লিখেছেন আবদুস শহীদ নাসিম
ইসলাম আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা। মানুষ যেনো তাঁর পছন্দনীয় পন্থায় জীবন যাপন করতে পারে, সে জন্যে আল্লাহ তায়ালা দয়া করে মানুষকে সে পথ ও পন্থার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কোন পথে চললে তিনি খুশী হবেন, তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। কোন্ পথে চললে তিনি নারাজ হবেন, তাও বাতলে দিয়েছেন। জীবন যাপনের সঠিক নিয়ম কানুন বলে দিয়েছেন। এভাবে তিনি মানুষকে তার মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। সফলতা লাভের উপায় বলে দিয়েছেন্ আর এই যে মুক্তির পথ আল সফলতা লাভের উপায়, তারই নাম হলো ‘ইসলাম’।
সুতরাং মানুষ যদি আল্লাহর পছন্দনীয় পথে চলতে চায়, তবে তাকে অবশ্যি জানতে হবে, আল্লাহর পছন্দনীয় পথ কোনটি? তাকে অবশ্যি জানতে হবে, তার মুক্তির পথ কোনটি? তার সফলতা অর্জনের উপায় কি? অর্থাৎ তাকে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু , ইসলাম সম্পর্কে জানার উপায় কি?
শেষ যামানার মানুষ যেনো ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারে, আল্লাহর পছন্দীয় পথের সন্ধান পেতে পারে, সে জন্য আল্লাহ তায়ালা আরব দেশের একজন অত্যন্তভালো মানুষকে তার বানীবাহক নিযুক্ত করেন । তার নাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তার কাছে মানুষেরর জন্যে তার পছন্দনীয় জীবন ব্যবস্থা ইসলাম অবতীর্ণ করেন। তার কাছে একখানা কিতাব নাযিল করেন। এ কিতাবের নাম আল কুরআন। এ কিতাবের সমস্ত অর্থ ও মর্ম তিনি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য কুরআন ছাড়াও তিনি আরেক ধরনের বাণী তার উপর অবতীর্ণ করেছেন। মানুষ কিভাবে আল কুলআন অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, তা বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও তিনি তার উপর অর্পণ করেছেন।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন্ তিনি সঠিকভাবে আল্লাহর কিতাব মানুষকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েছেনঃ
১. তার বাণী, বক্তব্য ও কথার মাধ্যমে,
২. তার কাজকর্ম এবং চরিত্র ও আমলের মাধ্যমে,
৩. অন্যদের কথা ও কাজকে সমর্থন করা এবং অনুমতিদানের মাধ্যমে।
নবী হিসেব তার এই তিন প্রকারের সমস্ত কাজকেই হাদীস নলা হয়। এই তিন ধরনের কাজকে তিন ধরনের হাদীস বলা হয়ঃ
১. তিনি তার বাণী, বক্তব্য ও কথার মাধ্যমে মানুষকে যা কিছু বলে গেছেন ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার নাম হলো, বক্তব্যগত হাদীস।
২. তিনি তার কর্ম, চরিত্র ও আমারৈর মাধ্যমে যা কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন তার নাম কর্মগত হাদীস।
৩. তিনি যা কিছুর সমর্থন ও অনুমোদন দিয়ে গেছেন, তার নাম হলো, সমর্থনগত বা অনুমোদনগত হাদীস।
তাহলে আমরা এখন বুঝতে পারলাম, আল্লাহর পছন্দনীয় পথ কোনটি? তার অপছন্দনীয় পথই বা কোনটি? আর কিভাবেই বা তার পছন্দনীয় পথে চলতে হবে? এসব কথা ও নিয়ম কানুন আল্লাহর তায়ালা তার নবীকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালার পাঠানো এসব বানী, বক্তব্য ও নিয়ম কানুনের সমষ্টির নাম হলো ইসলাম।
আমরা একথাও জানতে পারলাম, আল্লাহ তায়ালা যে তার নবীর মাধ্যমে আমাদের জন্যে তার পছন্দনীয় জীবন যাপনের পথ ইসলাম পাঠিয়েছেন, সে ইসলামকে আমরা দু’টি মাধ্যমে জানতে পারিঃ
একঃ নবীর প্রতি আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব আল কুরআন এর মাধ্যমে। দুইঃ নবীর বাণী, কাজ ও অনুমোদনসমূহের মাধ্যমে। অর্থাৎ নবীর হাদীসের মাধ্যমে।
এখানে আরেকটি কথা বলে নিই। কথাটা হলো, আমাদের প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা, কাজ ও অনমোদনের মাধ্যমে অর্থাৎ হাদীসের মাধ্যমে আমাদেরকে ইসলাম পালন করার যেসব নিয়ম কানুন, বিধি বিধান, আচার আচরণ ও রীতিপদ্ধতি জানিয়ে ও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, তার নাম হলো, সুন্নতে রসূল বা রসূলের সুন্নাহ।
এখন এ আলোচনা থেকে আমাদের কাছে একটি কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। তাহলো, যারা আল্লাহর পছন্দনীয় জীবন যাপনের পথ ইসলামকে জানতে চায় এবং ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করতে চায়, তাদেরকে অবশ্যি :
১. আল্লাহর কিতাব আল কুরআন পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে।
২. নবীর হাদীস ও সুন্নাহকে পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপন করত হবে।
তাহলে হাদীস কেন পড়বো? এ প্রশ্নটির জবাব এখন সুন্দরভাবে আমাদের জানা হয়ে গেলো!
