somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

বজলু জানে লাশের পরিচয়

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লেখকদের অনেক কিছুই থাকতে হয়।
একজন লেখকের ধার থাকতে হয়, তেজ থাকতে হয়, ব্যক্তিত্ব থাকতে হয়, সাহস থাকতে হয়, সত্য বলার ক্ষমতা থাকতে হয়, স্বচ্ছ-পবিত্র জ্ঞান থাকতে হয় এবং সর্ব্বোপরি 'গল্প' বলতে জানতে হয়। তাহলেই একজন লেখক অনেক দূর যেতে পারবেন। আমি মনে করি, হাবিবুল্লাহ ফাহাদের মধ্যে একজন শক্তিশালী লেখক হওয়ার সকল গুনাবলি বিদ্যমান আছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে বয়স কোনো ব্যাপার না। কেউ ত্রিশ বছরে যে জ্ঞান অর্জন করে, সেই জ্ঞান কেউ ষাট বছরে অর্জন করে। আমি বিনা দ্বিধায় বলে দিতে পারি, হাবিবুল্লাহ ফাহাদ তার যোগ্যতা দিয়ে, তার সমস্ত মেধা দিয়ে, সমস্ত ভালোত্ব দিয়ে বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিবেন।

'বজলু জানে লাশের পরিচয়' গ্রন্থে বারোটি গল্প আছে।
প্রতিটা গল্প'ই ভিন্ন স্বাদের। এবং প্রতিটা গল্প অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। পাঠকেরা এরকম গল্পই পড়তে চায়। সহজ সরল ভাষা। কোনো ভনিতা নেই। গল্পের পাশাপাশি শব্দের গাঁথুনি এবং চারপাশের বর্ননা আমাকে মুগ্ধ করেছে! লেখক তার প্রতিটা গল্পের সময়, সময়ের নিখুঁত বনর্না এবং প্রকৃতির বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন- তাতে প্রকৃতির কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ কথা মনে করিয়ে দেয়। একটা গল্পকে দাঁড় করাতে গল্পের থিমের চেয়ে চারপাশের বর্ণনা অধিক গুরুত্বপূর্ন। লেখক হাবিবুল্লাহ ফাহাদের সেদিকে বেশ নজর আছে। গল্প গুলো পড়লেই বুঝা যায় লেখক প্রচন্ড পরিশ্রমী। এবং আত্মবিশ্বাসী।

'বজলু জানে লাশের পরিচয়' গল্পটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় সম্পদ। সুখে দুঃখে আমাদের বারবার ৭১ এ ফিরে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহস দেয়, শক্তি দেয়, দেশকে ভালোবাসতে শেখায়। লেখক মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নি। যুদ্ধের অনেক পড়েই তার জন্ম। কিন্তু দেশ এবং দেশের মানুষের উপর লেখকের সীমাহীন ভালোবাসা রয়েছে। অবশ্য মানুষের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা না থাকলে লেখক হওয়া যায় না। লেখক দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশের মানুষের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তিত। হুমায়ূন আহমেদ বা আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মহৎ সব উপন্যাস লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি লেখকের বিশাল দূর্বলতা আছে, ভালোবাসা আছে।

'বজলু জানে লাশের পরিচয়' গল্পটি নিয়ে দু'টা কথা বলি।
গল্পের শুরু এভাবে- একজন হিন্দু লোককে বলা হয় আজান দিতে। যাকে আজান দিতে বলা হলো- তার নাম হরিপদ। হরিপদকে অনেক মারধোর করা হয়েছে। তার ঠোট কেটে রক্ত পড়ছে। হরিপদের গলা শুকিয়ে কাঠ। হরিপদ পানি চাইতেই তাকে শরবতের কথা বলে নোংরা ডোবা থেকে পানি এনে দেওয়া হয়। মেজর সাহেব এলে তার আসল বিচার হবে। মেজর সাহেব অলরেডি রওনা দিয়ে দিয়েছেন। হরিপদ তার পরিবারের সকল সদস্যকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি যান নি। বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় নি। 'বজলু জানে লাশের পরিচয়' গল্পটি পড়ার পর মনে হবে- বইটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।

লেখক হাবিবুল্লাহ ফাহাদ গল্পের শেষটা বেশ রহস্যময় করে তুলেছেন। হরিপদকে কি ছেড়ে দেওয়া হয়? যদি ছেড়েই দেওয়া হয় তাহলে খালে একটা মন্ডুবিহীন দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুরো শরীর পানিতে ফুলে উঠেছে। পচতে শুরু করেছে। মন্ডুবিহীন কার লাশ এটা? বইটি পড়ুন। গল্প গুলো উপভোগ করুন। আমার মতো আপনারা মুগ্ধ হবেন। 'বজলু জানে লাশের পরিচয়' বইটি শেষ করে আপনার ভালো লাগবে। বইটা পড়তে পড়তে কখনও কখনও বুক হাহাকার করে উঠবে, আবার আনন্দে নেচে উঠবে মন। বেদনার্ত হবেন। পাওয়া না পাওয়ার শিখরে উঠবেন-নামবেন, স্বপ্ন দেখবেন, হতাশা কেটে যাবে, আশা জাগবে বুকের গভীরে। একবারও মনে হবে না- বইটি পড়ে সময় অপচয় করা হলো। সম্পূর্ন বইটি শেষ করার পর আপনার মনে হবে- জীবন আনন্দময়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৭
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×