somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

কোলকাতা ভ্রমন- ২

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাতে পৌঁছেই হোটেলে রুম নিয়ে নিলাম।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। প্রিন্স রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলাম। রুই মাস, আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা আর ডাল। ভাত খেয়ে আর কোথাও গেলাম না। বেশ ক্লান্ত আমরা। ঘুম দিলাম। গভীর ঘুম। এক ঘুমে রাত পার। সকালে উঠে দেখি ওয়াশ রুমে টিস্যু নেই, গরম পানির ব্যবস্থা আছে কিন্তু মেশিন নষ্ট, পানির বোতল নাই, তোয়ালে নাই, সাবান-সেম্পু কিচ্ছু নেই। এমন কি মোবাইল চার্জ দিতে পারলাম না। নিচে ওদের জানালাম আমাদের সমস্যা। ওরা আমাদের সমস্যার কথা কানেই নিলো না। বলল, টিস্যু এবং মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য থ্রী প্লাগ বাইরে থেকে কিনে নেন। অথবা টাকা দেন আমরা কিনে এনে দেই। অথচ রুম ভাড়া নিলো ষোল শ' টাকা। বুঝে গেলাম ওরা বেয়াদপ। দুষ্টলোক। ওদের সাথে আর কোনো কথাই বললাম না। দুষ্টলোক থেকে আমি সারা জীবন দূরে থাকতে চেষ্টা করি। অন্য হোটেলে যে যাবো সেই উপায়ও নেই। রাতেই হোটেলের চার দিনের টাকা একসাথে দিয়ে দিয়েছি। যাই হোক, সকালে এক হোটেলে নাস্তা করলাম। নাস্তা করে নিউ মার্কেটের দিকে গেলাম। সুরভি হাবি-জাবি অনেক কিছু কেনাকাটা করলো। আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম সুরভি যা কিনতে চায় কিনে দিব।



সুরভি মোট একান্ন হাজার টাকার কেনাকাটা করেছে।
নিজের জন্য কিনেছে। বান্ধবীদের জন্য কিনেছে। আমার ভাই ভাবীর জন্য কিনেছে। মা বাবার জন্য কিনেছে। যা-ই কিনেছে, আমি কিচ্ছু মানা করি নাই। আমাকে জিজ্ঞেস করেছে- এটা নিবো? আমি লক্ষ্মী ছেলের মতোণ বলেছি- লে লো। কোলকাতায় বেশির ভাগ লোকই দেখি হিন্দিতে কথা বলে। যারা বাঙ্গালী তারাও হিন্দিতে কথা বলে। ওদের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে বলতে আমি নিজেও হিন্দিতে কথা বলা শুরু করেছি। একসময় দেখা গেল আমি সুরভির সাথেও হিন্দিতে কথা বলছি। সুরভি আমার হিন্দি শুনে হাসতে হাসতে শেষ। সুরভির হাসার কি আছে! আমি তো হিন্দি পারি। সুরভি কি কি কিনেছে তা একটু বলে নিই। কুর্তি পাঁচ টা, জুতো পাঁচ জোড়া, এমিটেশনের গহনা, কাজল, বডি স্প্রে, সাবান- ছয়টা করে, ক্রীম, পারফিউম, অলিভ ওয়েল তেল (বড় বোতল), লেডিস ব্যাগ দুইটা, পার্স দুইটা, শনপাপড়ি তিন প্যাকেট, কিটকেট বড় দুই পেকেটসহ ইত্যাদি জিনিসপত্র। আরো কি কি যেন আছে, এই মুহুর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না। নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কি কিনেছি? আমি কিনেছি দুইটা জান্ডু বাম। চল্লিশ টাকা করে দাম। আর কিচ্ছু না। অবশ্য সুরভি অনেক কিছু কেনার জন্য আমাকে বলেছে। আমি কিছুই কিনি নি। আসলে আমার কিছুর প্রয়োজন নেই।



পদাতিক চৌধুরি। আমাদের ব্লগার।
উনার আন্তরিকতায় আমি এবং সুরভি মুগ্ধ। উনি অসংখ্য বার ফোন দিয়েছেন। প্রতিটা মুহুর্ত যোগাযোগ রেখেছেন। ফোনে না পেলে ম্যাসেজ দিয়েছেন। যাই হোক, দাদার কথা এখানে বলব না। দাদাকে নিয়ে আলাদা পোষ্ট দিবো। কোলকাতায় প্রথম দিন কেনাকাটা করেই কেটেছে আমাদের। কোথাও যাই নি। পরের দিন সকালে সুরভি আর আমি সকালের নাস্তা করেই এলোমেলো হাঁটা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে পাতাল ট্রেনের কাছে চলে গেলাম। কোলকাতা মেট্রো রেল। খুব সুন্দর। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সকালের দিকে মানুষ সঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার জন্য মেট্রো রেলের দিকে ছুটছে। সবাই ভীষন ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততা দেখে ভালো লেগেছে। পথে পথে গেন্ডারি রসের অনেক দোকান। আমি আর সুরভি অসংখ্যবার আখের রস খেয়েছি। এক গ্লাস দশ/পনের টাকা করে। আমি প্রতিদিন ওদের দৈনিক পত্রিকা পড়েছি। বেশ কিছু দৈনিক আছে ওদের। তবে আমি পড়েছি- আনন্দবাজার, এই সময় এবং বর্তমান নামের দৈনিক। সুরভি কেনাকাটায় ব্যস্ত আমি পত্রিকা পড়ে সময় পার করেছি।



