আমি খুব ফুর্তিবাজ মানুষ।
যতদিন বেঁচে থাকব হাসি আনন্দ নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। আচ্ছা, আমি যদি হুট করে মরে যাই? তখন মানুষ আমার বিচার করবে- লোকটা ভালো ছিল, কেউ বলবে লোকটা বদ ছিল। মৃত্যু ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত এবং রহস্যময়! সব প্রিয় মানুষ ছেড়ে কোথায় চলে যাব কে জানে! মৃত্যু চিন্তা তো খুব স্বাভাবিক চিন্তা। এই চিন্তাই তো মানুষকে জীবনের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। মৃত্যুর পর কবরে মুনকার আর নকীর সাহেব আমার জীবন তচনচ করে দিবেন। নানান রকম প্রশ্ন করবে, উত্তর কি দিতে পারবো? যদি নিউটনের সুত্র গুলো জিজ্ঞেস করে তাহলে সমস্যা নাই। খুব সহজেই বলে দিতে পারবো। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে পারবো। এই সব দিয়ে মুনকার আর নকীর আমাকে আটকাতে পারবে না।
আমার মৃত্যুর পরের অবস্থাটা নিয়ে আমি খুব চিন্তা করি।
আমার মা আর সুরভি খুব কাঁদবে। কিছুদিন পাগলের মতো হয়ে যাবে শোকে। সুরভি আমার মৃত দেহ নিয়ে যেতে দিবে না, খাট ধরে চিৎকার করে কাঁদবে। তবে এই তীব্র শোক এক সময় কেটে যাবে। চোখের পানি মুছে একসময় হেসে উঠবে। এক সময় আমার কথা আর তার মনেই থাকবে না। এমনকি আমার বাবা, মা, ভাই তাদের কাছেও আমার অভাবটা মুছে যাবে। শোক মানুষের দীর্ঘদিন থাকে না। দিন যত যায়, শোক তত হালকা হতে থাকে। একজন শোকার্ত ব্যক্তি হয়তো কল্পনা করতে পারেন, মৃত ব্যক্তির কথা শোনা যায়, উপস্থিতি অনুভব করা যায় কিংবা তাকে দেখা যায়।
মৃত্যুর পর আমি কি ভূত হয়ে যাবো?
নাকি শুধু মাত্র আত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবো। যেভাবেই হোক আমি আমার প্রিয় মানুষদের সাথে থাকতে চাই। প্রিয় মুখ গুলো না দেখে থাকতে পারব না। মুনকার আর নকীরের কাছ থেকে আমার আত্মা কবে ছাড়া পাবে? মৃত্যুর পর কেয়ামত পর্য্যন্ত রূহের অবস্থান- আসমানে না যমীনে? পৃথিবীতে মানুষ পা ফেলেছে ২ লাখ বছর আগে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মৃত্যুর পর মানুষের অস্তিত্ব বিষয়ে কোনো গবেষণা তেমনভাবে হয়নি। সাধারণত হৃৎপিণ্ড কাজ বন্ধ করে দিলেই মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। যারা ধর্ম তৈরি করেছে তারা সবাই একটা বড় ভুল করে গেছে।
মানুষের জীবন আসলে একটা চক্র।
এই চক্ররের শেষ নেই। একটা মানুষ জন্মায়, বড় হয়, লেখাপড়া শিখে, রোজগার করে, বিয়ে করে, সন্তান হয়, টাকা জমায়, বাড়ি করে, তারপর বুড়ো হয়ে একদিন মরে যায়। এই সামান্য কর্মকান্ডের জন্য আমাদের জন্মানোর খুব দরকার ছিল না। জন্মালাম কেন? কে আমাকে বুঝিয়ে দিবে অর্থহীন এই জীবনের প্রকৃত মানে? দার্শনিক এরিস্টটোলের কাছে জীবনের মানে ছিল সুখী হওয়া। আলভার্ট কেমুসের কাছে জীবনের একমাত্র মানে ছিল- জীবনের মানে না খোঁজা। পৃথিবীতে মানব জাতিকে পাঠানোর নির্দিষ্ট কারন কি? আমাদের সবার চোখেই বড় স্বপ্ন থাকে। বাস্তবতা একসময় হানা দেয়, যা আমরা হতে চাই তা আর হয়ে ওঠা হয় না।
I’m asking why
Nobody gives an answer
I’m just asking why
Just tell me why
Why it has to be like this
---—Enigma’s song ‘Why’