somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জামায়ত ইসলামির রাজনীতি ও একটি আশংকা ।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামায়ত ইসলামী বাংলাদেশের অন্যতম একটি রাজনোৈতিক দল। বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সুসংগঠিত দল বললেও কম বলা হবে না। জামায়ত ইসলামী প্রকৃতপক্ষে কোন রাজনোৈতিক দল নয়। জামাতের বই ঘটলে দেখবেন যে, জিহাদের কথা বলা আছে। তারা ধর্ম কে পূজি করে পাকিস্তান আমল থেকে রাজনীতি করে আসছে। কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী দেশকে চালানোর জন্য , আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা জেহাদের উদ্দেশ্যেই মাঠে নেমেছে।

লেখা শুরু করার আগে জামাত কে নিয়ে কিছু বলে নেই। তাদের প্রধান লক্ষ্য ক্ষমতা না, তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে তারা আল্লাহর আইন কায়েম করতে চায়। তারা সাধারন মানুষদের ভিতর থেকে আস্তে আস্তে করে ১/২ জন কে বেছে নেয়। তাদের কে প্রথমে কোরআন , হাদীস এর বই , মওদুদীর বই পড়তে দেয়। মুলতঃ বই গুলো সব জিহাদ কে ঘিরেই লেখা। আমার মামা এক সময় জামাতের কর্মী ছিল, তখন খুব কাছ থেকে এই বই গুলো ও জামাতের কার্যক্রম দেখার সুযোগ হয়েছে। তারা প্রথমে কে কত বেলা নামাজ পড়লো, কয়টা মিথ্যা কথা বললো এইসব টুকে রাখার জন্য একটা বুকলেট দেয়। প্রতি সপ্তাহে কোন নেতার বাসায় সভা বসে, সেখানে এরা এসব নিয়ে আলোচনা করে এবং আস্তে আস্তে ব্রেইন ওয়াশ করে। যখন আল্লাহ-খোদার নামে তার মনে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, তখনই তারা মওদুদীর বই পড়তে দেয় এবং জিহাদ এর কথা বেশী বেশী করে বলে। আমাদের মহল্লাতেই একজন জামতী নেতা থাকতো, সে আমার মামাকে কি ভাবে গ্রাস করেছিল তা দেখেই আজকের এই লেখা। এই নিয়ে আগেও একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম।

তারা সুযোগ পেলেই জিহাদ এর নাম করে সব রকমের কার্য সিদ্ধি করে। ১৯৭১ এ তারা ঐ “জেহাদ” ও “ইসলামের” নাম করে এদেশের বিরুদ্ধচারন করেছে। শুধু বিরুদ্ধচারন না, তারা আর যে যে অপকর্ম করেছে, তা আমরা কম বেশী সবাই জানি, তাই আর বৃত্তান্ত লিখলাম না। তারা জ্ঞানের কথা বলে মানুষ কে অন্ধ করে দেয়। সেই সাথে তারা তাদের কর্মী দের কে অর্থনোৈতিক ভাবে ও সাহাজ্য করে থাকে এবং যে সব কর্মী চাঁদা দেবার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর একটা মাসিক চাঁদা ধার্য্য করে এবং আমি দেখেছি সবাই নিয়মিত চাঁদা ও দেয়। মহিলা নেত্রীরা ও একই রকম ভাবে মেয়েদের কে সংগঠিত করে।

জামাত সব সময় তাদের সুবিধার জন্য হাওয়া যেদিক যায়, সেদিকে তারা যায় বা যাবার ভান করে। যেমন ১৯৭১ এ তারা ভেবেছিল, পাকিস্তান থেকে এদেশ কে ছিন্ন করা সম্ভব না, তাই হিসাব করে তারা পাকিস্তান পক্ষে কাজ করে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তাদের কে দেখতাম জেহাদ করা নিয়ে খুব মাতামাতি , সেই সাথে অন্যান্য দলের সাথে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া। তারপর তারা ১৯৯৬ তে সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি বিরোধী আন্দোলন। আবার আরেক পল্টি দিয়ে ২০০১ এ বিএনপির সাথে জোট গঠন। এবার আর পল্টি দেবার সুযোগ পায় নাই। যদিও তারা তাদের স্বার্থে প্রথমে সুর সুর করে আরপিও সংশোধনী মেনে নিয়েছিল, পরে বিএনপির ধমক খেয়ে আবার আরেক পল্টি মারে। এই হোল ওদের আসল চেহারা।

কিন্তু তাদের “জেহাদী” আন্দোলন হঠাৎ করে গনতান্ত্রিক আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়ে গেল। কেন ???