কোলকাতায় চার পাচ জনকে চিনি।
তারা একসময় বাংলাদেশে ছিলেন। এখন পাকাপাকিভাবে কোলকাতায় বসবাস করছেন। অবশ্য আমি যে কোলকাতায় আসছি তা তাদেরকে জানাই নি। শুধু মাত্র আমাদের পদাতিক চৌধুরী (দাদা)কে ছাড়া। যাই হোক, পরের দিন সকালে চলে গেলাম বোলপুর, শান্তিনিকেতন। হাওড়া থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে নিলাম। স্টেশন ভর্তি মানুষ। এত এত লোক। নানান ভাষার লোক। নানান রকম লোক। বিশাল স্টেশন। সেই তুলনায় আমাদের কমলাপুর রেলস্টেনকে ছোট বলেই মনে হলো। যাই হোক, দুজনের টিকিট নিলো ষাট টাকা। বোলপুর, স্টেশনে নামলাম। বোলপুর যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগলো। ট্রেনে বেশ ভালো লেগেছে তবে মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে বিষ্ঠার বাজে গন্ধ এসেছে। যাই হোক, একটু পর ঝালমুড়ি ওয়ালা আসছে, গরম সিঙ্গাড়া, চা-কফি, সুই-সেফটিপিন, পত্রিকা, বই, আলুর চিপস ইত্যাদি হকার। হকারের ডাকে আমাদের কামরা গম গম করছে। ট্রেনেই এক বাঙ্গালী পরিবারের সাথে আলাপ হলো। পরিবারটি বেশ ভদ্র। শান্ত। তারা আমাদের শান্তিনিকেতন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিলেন। তাদের ফোন নম্বর দিলেন, আমাদের ফোন নম্বর নিলেন। এমন কি সাথে সাথে সুরভির ফেসবুকে এড হলেন। বোলপুর স্টেশনে নামলাম। লিফট আছে। স্টেশন থেকে বের হতেই একগাদা দালাল আমাদের ঘিরে ধরলো। ভয়াবহ অবস্থা!



অটোতে করে শান্তিনিকেতন গেলাম।
অটোকে ওরা বলে টোটো। বিশ টাকা করে ভাড়া। অথচ আপনার কাছে টোটোওয়ালারা ত্রিশ বা চল্লিশ টাকাও চাইতেও পারে। শান্তিনিকেতন নেমে দেখি সব বন্ধ। সাপ্তাহিক বন্ধ। এমন'ই পোড়া কপাল আমার! অবশ্য পোড়া কপাল শুধু আমার না। আমার মতো বহু লোক শান্তিনিকেতনে এসেছে আজ। তাদের সবারই কপাল পোড়া বলা যায়। হে হে....। যাই হোক, তারপরও এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত খুব ঘুরে বেড়ালাম। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা। সুরভি আবার সেদিন শখ করে শাড়ি পড়েছে। প্রচুর ছবি তুললাম। প্রায় সারাটা দিন শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে দিলাম। শান্তিনিকেতনের পরিবেশটা খুব সুন্দর। নানান ধরনের গাছগাছালিতে ভরা। দুঃখের বিষয় প্রস্বাব করার কোনো জায়গা খুঁজে পেলাম না। ছাত্রছাত্রীরা যে হলে থাকে সেখানে তো যাওয়া সম্ভব না। অগত্যা হাঁটতে হাঁটতে এক চমৎকার রেস্টুরেন্ট পেয়ে গেলাম। রেস্টুরেন্টের নামটা খুব সুন্দর। সেই সুন্দর নামটা এখন মনে করতে পারছি না। আফসোস। যাই হোক, সেখানে পরিস্কার, ঝকঝকে তকতকে ওয়াশরুম পেলাম। প্রস্বাব করার পর বেশ হালকা লাগলো নিজেকে। দুপুরে সেই রেস্টুরেন্টে খেলাম। খাবার মন্দ নয়। ফেরার পথে ভয়াবহ অবস্থা। সেই গল্প আগামী পর্বে করবো।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×