বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
ঈদ উৎসবটির সত্যিকার তাৎপর্য বুঝতে হলে, আসুন আমরা দেখি নবীজির (সা) জীবনে ঈদ কেমন ছিল। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। ঈদ হলো সমগ্র মুসলিম জাতির আনন্দ উৎসব। শরীয়ত বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। সবচেয়ে কাছের মানুষ পিতা-মাতা থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করা। এটাই শরীয়তের দাবি। ঈদের দিন গরীব দুঃখীরাও ভালো ভালো খাবার খায়। তারা এক ঈদে পায় যাকাত, ফেতরা আরেক ঈদে পায় গোস্ত। পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন রীতি আদর্শ ফকির মিসকিনদের জন্য এমন ব্যাপকভাবে খাবার দাবারের আয়োজন করতে সক্ষম হয়নি।
আল্লাহ রাববুল আলামিন মুমিন মুসলমানদের প্রতি নিয়ামাত হিসেবে ঈদ দান করেছেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শরীফ হিজরতের পর প্রথম হিজরীতেই শুরু হয় ঈদ। পূর্বেকার নবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না। ঈদের প্রকৃত অর্থ শুধু দামী, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম মুখরোচক খাবার আর নানা ধরণের খেলাধুলা এবং আনন্দ-উৎসবের নাম-ই ঈদ নয়। ধনী গরীবের এক কাতারে নামাজে দাড়ানো শুধু ঈদ নয় বরং তাদের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা ঈদের আসল উদ্দেশ্য। আর এই উদ্যেশ্য সফল হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
ঈদের দিন নবীজি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন।
গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে নবীজি (স.) গুরুত্ব দিতেন। নবীজি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। এবং গোছল শেষ করে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেন। নতুন নয় তবে পরিস্কার জামা পরিধান করতেন। সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। পায়ে হেঁটে ঈদগা ময়দানে যেতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। যেতে যেতে যাদের সাথে দেখা হতো তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যেতেন। কেউ গান গাইলে উনি মন দিয়ে শুনতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। ঈদ উপলক্ষ্যে অসংখ্য মানুষ নবীজির সাথে দেখা করতে আসতেন। তিনি সবার সাথে দেখা করতেন এবং নানান বিষয় নিয়ে তাদের সাথে কথা বলতেন।
একবার ঈদের দিন মহানবী (সা.) রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে কাঁদতে দেখে তার কাছে যান। ছেলেটি বলল, তার মা ও বাবা কেউ বেঁচে নেই। নবীজির খুব খারাপ লাগলো। তার চোখ ভিজে উঠলো। মহানবী (সা.) ছেলেটিকে গৃহে এনে বলেন, আজ থেকে আমি তোমার পিতা আর আয়েশা তোমার মা, ফাতেমা তোমার বোন আর হাসান-হোসাইন তোমার খেলার সাথী। মহানবী (সা.) এতিম ছেলেটিকে সন্তানের মর্যাদা দান করেন। এভাবে মহানবী (সা.) ঈদের দিন অসহায়দের সহায়তা, দান করতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ লোকদের খোজ খবর নিতেন। রাসুল (সা.) এর সাহাবীগণ যখন ঈদের দিনে দেখা করতেন তখন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।
ইসলাম ধর্মে স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ এবং তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে আনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কেননা নারী জাতিকে নরম হৃদয় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তার প্রকৃতিগত স্বভাবের প্রতি কেউ সাড়া দিলে সে সহজেই তার দিকে ঝুকে পড়ে। নবী করীম স্ত্রীদের ভালোবেসে কাছে টানার উত্তম দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তার ঘর ছিল মুহাব্বত, ভালোবাসা, অনুগ্রহ ও পরস্পর শ্রদ্ধাবোধের উজ্জল নমুনা। আয়েশা রা. এর বর্ণনা, (আমার চোয়াল নবীর চোয়ালের সাথে মিশে গেল) দ্বারা স্ত্রীর প্রতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতটুকু আন্তরিকতা ছিল তা প্রকাশ পাচ্ছে, যা ঈদ উপলক্ষে বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রিয় নবীজীকে কাছে পাওয়াই ছিল সাহাবায়ে কেরামের আসল ঈদ।
মদিনা ছিল তখন অনেক কম লোকের বসবাস। অন্য ধর্মের লোকেরাও বাস করতো সেই শহরে। নবীজীর মসজিদে তাঁকে কেন্দ্র করেই জমে উঠত ঈদ। মদিনার অলিতে গলিতে বিরাজ করতো ঈদের আনন্দ। অনেক দূর থেকেও সাহাবারা ছুটে আসতেন নবীজীর পেছনে নামাজ আদায় করতে। নবীজী ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি নজর রাখতেন। ঈদ আমাদের ধর্মীয় উৎসব; আনন্দের মুহূর্ত। ঈদের সূচনা আমাদের প্রিয়নবী সা. এর মাধ্যমে। তাই আমাদের ঈদ হোক নবীজীর মতো। মদিনার সেই ঈদ আবার ফিরে আসুক বাংলার ঘরে ঘরে। ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১১