হাদীস কোথায় পাবো?
এখন তুমি যদি আমাকে প্রশ্ন করো, আল্লাহর কিতাব কুরআন তো আমাদের ঘরে ঘরে আছে। কিন্তু নবীর হাদীস কোথায় পাবো? জবাব কিন্তু সোজা। আল্লাহর কিতাবের মতো নবীর হাদীসও কিন্তু আমরা ঘরে ঘরে রাখতে পারি। সেই ব্যবস্থা আমাদের দেশে আছে। কথাটি বুঝিয়ে বলছি।
নবীর সাহবীগণ নবীর কাছ থেকে তার হাদীস জেনে ও শিখে নিয়েছিলেন। সাহাবীদের কাছ থেকে তাদের পরবর্তী লোকেরা হাদীস জেনে ও শিখে নেন। অতঃপর তাদের থেকে তাদের পরবর্তী লোকেরা হাদীস জেনে ও শিখে নেন। এভাবে এক দেড়শ বছর চলতে থাকে।
এ সময় কিছু লোক হাদীস লিখেও রাখতেন, আবার কিছু লোক মুখস্থও করে রাখতেন।
এরপর খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয হাদীসের শিক্ষকগণকে নির্দেশ দেন, যেখানে যার যে হাদীস জানা আছে, তা সব যেনো সংগ্রহ করে লিখে ফেলা হয়। ইসলামের বিজয়ের সাথে সাথে সাহাবীগণ ছড়িয়ে পড়েছিলেন দেশে দেশে। সেই সাথে নবীর হাদীসও ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। তাই হাদীসের ছাত্র ও শিক্ষকগণ হাদীস সংগ্রহের জন্যে ছুটে বেড়ান দেশ থেকে দেশান্তরে। এভাবে তারা সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা নবীর সমস্ত হাদীস সংগ্রহ করে ফেলেন। যিনি যেখানে যে হাদীস পেয়েছেন, তিনি তা সংগ্রহ ও সংকলন করে ফেলেন।
এভাবেই সংকলিত হয়ে যায় নবীর হাদীসের বিরাট বিরাট গ্রন্থ। তাদের সংকলন করা হাদীসের গ্রন্থগুলো আমাদের কাছে এখন ছাপা হয়ে মওজুদ রয়েছে। কয়েকজন বড় বড় হাদীসের উস্তাদ এবং তাদের সংগ্রহ ও সংকলন করা হাদীস গ্রন্থগুলোর নাম বলে দিচ্ছি :
১. মালিক ইবনে আনাস (৯৩-১৬১)। তার সংকলিত গ্রন্থের নাম ‘মুয়াত্তা’ বা ‘মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক।’
২. আহমদ ইবনে হাম্বল (১৬৪-২৪১) হিজরী)। গ্রন্থ: মুসনাদে আহমদ।
৩. মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিজরী)। গ্রন্থ: ‘আল জামেউস সহীহ’। সহীহ বুখারী নামে সুপরিচিত।
৪. মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ নিশাপুরি (২০২-২৬১ হিজরী)। গ্রন্থ: সহী মুসলিম।
৫. আবু দাউদ আশআস ইবনে সুলাইমান (২০২-২৭৫ হিজরী) । গ্রন্থ: সুনানে আবু দাউদ।
৬. আবু ঈসা তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিজরী)। গ্রন্থ: সুনামে তিরমিযী।
৭. আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী (মৃত্যু-৩০৩ হিজরী)। গ্রন্থ: সুনানে নাসায়ী।
৮. মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ (মৃত্যু ২৭৩ হিজরী)। গ্রন্থ: সুনানে ইবনে মাজাহ।
এই বিখ্যাত আটজন মুহাদ্দিসের সংকলিত এই আটখানা হাদীস গ্রন্থ সবচাইতে বেশী খ্যাতি অর্জন করেছে। শেষের ছয়খানা গ্রন্থ ‘সিহাহ সিত্তা বা বিশুদ্ধ ছয়গ্রন্থ’ নামে পরিচিত।
এই আটখানা এবং এ রকম অন্যান্য বড় বড় গ্রন্থ থেকে বিষয় ভিত্তিক হাদীস বাছাই করে আবার অনেকগুলো গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। এগুলো হলো বাছাই করা সংকলন। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ
১. মিশকাতুল মাসাবীহ। সংকলন করেছেন অলীউদ্দীন আল খতীব।
২. বুলূগুল মারাম। সংকলন করেছেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেযে হাদীস এবং সহীহ্ বুখারীর ব্যাখ্যাতা ইবনে হাজর আসকালানী।
৩. রিয়াদুস সালেহীন। সংকলন করেছেন সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাতা ইয়াহিয়া ইবনে শরফ নববী ।
৪. মুনতাকিল আখবার। সংকলন করেছেন আবদুস সালাম ইবনে তাইমিয়া। ইনি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দাদা।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেকগুলো সংকলন রয়েছে। বাংলা ভাষায়ও বেশ কিছু সংকলন তৈরী হয়েছে, অনুবাদ হয়েছে ও প্রকাশ হযেছে। সুতরাং হাদীস কোথায় পাবো? সে প্রশ্নের জবাবও আমরা পেয়ে গেলাম।
১.এই আটখানা গ্রন্থের প্রায়গুলোই বাংলায় প্রকাশ হয়েছে। বাকীগুলোও হওয়ার পথে।
দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে পরকালে প্রশ্ন করা হবে
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আরবী............................................
১. কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞিসা করার আগে বনী আদমের পা এক কদমও নড়তে পারবেনা। সেগুলো হলোঃ
১. সে নিজের জীবনটা কোন্ পথে কাটিয়েছে?
২. যৌবনের শক্তি কোন্ কাজে লাগিয়েছে?
৩. ধন সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছে?
৪. কোন পথে ধন সম্পদ ব্যয় করেছে?
৫.দীন ইসলাম সম্পর্কে যতোটুকু জানতো, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে। {তিরমিযী : ইবনে মাসউদ রাঃ}
ব্যাখ্যা : এই হাদীসে আমাদের প্রিয় নবী আমাদেরকে একথাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের জীবনের একটি মুহূর্তও অকারণে নষ্ট করা যাবেনা। অন্যায় পথে একটি পয়সাও খরচ করা যাবেনা। আল্লাহর মর্জির খেলাফ কাজে একটি পয়সাও খরচ করা যাবেনা। আর দীন ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চলতে হবে। কারণ, আল্লাহর কাছে একদিন এগুলোর হিসাব দিতে হবে। আমাদের প্রত্যেককেই মরতে হবে এবং আল্লাহর কাছে হাযির হতে হবে। তাই সেদিনকার মুক্তির ব্যবস্থা পৃথিবী থেকেই করে যেতে হবে।
মৃত্যুর আগে জীবনকে কাজে লাগাও
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আরবী........................................................
২.পাঁচটি খারাপ সময় আসার আগে পাঁচটি ভালো সময়কে কাজে লাগাও :
১. বুড়ো হবার আগে যৌবনের শক্তিকে,
২. অসুখ হবার আগে সুস্থ থাকার সময়কে,
৩. অভাব অনটন আসার আগে সচ্ছলতাকে,
৪. ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে অবসর সময়কে এবং
৫. মরণ আসার আগে জীবিত থাকার সময়কে। (তিরমিযী : আমর ইবনে মাইমুন রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ অনেক মানুষ কেবল এই দুনিয়ার অর্থ সম্পদ এবং মান মর্যাদা লাভ করবার ও ভোগ করবার চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। পরকালের মুক্তির জন্য কি আমল করলো আর মরণের পরে কি অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে, সে বিষয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা করেনা। আসলে দুনিয়ার জীবনটা একটা সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করা সকলেরই কর্তব্য।
পরকালের জন্যে কাজ করাই বুদ্ধিমানের কাজ
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী..............................................
৩. আসল বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করলো এবং মরণের পরের জন্য আমল করলো। আর বোকা দুর্বল সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে কামনা বাসনার অনুসারী করে দিয়েছে, অথচ আল্লাহ তাকে বেহেশত নিয়ে যাবে বলে মিথ্যা আশা করে বসে আছে। (তিরমিযী : শাদ্দাদ ইবন আউস রাঃ)
প্রকৃত মুমিন
সত্যিকার ঈমানদান কিভাবে হওয়া যায়, হাদীসে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :
আরবী...............................................
৪. ঐ ব্যক্তির ঈমানদের স্বাধ পেয়েছে (অর্থাৎ সত্যিকার ঈমানদার হয়েছে), যে ব্যক্তি সন্তুষ্টির সাথে আল্লাহকে রব মেনে নিয়েছে। ইসলামকে দীন মেনে নিয়েছে। আর মুহাম্মদকে রসূল মেনে নিয়েছে। (মুসলিমঃ আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব।)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে বলা হয়েছে, প্রকৃত মুমিন হতে হলে মনের সন্তুষ্টির সাথে তিনটি কথা স্বীকার করতে হবে। সেগুলো হলোঃ
১. আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করতে হবে।
২. ইসলামকে দ্বীন বা জীবন চলার পথ হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং
৩. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসুল মেনে নিতে হবে।
আল্লাহকে রব মানার অর্থ কি?
এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহকে যে রব বলে স্বীকার করতে হবে, সেই রবের মানেটা কি?
রব মানে হচ্ছে, মালিক, প্রভু, গার্জিয়ান, প্রতিপালক, রক্ষক, সকল ক্ষমতার অধিকারী, কর্তা, শাসক। আমি আল্লাহকে রব মানি, এই কথার অর্থ হলো, আমি কেবল আল্লাহকেই একমাত্র মালিক, অভিবাবক, প্রতিপালক, রক্ষক, ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসনকর্তা মানি। আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকেও মালিক মনে করিনা। আর কাউকে প্রভু মানি না । প্রয়োজন পূরণকারী মনে করিনা। রক্ষাকর্তা মনে করিনা। আর কারো হুকুম মানিনা। আইন মানিনা। আর কারো কাছে মাথা নত করিনা। এগুলোই হলো আল্লাহকে রব মানার অর্থ। আল্লাহকে এভাবে মেনে নিলেই তাকে রব মানা হয়। আর তাকে এভাবে মানাই ঈমানের দাবী।
দীন কাকে বলে?
এবার দেখা যাক ইসলামকে দীন মানার অর্থ কি?
দীন মানে, জীবন যাপনের পথ। মানুষ তার গোটা জীবন কিভাবে চালাবে? কিভাবে ঘর সংসার চালাবে? কোন নীতিতে ব্যবসা বাণিজ্য করবে, চাষ বাস করবে? কিভাবে দেশ চালাবে, সমাজ চালাবে? কিভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে? এসব নিয়ম কানুন ইসলামে রয়েছে। এসব নিয়ম কানুনকেই দীন বলা হয়। ইসলামকে দীন মেনে নেয়ার মানে হলো, ইসলাম মানুষের জীবনের সকল কাজ কারবার চালাবার জন্যে যে নিয়ম কানুন এবং বিধি বিধান দিয়েছে, সেগুলোকে মেনে নিয়ে, সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
মানুষের জীবনের ছোট বড় সকল কাজের ব্যাপারেই ইসলাম নিয়ম কানুন দিয়েছে। একেবারে পায়খানা পেশাব কিভাবে করতে হবে, তা থেকে নিয়ে রাষ্ট্র কিভাবে চালাতে হবে? এইসব ব্যাপারেই ইসলাম নিয়ম কানুন বলে দিয়েছে। আর এই গোটা নিয়ম কানুন ও বিধি ব্যবস্থার নামই হলো দীন ইসলাম বা ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপনের পথ।
রসূল মানার অর্থ কি?
এবার দেখা যাক, হাদীসে যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূল মানার কথা বলা হলো, তার আসল মর্ম কি?
আসলে মুখে মুখে কেবল ইয়া রসূলাল্লাহ বললেই তাকে রসূল মানা হয়না। তাকে রসূল মানার অর্থ হলো, এই কথাগুলো মেনে নেয়া যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তার মাধ্যমে মানুষের কাছে জীবন যাপন করার সকল নিয়ম কানুন পাঠিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিভাবে জীবন যাপন করতে হবে, তা তিনি নিজের জীবন আমল করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি যা কিছু সত্য বলেছেন, তাই সত্য। আর যা কিছু মিথ্যা বলেছেন, তা সবই মিথ্যা। তিনি যা করতে বলেছেন, তাই করতে হবে। সেটাই ইসলাম। তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন, তা করা যাবে না। কারণ সেটা কুফরী। তিনি ইসলামের যে কাজ যেভাবে করেছেন, আমাদেরকেও সে কাজ ঠিক সেভাবে করতে হবে। এটাকেই বলে সুন্নতে রসূলের অনুসরণ করা। তিনিই সত্য মিথ্যার মাপকাঠি। সেই মাপকাঠিতে মেপেই সকল মুসলমানকে আমল করতে হবে। এই হচ্ছে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূল মানার অর্থ।
ইচ্ছা বাসনার দীনের অধীন করো
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী...............................................
৫. তোমাদের চিন্তা ভাবনা, কামনা বাসনা ও মতামত আমার নিয়ে আসা দীন ও শরীয়ত অনুযায়ী না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না। (মিশকাতঃ আবদুল্লাহ ইবন আমর রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির বক্তব্য হলো, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ে আসা দীন ইসলাম অনুযায়ী নিজের চিন্তা ও জীবনকে গঠন করলেই প্রকৃত মুমিন হওয়া যাবে। তবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করলে ইসলাম অনুযায়ী চিন্তা ও জীবন গঠন করা যায়না। কারণ কোনো জিনিস সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে, সে জিনিসের আকাংখা করা এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন গড়া কেমন করে সম্ভব?
জ্ঞানের পথে পা ফেলো
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী...............................................
