর্নীতির কত লক্ষ কোটি কালোটাকা শুধু সাদাই করেনি, দেশে থেকে পাচার করেছেন ও করে যাচ্ছেন।গ্রামের যেই ছেলেটি বাপের পৈতিক জমি বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে, সবাইকে সেই নিজের টাকার ভাগ দিয়ে, বিদেশ গিয়ে দিনরাত মুজুরী করে যেই টাকা উপার্যন করলো তাও কালোটাকা হতে হবে ? এসমস্ত অশিক্ষিত মূর্খ কি কখনও চাইতো দুই টাকার জন্য অর্থনীতির আইনে কালোটাকা হয়ে যাক ?এই হলো আমাদের অর্থনৈতিক আইন কানুনের আউটপুট।
চলুন দেখি এই সাদাকালোর খেলা কিভাবে হয়? কার জন্য প্রতিটি সরকার নিজেই এই সিস্টেম বহাল রেখেছে দশকের পর দশক ? ঘটনাটা দেখুন কি দিয়ে কি হলো - বর্তমানে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী মিডিলইস্ট থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাস করে।ধরে নিলাম এর দুইতৃতীয়াং গ্রামের সাধারন মূর্খ ছেলেমেয়ে।এক লাল মিঞা, দুবাইয়ে কাজ করে, কনস্ট্রাকশন ফার্মে।দুই দিন পর এ মাসের বেতন পাবে, তার কোম্পানীর দেয়া ব্যাংক একাউন্টে সে টাকা জমা পরবে।ব্যাংকে গেল বেতনের টাকা তুলতে, তুলে হাতে কয়টা টাকা রেখে সবটা বাড়িতে পাঠাতে হবে, মা বলেছে নায়েব সাহেব বলেছে, বিশহাজার টাকা দিলেই তার পৈত্রিক ভিটাবাড়ির নামখারিজ হয়ে যাবে, চাচারা আর জোর করে দখল নিতে পারবে না, ঐ দিকে বিদেশ আসার সুদের টাকা এখনও অর্ধেক বাকি।ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর তার পিছনে দাড়িয়ে থাকা এক বাংলাদেশি লোক বললো, আমি দেশে টাকা পাঠানোর লোক মানে এজেন্ট !সে জিজ্ঞেস করলো, ভাই বাড়িতে টাকা পাঠাবেন ? কোথায় বাড়ি, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেন! বাড়িতে টাকা হাতে পাইয়া মোবাইলে কথা কইয়া তার পর আমাকে দিরহাম দিবেন।রেইট হাইয়েস্ট এবং কোন ফিস বা কমিশনও নাই, একদম ফ্রি, দেশসেবা বলতে পারেন!আমরা দেশ প্রমিক।
বলে কি এবড় দেশ প্রেমিক !সিস্টেমটা কি থিক্কা কি হইলো ? এতে এজেন্টের লাভ কি ? আসলে লাভ ওর পুরাটাই না বরং ডবল, সে আসলে হুন্ডি করছে। দুবাইয়ে লাল মিঞার দেয়া মোবাইল নম্বরের ঠিকানায় লোকাল হুন্ডির এজেন্ট বাংলা টাকায় যে টাকা পৌছে দিলেন আসলে ঐ টাকাটা ছিল অবৈধ্য, দুর্নীতির কালোটাকা।আন্ডার্গ্রাউন্ডে একটা বড় মার্কেট আছে যেখানে টাকা সাদা করা এবং একই সাথে টাকার ভিসা নেয়া হয়ে যায়, সব সরকারের হোমরা চোমরা রাজপুত মন্ত্রীপুত এই মার্কেট কন্ট্রোল করে।আর ঐ দিকে দুবাইয়ের এজেন্ট লাল মিঞার কাছ থেকে যে দিরহাম নিলেন সেটা ছিল দুবাইয়ের প্রদর্শিত সাদা টাকা।এই দিরহাম নিয়ে হুন্ডি এজেন্ট একই সাথে কালোটাকা সাদা করলো ও দেশ থেকে টাকা পাচার করলো এবং দেশ সেবা করলো।আজকাল সিস্টেমটা অনেকটা দেশে এসএ পরিবহন বা কুরিয়ার সার্ভিসে কোন মোবাইল নম্বর ও ঠিকানার এ্যগেইন্সটে টাকা পাঠানোর মত - উল্লেখ্য এখানেও আছে এই মন্ত্রনালয়ের আরেক বিরাট ষড়যন্ত্র।এজন্য দেখবেন কালেভাদ্রে কখনও হুন্ডির টাকা কয়েক কোটি ধরা পরলে তা যেন কিছুই না, কেও খবরও নেয় না।একবার সিলেটে নতুন ব্রিজের বাইরের মাথায় মুহিত সাহেবের হুন্ডি সিন্ডিকেটের এক এ্যাজেন্ট ৩০ লাখ টাকা সহ সিএনজিতে ধরা পরলো, থানা পর্যন্ত আনতে আনতে তা ৭ লাখ হয়ে গেল।বুঝুন হুন্ডিতে কত লাভ !
