অধ্যাপক অজয় রায় আজ ৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর জন্ম ১২ মার্চ ১৯৩৬। তিনি পদার্থবিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক বুদ্ধিজীবী।
তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। তিনি আমাদের হৃদয়ে চিরদিন অম্লান ও অমর হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি পদে ছিলেন।
তিনি কোন হিসাববিদ ছিলেন না, তাই বোধ করি তিনি নিজেও তাঁর জীবনের চাওয়া পাওয়ার কোন হিসাব করেন নি এবং আমাদেরকেও সেটা করতে বলেন নি। তাঁর প্রিয় কাজ ছিল শিক্ষা ও জ্ঞান আহরণ এবং বিতরণ। প্রজন্মের জন্য আজীবন তিনি সেটাই করেছেন সম্পূর্ণ সততার সাথে নিরলস। তিনি তাঁর মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা শাস্ত্রের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা কর্মের জন্য দান করে গেছেন। ২০১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে একুশে পদক অর্জন করেন অজয় রায়।
অধ্যাপক অজয় রায় মারা গেছেন যার সন্তান অভিজিৎকে পুরুষতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও মৌলবাদী বাংলাদেশ খুন করেছে। ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো পাশে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন। অভিজিৎকে হত্যার আট মাসের মাথায় তার বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকেও কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা।
ডঃ অজয় রায় তো সাধারণ একজন ছিলেন না। কোন রসায়নে আজ বাংলাদেশের এই হাল তা তিনি ভাল করেই জানতেন। শ্রদ্ধা জানাই স্যারকে। তিনি অনেক পিতার মনে পিতৃগর্ব জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় পড়াশোনা করেছেন।
শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কিংবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়াই নয়। উনি অংশ নিয়েছিলেন তার চাইতেও কঠিন এবং জটিল একটি যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের নাম মানুষের চিন্তার মুক্তির জন্য যুদ্ধ। আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন মানুষের মগজকে বেঁধে রাখা শেকলকে ভাঙ্গার জন্য। মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তার বিকাশের জন্য। শিক্ষার বিকাশের জন্য।
১৯৫১ সালে মহারাজা গিরিজা নাথ হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অজয় রায়। একটি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কারণে কলেজে থাকা অবস্থায় কয়েক মাস জেল খাটতে হয়েছিল তাকে।
অধ্যাপক অজয় রায়ের লেখা বইয়ের মধ্যে ‘Concepts of Electricity and Magnetism’, ‘বাঙালির আত্মপরিচয়: একটি পুরাবৃত্তিক ও নৃতাত্ত্বিক আলোচনা’, ’আদি বাঙালি: নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’, ‘বিজ্ঞান ও দর্শন’, ’জড়ের সন্ধানে’ অন্যতম।
জয় হউক মানবতার। মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৩