৬.যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোনো পথ চলে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্যে বেহেশতের পথ সহজ করে দেন। (মুসলিম : আবু হুরাইরা রাঃ)
ব্যখ্যা : হাদীসটি থেকে জানা গেলো, জ্ঞান লাভের কাজে বিরাট ফায়দা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা পড়ালেখা জানে না, তারা কিভাবে দীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে?
হ্যা, যারা পড়ালেখা জানে, তাদের জন্যে জ্ঞানার্জন করা তো খুবই সহজ। আর যারা পড়ালেখা না শিখেই বড় হয়েছে, তারাও জ্ঞানার্জন করতে পারে।
নবীর সাথীরা সবাই পড়ালেখা জানতেননা। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও পড়ালেখা জানতেননা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহীর মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেছেন। আর তার সাহাবীরা তার থেকে শুনে শুনে জ্ঞানার্জন করেছেন। পড়েও জ্ঞানার্জন করা যায়। শুনেও জ্ঞানার্জন করা যায়। সাহাবীগণ শুনেই জ্ঞানার্জন করেছেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী.........................................
৭. “(দীনের) জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে ফরজ”।
সাহাবীগন শুনে শুনেই এ ফরয আদায় করেছেন। বর্তমানেও যারা পড়ালেখা জানেননা, তাদেরকে শুনে শুনেই দীন ইসলামের জ্ঞানার্জন করতে হবে। যারা দীন সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান রাখেন, তাদের থেকেই দীন সম্পর্কে শুনতে হবে।
আরেকটি হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী................................................
৮. “যে জ্ঞান লাভের জন্যে চেষ্টা করে, তার এ কাজের দ্বারা তার অতীতের অপরাধসমূহ মাফ হয়ে যায়”।
সুতরাং এতোদিন জ্ঞানার্জনের কথা চিন্তা না করে থাকলেও এখন থেকে শিশু কিশোর, শিক্ষিত অশিক্ষিত, পুরুষ নারী সকলকেই দীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানলাভের চেষ্টা করা একান্ত দরকার। যারা আমল করার নিয়তে দীন ইসলাম সম্পর্কে ইলম হাসিল করার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তায়ালা এই নেক নিয়তের কারণে তাদের অতীত অবহেলার অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।
কুরআন শিখো কুরআন শিখাও
তোমরা তো জানো গোটা বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। আমাদের এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের তিনিই সৃষ্টি করছেন। তিনিই সমস্ত জ্ঞানের উৎস। আমরা কিভাবে জীবন যাপন করলে দুনিয়ায় শান্তি পাবো এবং পরকালে মুক্তি পাবো, জান্নাত পাবো, তা কেবল তিনিই জানেন। তিনি দয়া করে কুরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক জীবন যাপন করার পথ। তাই কুরআনকে জানা, বুঝা এবং মানা আমাদের সবচাইতে বড় কর্তব্য। এ কর্তব্য যারা পালন করে তাদের চাইতে উত্তম মানুষ আর হয় না।
প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী.....................................
৯. “তোমাদের মাঝে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিখায়। (বুখারী : উসমান রাঃ)
এসো কুরআন পথে এসো আলোর পথে
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী...............................................
১০. “এই কুরআন আল্লাহর রশি, অনাবিল আলো, নিরাময়কারী ও উপকারী বন্ধু। যে তাকে শক্ত করে ধরবে তাকে সে রক্ষা করবে। যে তাকে মেনে চলবে সে তাকে মুক্তি দেবে। (মুসতাদিরকে হাকিম : ইবনে মাসউদ)
শিক্ষককে শ্রদ্ধা করো
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী....................................................
১১. “তোমরা জ্ঞান শিক্ষা করো এবং শিক্ষকদের প্রতি বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হও।” (তিবরানী : আবু হুরাইরা)
সমানে সমান
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে চলে, আল্লাহর হুকুম পালন করে, সে তার প্রতিটি নেক কাজের জন্যেই আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবে। কিন্তু যে অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে, আল্লাহর পথে চলতে বলে এবং দীনের শিক্ষা দান করে, সে কী পাবে? প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী.........................................
১২. “যে ব্যক্তি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে, সে ভালো কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য (পুরস্কার পাবে)।” (তারগীব ও তারহীবঃ আবু হুরাইরা রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি মানুষকে সৎ ও কল্যাণের কাজে উদ্বুদ্ধ করে, পরকালে সে বিরাট লাভবান হবে। কারণ সে নিজের ভালো কাজরে পুরস্কার তো পাবেই, আবার সেই সাথে অন্যদেরকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার পুরস্কারও পাবে। তার পুরস্কার হবে ডাবল।
নামায পড়ো রীতিমতো
কোন মুসলমান নামায ত্যাগ করতে পারেনা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী...............................................
