এখন মানুষ লোক দেখানো কাজ করতে পছন্দ করে।
ধরুন, কেউ বড় রেস্টুরেন্টে গেলো- সাথে সাথে সে অনেক গুলো ছবি তুলবে। তারপর সেই ছবি গুলো ফেসবুকে দিবে। সেই সব ছবিতে নানান মানুষ নানান রকম মন্তব্য করবে। আবার ধরুন কেউ বইমেলায় গেলো, বই কিনুক আর না কিনুক ছবি মাস্ট। অনেক গুলো ছবি তুলবে। ছবি পোষ্ট দিবে। দিতেই হবে। তা না হলে পেটের ভাত হজম হয় না। কোনো লেখককে হাতের কাছে পেলে লেখকের সাথে ছবি তুলবে। ছবির সাথে ক্যাপশন দিনে প্রিয় লেখকের সাথে। অথচ সে হয়তো এই লেখকের কোনো বই'ই পড়ে নি। বর্তমান সমাজটা এখন লোক দেখানো সমাজ হয়ে গেছে। লোকজনকে দেখিয়ে খুব আরাম, খুব শান্তি।
ধরুন কেউ প্লেনে করে যশোর বা কক্সবাজার গেলো।
সে প্লেনে উঠার আগে বেশ কিছু ছবি তুলবে। সামনে সে হাসি মুখে পেছনে প্লেন। এবং সেই সব ছবি অবশ্যই ফেসবুকে দিবে। নামাজ কায্বা হবে কিন্তু তাদের ফেসবুকে ছবি দেওয়া মিস হবে না। অলিখিত একটা নিয়ম হয়েছে- কোথাও গেলে অবশ্যই ফেসবুকে ছবি দিতে হবে। হবেই। লোকজনদের দেখাতে হবে। জানাতে হবে। ইদানিং সুরভি এ কাজটা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সে তিনবার বইমেলায় গিয়েছে। তিন বারই বইমেলা থেকে ফিরে এসে ফেসবুকে ছবি দিয়েছে। আমি বললাম, সব ছবি ফেসবুকে দিতে হবে কেন? সুরভি বলল- আল্লাহ আমি নতুন শাড়ি পড়ে ছবি তুলেছি। বান্ধবীদের দেখাবো না!? আমি নিজেও এরকম করতে শুরু করেছি। এটা ঠিক না। ব্যাক্তিত্ব ধরে রাখতে হয়।
মানুষ খুব বেশি স্যোসাল মিডিয়া কেন্দ্রীক হয়ে গেছে।
খুব বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি সিউর ফেসবুক না থাকলে এক মাসের বইমেলায় পাঁচ হাজার বই বের হতো না। তখন এক হাজার বই বের হতো কিনা সন্দেহ। ফেসবুক না থাকলে মানুষ এত এত ছবি তুলতো না। মানুষের ছেবলামি দেখতে চাইলে ফেসবুকে যেতে হবে। কারো চেয়ে কেউ কম না। ফেসবুক বড় মজা আর নির্লজ্জের দুনিয়া। এই দুনিয়ায় আমি চুপ করে বসে শুধু দেখি। আমার বড় লজ্জা করে, আমার বড় আনন্দও লাগে। আমার খুব রাগও হয়। তখন আমি মনে মনে অকথ্য ভাষায় গালি দেই। ফেসবুকের চেয়ে ব্লগ ভালো। শান্তি আছে, আনন্দ আছে।
আমাদের দেশের মানুষ গুলো বদ।
বিরাট বদ। ৯০ এর পর থেকে এদেশের মানুষ বদ হতে শুরু করে। এই ২০২০ এ এসে তারা তাদের বদগিরির সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। বদ গুলো ঘরে বদ, বাইরে বদ, অফিসে বদ, আড্ডায় বদ, ব্লগ বা ফেসবুকেও বদ। আসলে বদ মানুষ আমৃত্যু বদই থাকে। পারলে মৃত্যুর আগেও তারা বদমাইশি করে যায়। বদলোক্জন ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেয়, ট্রাফিক সিগনাল দিলেও মানে না, যেখানে সেখানে গাড়ি-বাইক পার্কিং করে রাখে, অফিসে কুটনামি করে, ফেসবুকে মহৎ সাজে- আসলে এক একটা অমানুষের বাচ্চা, ব্লগে জ্ঞানী সাজে- আসলে একটা আহাম্মক, বাসে মেয়েদের সাথে ঘষাঘষি করার সুযোগ খুঁজে।
এই সমাজ আর ভালো হবে না।
বরং দিনকে দিন আরো খারাপ হবে। এটা মেনে নিয়েই এই সমাজে বেঁচে থাকতে হবে। জীবন যাপন করতে হবে। এই সমাজ মিথ্যাবাদীর সমাজ। ভন্ডদের সমাজ। চারিদিকে দুষ্টলোকের জয়জয়কার। চারিদিকে মিথ্যা, চারিদিকে ভন্ড, ঠক প্রতারকগুলো ওৎ পেতে থাকে। এই সমাজের মানুষ বিষাক্ত, সাপের চেয়েও আরো বেশি বিষাক্ত। এরা ভালোর ভাব ধরে থাকে। আসলে সুযোগ পেলেই এরা আপনাকে বাঁশ দিবে। কাজেই এই সমাজের মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করবেন না। কারো উপরে আস্থা ভরসা রাখবেন না। তাই নিজেকে যোগ্য করে তুলতে চেষ্টা করুন। যেন কারো কাছে আপনাকে যেতে না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