যুগান্তরঃ করোনা চিকিৎসার পরিকল্পনায় গলদ, এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় কোনো হাসপাতাল
এদিকে হাসপাতালগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে সেখানে কর্মরত চিকিৎসাকর্মী ও সেবা গ্রহীতা রোগীরা টেলিফোনে এবং সরাসরি সাক্ষাতে যুগান্তরকে সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনই রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মী। একজনের স্বামী-সন্তান এবং একজন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের স্টাফ।
এদের মধ্যে কয়েকজন টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, তারা একটি ভুতুড়ে পরিবেশে অবস্থান করছেন। তারা সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী হওয়ার পরও দিনে এক কি দু’বার ফোনে তাদের খোঁজখবর নেয়া হয়। কিন্তু কোনো চিকিৎসক বা নার্স তাদের দেখতে আসেনি। তাছাড়া খাবার দিয়ে যায় দরজার বাইরে, সেই খাবারের মানও ভালো নয়।
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল : রোগীদের কাছে ডাক্তার-নার্স যান না, খাবার ও ওষুধ গেটের বাইরে রেখে যাওয়া হয়। প্রত্যেক ওষুধ ও খাবারের ওপর রোগীর বেড নম্বর লেখা থাকে। হাসপাতালের ৪ ও ৫ তলায় রোগী থাকেন। জরুরি বিভাগে এবং হটলাইনে ডাক্তার থাকলেও রোগীর কাছে যাওয়ার কেউ নেই।
হটলাইনের কর্মরত ডাক্তাররা ফোনে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। আইসিইউ দ্বিতীয়তলায়। সেখানে ডাক্তার থাকেন। নার্স থাকলেও তারা হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থান করেন কিন্তু রোগীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। কোনো রোগীকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাশের রোগী ফোন করে চিকিৎসক বা নার্সকে জানান।
এমনকি কোনো রোগীর অক্সিজেন লাগানো হলে সেটিও খুলে ফেলে রাখা হয়। কোনো রোগীর মৃত্যু হলে বা ছাড়া পেলে তার যাবতীয় জিনিসপত্র মেঝেতে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়। হাসপাতাল নিয়মিত পরিষ্কার করাও হয় না। এমনকি একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকেও তার নিজের খাবার ও ওষুধ নিজেকেই সংগ্রহ করতে হয়। নেই আয়া-ওয়াডবয়। সব মিলিয়ে করুণ অবস্থা।
জীবনঝুঁকিতে টেকনোলজিস্টরা : এদিকে আইইডিসিআরের প্রায় অর্ধশত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রোগীদের বাসায় গিয়ে বা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি এসব নমুনা ল্যাবে এনে পরীক্ষা করেন। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও তাদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা বা আবাসন।
চিকিৎসক-নার্সদের জন্য হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হলেও তারা দৈনন্দিন কাজ শেষে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। ফলে তাদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা থাকছেন মারাত্মক ঝুঁকিতে। এমনকি এদের অনেককে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। যাদের থাকতে হচ্ছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। অনেকে পরিচয় গোপন করে কোনোরকম ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছেন।
এসব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর বা আইইডিসিআর থেকে কোনো খাবারের বরাদ্দ রাখা হয়নি। এসব টেকনোলজিস্টকে মানসম্পন্ন পিপিই দেয়া হলেও মাস্ক দেয়া হচ্ছে সাধারণ মানের।
বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সেলিম মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, করোনা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন টেকনোলজিস্টরা। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই, এমনকি পর্যাপ্ত সুরক্ষা পর্যন্ত নেই। তিনি অবিলেম্ব টেকনোলজিস্টদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট) ডা. আমিনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো ঠিক করা হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল যখন নির্বাচন করা হয় তখন সেই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে করা হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পাশাপাশি বেশকিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যুক্ত করা হচ্ছে।
অধ্যাপক আজাদ বলেন, আমরা প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করেছি। পরে তারা তাদের গাইডলাইন পরিবর্তন করলে আমরা সেটি অনুসরণ করছি। যেহেতু রোগটি নতুন, তাই প্রতিনিয়তই আমরা শিখছি এবং নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তাছাড়া বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারে যে ফিল্ড হাসপাতাল করা হচ্ছে সেখানে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন সুবিধা থাকবে।
টেকনোলজিস্টদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সব সুবিধা দেয়ার কথা। যদি সেটি না হয়ে থাকে তাহলে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১২