১৩. “যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করলো, সে কুফরী করলো।” (তিরমিযী)
ব্যাখ্যাঃ অন্য হাদীসে প্রিয় নবী বলেছেন, নামায ত্যাগ করলে মুসলমান আর কাফিরের মধ্যে পার্থক্য থাকেনা। সুতরাং মুসলমান কোনো অবস্থাতেই এক ওয়াক্ত নামাযও ত্যাগ করবেনা। হাতে যতো কাজই থাকুক না কেন, যতো অসুবিধাই থাকুক না কেন, সময় মতো নামায পড়ে নিতে হবে। কারণ, নামায পড়া আল্লাহর হুকুম।
নামায পড়লে ক্ষমা পাবে
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সুফল সম্পর্কে বলেছেনঃ
আরবী..................................................
১৪. “আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এই নামায গুলো আদায় করার জন্যে সুন্দরভাবে ওযু করে, প্রত্যেক ওয়াক্ত নামায সময়মতো পড়ে, ঠিক ঠিক মতো রুকু সিজদা করে আর আল্লাহর ভয়ে বিনীতভাবে নামায আদায় করে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব।” (আবু দাউদ)
নামায পড়ো জামাত গড়ো
জামাতে নামায পড়লে সওয়াব বেশী হয়। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আরবী..............................................
১৫. “একা একা নামায পড়ার চাইতে জামাতে নামায পড়ার মর্যাদা সাতাশ গুণ বেশী।” (মুসলিম : আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ)
মানে জামাতে নামায পড়া লোকেরা পরকালে তাদের জামাতে নামায পড়ার জন্যে সাতাশ গুণ বেশী পুরস্কার পাবে।
জামাত ছাড়লে শয়তান ঘেঁষে
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন :
আরবী..................................................................
১৬. কোনো গ্রামে বা এলাকায় যদি তিনজন মুসলমানও থাকে, আর তার যদি নামাযের জামাত কায়েম না করে, তবে শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং জামাতে নামায় আদায় করা তোমাদের জন্যে অবশ্য কর্তব্য। কারণ, পাল ত্যাগ করা ভেড়াকে বাঘে খাইয়া ফেলে। (আবু দাউদ : আবু দারদা রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসের উদাহরণটা খুব চমৎকার। কোনো ভেড়া পাল ত্যাগ করে যদি একা একা বিচ্ছিন্নভাবে চরতে যায়, তখন তাকে যেমন বাঘে খেয়ে ফেলা সহজ, তেমনি জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া লোককে ধোকা দেয়া শয়তানের পক্ষে খুবই সহজ। অর্থাৎ মুসলমান দলবদ্ধ থাকলে তাদের কাছে শয়তান ঘেষতে ভয় পায়।
যাকাত করো পরিশোধ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত সম্পর্কে বলেছেনঃ
আরবী.............................................
১৭. “আল্লাহ যাকাত ফরয করে দিয়েছেন। যাকাত ধণীদের থেকে আদায় করা হবে আর দরিদ্রের মধ্যে বন্টন করা হবে।” (বুখারী মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসে যাকাত সম্পর্কে তিনটি কথা পাওয়া গেলোঃ
এক : যাকাত দেয়া ফরয।
দুই : যাকাত ধনীদের থেকে আদায় করতে হয়।
তিন : যাকাত গরীবদের মধ্যে বিতরন করতে হয়।
ফসলের যাকাত উশর
যাদের ফসলাদি উৎপন্ন হয়, তাদেরকে ফসলেরও যাকাত দিতে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আরবী.......................................................
১৮. “যে জমিতে বৃষ্টি, বর্ষার পানি এবং নদী নালার পানিতে বিনা সেচে ফসল জন্মে, কিংবা নদী বা খালের কাছে বলে সেচের প্রয়োজন হয়না, সেই জমিতে যে ফসল হয়, তার দশভাগের একভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যেসব জমিত শেরমের মাধ্যমে সেচ করতে হয়, সেসব জমিতে যে ফসল হয়, তার বিশভাগের একভাগ যাকাত দিতে হবে। (বুখারী)
• উশর মানে এক দশমাংশ বা দশভাগের এক ভাগ।
রমযান মাসের রোযা রাখো
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মাসের রোযা সম্পর্কে বলেছেন :
আরবী........................................................
১৯. “আল্লাহ্ এই মাসে (রমযান মাসে) রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন।” (মিশকাত)
রোযার পুরস্কার আল্লাহ্ নিজে
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনঃ
আরবী................................................
“বান্দা আমার জন্যে রোযা রাখে, সুতরাং আমি নিজেই রোযাদারের পুরস্কার।” (মিশকাত)
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ নিজেই যদি রোযার পুরস্কার হন, তবে এর চাইতে বড় পুরস্কার আর কিছু হতে পারে কি? আল্লাহ বড়ই মেহেরবান। যে আল্লাহকে পায়, তার আর কি প্রয়োজন?
রোযা রাখো মিথ্যা ছাড়ো
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
আরবী......................................................
২০. “যে ব্যাক্তি রোযা রেখেও মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা কাজকর্ম ছাড়তে পারলোনা, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (বুখারী)
পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ করো
রসূলুল্লাহর বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন :
আরবী.....................................................
