তাবিজ ভাওতা বাজি ছাড়া আর কিছু না।
'একবার নবীজির খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। নবীজি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয় জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? পেয়ারা নবী বললেনঃ তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, 'যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।'
এমনকী কুরআনের আয়াত লিখা তাবিজ হলেও।
সমাজে ধর্মব্যবসায়ীদের প্রচারণায় প্রচুর জাল, বানোয়াট, কাল্পনিক কিচ্ছা- হাদিস হিসেবে প্রচার পেয়ে গেছে। এগুলো সমাজে নানাবিধ কুসংস্কারকে ধরে রাখে। তাবিজ-ব্যবসা, পীর-ব্যবসা, মাজার-ব্যবসা, পানি-পড়া ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায়ীরা ধর্মকে ব্যবহার করে। অনেকসময় বক্তারা ওয়ায-মাহফিলে মুখরোচক কাহিনী বানিয়ে সেগুলোকে হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেয়। এভাবেই সমাজে জাল হাদিসের প্রসার ঘটে। আমাদের প্রিয় নবীকে একবার যাদু করা হয়েছিল আর তখন নবীজি সুরা নাস, ফালাক এবং ইখলাস এই তিনটি সূরার মাধ্যমেই আল্লাহর রহমতে যাদুটোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। নবীজি যাদু করা চিরুনিটা সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের মাঝে 'যাদু টোনা' জিনিসটার ইসলামী রূপ দেওয়া হয়েছে। আর নাম দেওয়া হয়েছে 'কবিরাজি'। অর্থাৎ এই অঞ্চলের সাধারণ মুসলিমদের ধারণা, বিভিন্ন পীর-ফকির, বাবা, ওঝা, কবিরাজ ইত্যাদি লোকেরা অনেক বড় সাধক, অনেক বড় আল্লাহওয়ালা, তাদের কাছে জ্বীন আছে। সুতরাং তাদের কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে তার সমাধান তারা দিয়ে দিতে পারে।
ইসলাম ধর্মে তদবির বলতে কিছু নেই। বরং আল্লাহ ব্যতিত কারো নিকট কিছু প্রার্থনা করা হারাম বা নিষিদ্ধ। যেমন, আপনার সন্তান হয় না। আপনি মাজারে গেলেন, পীরের নিকট সন্তান চাইলেন, তদবির করলেন, তাবিজ ঝুলালেন গলায়, বা কোমরে। এগুলো কুশিক্ষার ফল।
ইসলাম ধর্ম হচ্ছে বিজ্ঞানবান্ধব ধর্ম।
এই ধর্মে আপনি শুধু আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাইবেন। বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুমোদিত এবং উৎসাহিত করা আছে এই ধর্মে। হোমিওপ্যাথির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও এটা কেন চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছে এই আধুনিক যুগেও? কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? কারন, অশিক্ষা। যে কারনে জ্যোতিষী, তাবিজ, পাথর, রাস্তার পাশের জোকের তেল টিকে আছে, এভাবে হোমিওপ্যাথি টিকে আছে।
গুলিস্তান, কাওরানবাজার, মহাখালি, সায়দাবাদ ইত্যাদি এলাকায় গেলে দেখা যায়- একজন হকার, কোনো একটি গাছের শিকড় হাতে নিয়ে, চিত্কার করে বলছেন, 'বশীকরণ, বশীকরণ, মাইয়া পাগল করনের তাবিজ, এই গাছের শিকড়। তামা বা লোহার তাবিজে ঢুকাইয়া, শনি, মঙ্গল বার গলায় কালা সুতা দিয়া পড়লে, যে মাইয়াডারে ভালা লাগে, সেই মাইয়া আইসা, আপনের বুকে ঝাঁপ দিয়া পড়বো। কার কার লাগে, হাত তুলেন। দাম? আইজগার লাইগ্যা মাত্র পঞ্চাশ টাকা। পঞ্চাশ টাকা। পঞ্চাশ টাকা।
তাবিজ,কবচ, হারবাল সবই বহাল তবিয়তে চলছে।
বিপদে পড়লে মানুষ বড়ো অসহায় হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই যে যা বলে বিশ্বাস করে নেয়। এই আধুনিক সমাজেও বহু মানুষের গলায়, কোমরে তাবিজ ঝুলতে দেখি। হাত দেখায়। ভাগ্য গননা করায়। ডাক্তার না দেখিয়ে ফুটপাত থেকে যৌন রোগের ওষুধ কিনে। ফুটপাত থেকে বাতের ব্যথার জন্য পাগলা মলম কিনে। রাস্তায় কোনো ফকির বাবা দেখলে দোয়া চায়। রোগ মুক্তির জন্য মূরগী, ছাগল মানত করে। মাজারে গিয়ে মাথা ঠুকে। ভয় পেলে বুকে থু থু দেয়। কাজ করবে না, পরিশ্রম করবে না শুধু জিকির করবে, জিকির শেষে মোনাজত করবে। উরশ পালন করবে। খিচুরী রান্না করবে। পেট ভরে খিচুরী খেয়ে মাটির ঘরে লাফিয়ে লাফিয়ে আল্লাহ আল্লাহ জিকির তুলে মাটি আধা হাত ডাবিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৮