কারন : -

প্রথমত: জেহাদী আন্দোলনের থেকে রাজনীতির আন্দোলনে ও সাধারন মানুষের ভিতর অনেক বেশী মানুষ সম্পৃক্ত করা যায়। এবং এটা ও শুনেছি, তারা ভিতরে ভিতরে এও বলেছে যে , ইসলামে নারী নেতৃত্ব নিষেধ সত্ত্বেও সরকারে যোগ দিয়েছিল, কারন তারা “জেহাদে” আছে। “জেহাদ তথা যুদ্ধে সব জায়েজ”। তাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নাই। তারা এই গনতান্ত্রিক লেবাস ধরেছে শুধু ক্ষমতায় যাবার জন্য না, সময় হলে জেহাদের ডাক দিয়ে দেশকে ইসলামিক রিপাবলিক করার ধান্দায়।
দ্বীতিয়ত: ৯/১১ এর পর পরিবর্তিত বিশ্বে জেহাদের কথা বলে তারা তাদের কে লাদেন এর সম পর্যায়ে দেখাতে চায়না বলেই তারা তাদের গনতান্ত্রিক রাজনী্তি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিছিলের সময় দেখবেন বড় বড় গজারী গাছের লাঠিতে পতাকা বেঁধে এরা মিছিল করে এবং সে গুলো থাকে মিছিলের ২ পাশে। ঐটা পতাকার জন্য না। মিছিল কে রক্ষা করার জন্যই ব্যবহার করে অথবা কোন আক্রমন আসলে প্রাথমিক প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করে তারা।

একসময় শিবির কর্মী রা এই জেহাদের কথা বলে তীর ধনুক দিয়ে হল দখল করতো, মানুষের গলা কাটতো। শুধু তাই না, আমি এমনও শুনেছি , রাঙ্গুনিয়া তে কোন পাহাড়ের কোনায় কোথায় নাকি এদের এত অস্ত্র আছে যে সেনাবাহীনিও নাকি একবার আক্রমন চালিয়ে পিছু হটেছে।(আমি নিশ্চিত নই)

এরা ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনোৈতিক, পেশী শক্তি - সবদিক থেকে শক্তিশালী। এই নির্বাচনে এরা ২ টা সিট পেয়েছে বলে আহ্লাদের ঢেকুর তোলার কোন কারন বা সুযোগ নাই। ২ টা বা ১০০ টা সিট কোন ব্যাপার না এদের জন্য। এটা যাস্ট একটা সাইনবোর্ড। তাদের জেহাদী কাজকাম কে ঢেকে রাখার জন্য এই সাইন বোর্ড ব্যবহার করে তারা। তারা তাদের মত সংগঠিত হতে থাকবে। কখনও ধীরে কখনও দ্রুত , পরিস্থিতি অনুযায়ী। কারন আর কেউ যুদ্ধের ময়দানে না থাকলেও তারা আছে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে তাদের রণ কৌশল। তারা আসন না পেলেও খেয়াল করে দেখেন, যথেস্ট ভোট পেয়েছে। একজন আঃ লীগ বা বিএনপি সমর্থক ভোটের সময় মত পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু জামাতি সমর্থক কখনই মত পরিবর্তন করবে না। জামাতের জত জন সমর্থক, তত জনই কর্মী। এটাই ওদের অন্যতম লক্ষ্য।

এবার আসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে , তাদের নেতাদের যদিও বিচারের মুখোমুখি হতে হয় এবং তারা জামায়তের নেতৃত্বে নাও থাকে, তাহলেও তাদের দলের কোন ক্ষতি হবে না। কারন তাদের দলের সাংগঠনিক ভিত টা এত মজবুত যে একজনের শুন্যস্থান সহজেই অন্য কাউকে দিয়ে পুরন করা সম্ভব। যুদ্ধাপরাধী বিচারের সাথে সাথে জামাতের রাজনীতি কে কিভাবে বন্ধ করা যায়, সেটাও চিন্তা করতে হবে। কারন তারা প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি করছে না। বরং আমি যেটা আশংকা করছি, যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ফাসির আদেশ হয়ে যায়, দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করবে। আরেকটা ১৪ই ডিসেম্বর এর আশংকাও আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এরা এরকম ভয়ংকর হয়ে উঠে, যেরকম ১৯৭১ এর বিজয়ের আগে উঠেছিল। দেশে যেসব জঙ্গী ধরা পড়ছে, তাদের সাথে জামাতের কোন পার্থক্য নাই। তারা “ডাইরেক্ট এ্যাকশনে” যায়, জামাতে কৌশলে আগায়।

সবার কাছে অনুরোধ, যুদ্ধাপরাধী দের বিচার বলে মাথা এখনই গরম না করে , আসুন আমরাও প্রস্তুত হই, ওদের চিকন বুদ্ধি মোকাবেলায়। যুদ্ধাপরাধী বিচার এর দাবী যেমন জানাতে থাকবো তেমনি এটা নিয়ে হই চই না করে সংগঠিত হতে থাকি যেন কোনভাবেই যুদ্ধাপরাধী রা ফাঁক গলে বেরোতে না পারে। চিৎকার চেচামেচি করে সরকার এর মাথা গরম না করে ঠান্ডা মথায় সরকার কে সাহায্য করি, যার যেখান থেকে যেভাবে সম্ভব। তাদের ফাদে পা না দেওয়াই ভালো। সমাজের সবজায়গায় তাদের লোক দেখবেন।

যুদ্ধাপরাধী দের বিচার এখন না হলে আর জীবনেও হবে না। আর বিচার না হলে এরা হয়না দের থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। এদের ভয়ংকর থাবাতে ক্ষত বিক্ষত হবে আমাদের পরের প্রজন্ম।

আমাদের স্বার্থেই এদের বিচার দরকার, শুধু বিচার না, রাজনীতির কথা বলে “জেহাদী” আন্দোলন কে বন্ধ করার জন্য তাদের রাজনীতি ও বন্ধ করা দরকার।
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×