২১. “আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন সময়মতো নামায পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম, মহান আল্লাহর তিনটি অতি প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হলো, বাবা মার সাথে সদ্ব্যবহার বা উত্তম আচরণ করা। আল্লাহ তায়ালা কুরাআন মজীদে কিন্তু পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ এবং তাদের সেবা করার হুকুমই দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
আরবী..........................................
“আমি মানুষকে তার পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি।” (আনকাবূত : ৮)
কুরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ বলেনঃ
“তোমার প্রভু হুকুম দিচ্ছেনঃ তোমরা ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না। বাবা মার সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদের কোনো একজন কিংবা দুজনই যদি বৃদ্ধ অবস্থায় তোমার কাছে থাকে, তবে (তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে) উহ্ পর্যন্ত বলবেনা। তাদেরকে ভৎর্সনা করবেনা। তাদের সাথে কথা বলবে সম্মানের সাথে। তাদের সাথে বিনয় ও নম্রতার আচরণ করবে। আর তাদের জন্যে এভাবে দোয়া করবেঃ
আরবী.......................................
প্রভু! এদের দুজনকেই দয়া করো, যেমন করে স্নেহ মমতার সাথে তারা শিশুকাল থেকে আমাকে প্রতিপালন করেছেন।” (বনী ইসরাইলঃ ২৩ -২৪)
সূরা লুকমানে আল্লাহ্ পাক পিতা মাতা সম্পর্কে একথাটিও বলে দিয়েছেন যে, পিতা মাতা যদি মুশরিকও হয়, তবু এই পৃথিবীর জীবনে তাদের সাথে ভাল ব্যবহারই করবে। তবে তারা যদি তোমাকে শিরক কিংবা পাপের দিকে ডাকে, সে ডাকে সাড়া দেবেনা।
বাবা মাকে কষ্ট দিওনা
আবী বকরা নুফাঈ বিন হারিছ (রাঃ) বলেনঃ একদিন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেনঃ
আরবী..............................
২২. “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ্ কি তা বলবো? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললামঃ অবশ্যি, হে আল্লাহর রসূল। তিনি বললেনঃ ১. আল্লাহর সাথে শরীক করা ২. বাবা মাকে কষ্ট দেয়া। এ যাবত তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন: ৩. সাবধান মিথ্যা কথা বলা এবং ৪. মিথ্যা সাক্ষি দেয়া।” (বুখারী ও মুসলীম)
পিতা মাতাকে কষ্ট দেয়া এতো বড় গুনাহ বলেই তো প্রিয় নবী রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদের সাবধান করে গেছেন। একবার এক ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ
আরবী.............................................
২৩. “ওগো আল্লাহর রসূল! সন্তানের উপর পিতা মাতার অধিকার কি? তিনি বললেনঃ তারা তোমার জান্নাত, আবার তারাই তোমার জাহান্নাম। (ইবনে মাজাহ : আবু উমামা রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ এ দুটি হাদীস থেকে জানা গেলো, পিতা মাতাকে কষ্ট দেয়া জাহান্নামে যাওয়ার কাজ। অপরদিকে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা জান্নাতে যাওয়ার কাজ। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি তার পিতা মাতার সাথে কেমন ব্যবহার করেছে, কিয়ামতের দিন এ বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে। যেসব কারণে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে তন্মধ্যে এটিও একটি বিবেচনার বিষয় হবে।
দোয়া করো পিতা মাতার জন্যে
প্রিয় নবীর সাথে আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী......................................................
২৪. “মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার আমলও ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল (আমলনামায়) যোগ হতে থাকেঃ ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. কল্যাণময় শিক্ষা, ৩. এমন সৎ সন্তান যে মৃত পিতা মাতার জন্যে দোয়া করে।” (মুসলিম : আবু হুরাইরা)
ব্যাখ্যাঃ ‘সদকায়ে জারিয়া’ মানে এমন জনসেবার কাজ, যা দ্বারা বছরের পর বছর মানুষ উপকৃত হয়। তাদ্বারা যতোদিন মানুষ উপকৃত হবে, ততোদিন এই সেবাদানকারীর আমল নামায় নেক আমল যোগ হবে।
‘কল্যাণময় শিক্ষা’ মানে এমন জ্ঞান ও শিক্ষা মানুষকে দিয়ে যাওয়া এবং মানুষের মধ্যে প্রচার করে যাওয়া, যার ফলে মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম আল্লাহর পথে চলতে থাকে। এ শিক্ষাদান থেকেও মৃত ব্যক্তির আমল নামায় নেক আমল যোগ হতে থাকবে।
মৃত পিতা মাতার জন্যে সৎ সন্তানের দোয়াও আল্লাহ্ কবুল করেন। সৎ সন্তানের দোয়ায় মৃত পিতা মাতার নেক আমল বৃদ্ধি পায়।
মুসলমান মুসলমানের ভাই
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী....................................