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষজনও প্রবাসে থাকে, তারাও নিজেদের দেশে টাকা পাঠায়।তারও সবাই বিশাল শিক্ষিত না।ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপিনের লক্ষ লক্ষ শ্রমীক প্রবাসে কাজ করে।তবে তারা কেউ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠায় না ? না, পাঠায় ব্যাংকের মাধ্যমে ?তারা ব্যাংকের মাধ্যমেই পাঠায়।সরকারই অনেক আগে তাদের সেই সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছে।আর আজ ২০১২ সালে তারা তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে দেশের প্রায় শত ভাগ নাগরীকের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে।আজ তাদের প্রতিটি মোবাইল নম্বরও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে।আজ বাংলাদেশ ছারা বিশ্বের যেকোন নাগরীক চাইলে যেকোন দেশে বসে তার ঐ দেশের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে ফান্ড তার নিজের দেশে বা যেকোন দেশে যেকোন ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারে ল্যাপটপে বসেই, মোবাইলেই, অনেকটা ফ্লাক্সিলোডের মত, পুলাপানেও পারে।আর বাংলাদেশ পরে আছে এখনও ১৯৮০ দশকের ব্যাংকিং নিয়ে। কেন ? এর কারন নাগরীককে যত কম স্বাধীনতা দেওয়া হবে টাকা পাচার থেকে শুরু করে দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে লুটতরাজ করতে তত সুবিধা, আবার গালিও দেওয়া যায় অন্যকেই।সেজন্য অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশব্যাংক, রাষ্ট্র অতি সুপরিকল্পিত ভাবে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে এরকম অথর্ব করে রেখেছে।তাই আজ সিলেটের হুন্ডি ব্যাসার অধিপতি আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন প্রবাসীদের আয় কালোটাকা।এই হচ্ছে অতিসংক্ষেপে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার ও দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অতি সংক্ষেপ একটা অংশ মাত্র।ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের অবস্থা এখানে পাবেনঃ রিট for Paypal in bd Now - দৃষ্টিআকর্ষন হাইকোর্ট
এই যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে, এইযে শেয়ার মার্কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল তা এই হুন্ডি না থাকলে দেশের বাইরে পাচার করা খুবই কষ্টকর হয়ে যেত।গত বিএনপির টার্মে একবার হুন্ডি ব্যবসায় বিশৃংখলা তৈরী হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে সৌদি আরব যাওয়ার সময় তার ছেলের ৪০ সুটকেস ভরা টাকা নিয়ে যেতে হয়েছিল।যানিয়ে মিডিয়া পাড়ায় অনেক তোলপার চলেছিল।বিরোধী দলও ইস্যুটা কাজে লাগিয়ে ছিল তাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই অর্থমন্ত্রীকে হুন্ডির মার্কেটের অবাধ কর্মকান্ড নিশ্চিত করেনর দায়িত্ব দেওয়া হয়, এই পাঁচ বছরে অন্তত ৫ লাখ কোটি টাকা পাচারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা আছে।সুটকেসে করে তো আর এত টাকা নেয়া যাবে না, আবার মানি এ্যাক্সচেন্জেরও ঝামেলা থাকবে না।
মোঃমোজাম হক বলেছেন: মন্ত্রী সভার কয়েকটি ক্লাউনের অন্যতম হচ্ছেন ইনি।উনি কখন কাকে কি বলে ফেলে ঠিক নেই।একবার শেয়ার বাজারিদেরকে ফটকা বলে ছিলেন।
কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে এসেছিলেন।আমরা প্রবাসীরা উনার নিকট আবেদন জানালাম যে ফিলিপিন্স/শ্রীলঙ্কানদের মতো আমরাও ডোর টু ডোর ডিউটি ফ্রী মালামাল পাঠাতে চাই।জবাবে তিনি আমাদের যা ইচ্ছে তাই বলে গেলেন।এর পরই দেশে গিয়ে ওয়েজ আর্নার বন্ডের উপড়ও ট্যাক্স বসিয়ে দিলেন ।
আপনাকে ধন্যবাদ ব্যাপারটা সম্মখে আনার জন্য।
দুনিয়ার প্রবাসী শ্রমিক এক হও, বাংলার পহেলা মে'র ডাক এসেছে।