দেশের বর্তমান অবস্থা সবাই কম বেশী জানেন।
এখন বাঁচতে চাইলে ঘরের মধ্যে বন্ধী থাকাই ভালো। যদিও আমি বন্ধী থাকার মানুষ না। আমি এক জায়গায় বেশিক্ষন থাকতে পারি না। অস্থির-অস্থির লাগে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি চলে গেলাম বাজারে। না, আমি বাজার করতে যাই নি। বাজারের পরিস্থিতি বুঝতে গিয়েছি। জানতে গিয়েছি। নিজের চোখে দেখতে গিয়েছি। বাজারে গেলেই দেশের পরিস্থিতি খুব সহজে বুঝা যায়। বাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ! গত এক সপ্তাহ ধরেই লক্ষ করছি- করোনা আতংকে লোকজন পাগলের মতোন বাজার করছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। যেমন সকালে পেঁয়াজের দাম ছিলো ৮০ টাকা। সন্ধ্যায় ১২০ টাকা। পেয়াজের দাম কমতে শুরু করেছিলো, করোনা এসে পেয়াজের দাম আবার বাড়িয়ে দিলো। শুধু পেঁয়াজ না সব কিছুর দাম বাড়তি। সরকার কোনো দিনই বাজার নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি। শুধু বড় বড় কথা। সামনে আসছে রোজার মাস।
বাজারে প্রচন্ড ভিড়।
ঈদের সময় যেরকম ভিড় থাকে সেরকম ভিড়। লোকজন ঘরে তেল, চাল, ডাল ইত্যাদি জিনিসপত্র কিনে ঘর ভরছে। নিজের চোখেই সব দেখলাম। যার মাসে পিয়াজ লাগে পাঁচ কেজি সে কিনছে ২৫ কেজি পেঁয়াজ। লোকজন পাগলের মতো কেনাকাটা করছে। বাজারের কুলিরা ভিষন ব্যস্ত। বাজারের বিক্রেতারা মনে মনে হাসছে পাবলিকের কেনাকাটা দেখে। যেন দেশে খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। এক ট্রাফিক পুলিশকে দেখলাম এক বস্তা চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। লোকজন এত কেনাকাটা করছে যে বাজারের প্রতিটা দোকান আমার কাছে খালি খালি লাগছে। বাজারে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা- বন্ধু পাগলের মতো কেনাকাটা করছে। আমাকে বলল, সব কিছু কিনে রাখ। সামনে খারাপ সময় আসছে। দাম হু হু করে বাড়বে। বাজারে লোকজনের কেনাকাটা দেখলেই বুঝা যায়- হাসিনা সরকারের আমলে মানুষের হাতে প্রচুর টাকা। তবে আমার হাতে টাকা নাই কেন? সত্য কথা বলতে আমার ঘরে বাজার সদাই কিচ্ছু নেই। ফ্রিজ খালি। হাত একদম খালি। এমাসে বাজার করবো না।
বাজার থেকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় আজ বেশ উৎসব উৎসব ভাব। সুরভিকে বললাম, ঘটনা কি? সুরভি জানালো- আজ বাসায় মাটির চুলায় রান্না হবে। কামারপাড়া থেকে একটা মাটির চুলা আনা হয়েছে। এই চুলা ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লাকড়ি দিয়ে রান্না হবে। মাটির চুলায় রান্নার পরিকল্পনা
বড় ভাবীর। এসব বিষয়ে উনার লাফালাফির সীমা নাই। ভাবী বলেছেন, সবাইকে চান্দা দিতে হবে। চাদার পরিমান জনপ্রতি ৩০০ টাকা। আমি ভাবীকে বলেছি আমার কাছে কোনো টাকা নেই। ভাবী বললেন, বাসায় একটা পিকনিকের আয়োজন করেছি। সবাই চাঁদা দিয়েছে তুমি দিবে না কেন? না থাকলে আমার কাছ থেকে লোন নাও। আমি ছাদে গেলাম। ধোঁয়া দিয়ে চারপাশ ভরে গেছে। চোখ জ্বলছে। পরী আর আরিশ বেশ মজা পাচ্ছে। আজ প্রচন্ড রোদ। রোদে আমার গা চুলকাচ্ছে। আমি সুরভিকে বলে নিচে নেমে এলাম। আয়োজন খারাপ না। গরুর মাংস, মূরগীর মাংস, বেগুন ভাজা আর খুচিরী।
চিলেকোঠায় খাবারের আয়োজন।
বিশাল পাটি বিছানো হয়েছে। অতি অল্প সময়েই রান্না শেষ হয়েছে। আমাকে খেতে ডাক দেওয়া হলো। আমি বললাম, আমি তো চাঁদা দেই নি। ভাবী বললেন, ঢং কইরো না। চুপ করে বসো। সুরভি খাবার বেড়ে দিলো। বাহ! খাবার বেশ স্বাদ হয়েছে। গরুর মাংস, মূরগীর মাংস দুটাই অতি সুস্বাদু হয়েছে। খিচুড়ি থেকে পোলাউ চালের সুন্দর গন্ধ বের হয়েছে। সালাদ আছে। আমি বেশ আরাম করে খেলাম। খাওয়া শেষে কোক খেলাম। দই খেলাম। আইসক্রিম খেলাম। কোক, আইসক্রীম আর দই এনেছেন বড় ভাইয়ের বন্ধু শামীম ভাই। তিনিই মাটির চুলার ব্যবস্থা করেছেন। এদিকে সকাল থেকে আমি ব্লগে আসি নাই। কে কি লিখেছে তা জানার দরকার। আজ খুব বেশি খেয়ে ফেলেছি। খুব ঘুম পাচ্ছে। চোখ মেলে রাখতে পারছি না। যাই কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিই। সন্ধ্যায় দেখা হবে। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