২৫. “মুসলমান মুসলামানের ভাই। এক মুসলমান ভাই তার আরেক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি যুলুম করতে পারেনা। তাকে ঘৃনা করতে পারেনা। অপমান করতে পারেনা। যে ব্যক্তি মুসলমান ভাইকে ধৃণা করলো, বা ছোট মনে করলো, সে অত্যন্তখারাপ লোক। যে কোনো মুসলমানের রক্ত, অর্থ সম্পদ এবং মান ইজ্জত সকল মুসলমানের নিকট সম্মানিত।” (মুসলিম : আবু হুরাইরা রাঃ)
সাহায্য করো দীনি ভাইকে
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিদায়াত দিয়ে গেছেনঃ
আরবী........................................
২৬. “তোমার মুসলমান ভাইকে সাহায্য করো, সে যালিম হোক কিংবা মযলুম। একথা শুনে একজন লোক জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ মযলুমকে তো সাহায্য করতে পারবো, কিন্তু যালিমকে কিভাবে সাহায্য করবো? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যুলুম করা থেকে তাকে বিরত রাখাটাই তাকে সাহায্য করা।”
ব্যাখ্যাঃ যে জুলুম করে, এই যুলম করাটা তার ক্ষতি বা গুনাহ। আর যুলুম না করাটা হলো নেক কাজ। যুলুম করা থেকে তাকে বিরত রাখার মাধ্যমে গুনাহ থেকে তাকে বাচানো হলো এবং নেক কাজে সাহায্য করা হলো। এটাই হচ্ছে যালিমকে সাহায্য করার অর্থ।
সৎ ব্যবসায়ী অতি মহান
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী..............................................
২৭. “সৎ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী পরকালে নবী,সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে থাকবে।” (তিরমিযী : আবু সায়ীদ খুদরী রাঃ)
ব্যাখ্যাঃ অনৈসলামী সমাজে সৎ পথে ব্যবসা করা যে খুব কঠিন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সত্যিকার মুসলমান ব্যবসায়ী কোনো অবস্থাতেই ব্যবসায়ে অসততা অবলম্বন করতে পারেনা। সততার সাথে ব্যবসা করার জন্যে তাকে সংগ্রাম করে যেতে হবে। তবেই হাদীসে বর্ণিত এই মর্যাদা লাভ করা যাবে।
পরের জমির আইল ঠেলোনা
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী........................................................................
২৮. “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমিও দখল করে নেয়, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত স্তবক বেড়ী পরানো হবে। (বুখারীঃ সায়ীদ ইবনে যায়েদ রাঃ)
ফল ফসল সদকা হবে
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী.......................................
২৯. “কোনো মুসলমান যদি ফসলের ক্ষেত করে, কিংবা ফলের গাছ লাগায় আর তা থেকে মানুষ বা পশু পাখি যে আহার করে, সেটাকে ঐ মুসলমান ব্যক্তির সদকা হিসেবে আল্লাহ্ লিখে রাখেন। (মুসলিম)
শ্রমের মর্যাদা জানো কি?
সততার সাথে গায়ে খেটে যারা উপার্জন করে, তারা আল্লাহ্ তায়ালার ভালবাসা পায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী.................................
৩০. “আল্লাহ্ তায়ালা পরিশ্রম করে উপার্জনকারী মুমিনকে ভালবাসেন।” (তিবরানী)
অন্য একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী..................................
৩১. “সার্বত্তোম রোজগার হলো, আল্লাহর পছন্দনীয় তরীকায় ব্যবসা করা এবং গায়ে খেটে উপার্জন করা।” (মুসনাদে আহমদ)
স্বজন পোষণ দানের কাজ
সৎ পথে উপার্জন করে নিজের সংসার চালালে তাতেও আল্লাহ্ তায়ালা সদকার সওয়াব দেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আরবী..........................................
৩২. “তোমার উপার্জন থেকে যা তুমি নিজে খাও, তাতে তোমার জন্যে দানের সওয়াব রয়েছে। যা তোমার সন্তানের জন্যে ব্যয় করো তাও তোমার একটি দান। যা বিবির জন্যে ব্যয় করো, তাও দান। যা চাকর বাকরের জন্যে ব্যয় করো, তাও সদকা। (তারগীব ও তারহীব : মিকদাম বিন মাদীকরব রাঃ)
ধার করয দাও সবে
আমরা এক সমাজে বাস করি। নিজেদের প্রয়োজনে টাকা পয়সা ধার করয নিই এবং ধার করয দিই। আমাদের এক ঘরের মেয়েরা আরেক ঘর থেকে নুন, তেল, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি ছোট খাটো ছোট খাট জিনিস ধার করয নেয়, দেয়। এইরূপ ধার করয দেয়ার মধ্যে কোনো সওয়াব আছে কি? হাঁ, অবশ্যি আছে। প্রিয় নবী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



