somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

'দত্তা' উপন্যাস রিভিউ

১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনার প্রিয় বই কি?
এই প্রশ্নটা কেউ করলে অনেকেই বিপদে পড়ে যান। কারন অনেক গুলো তার প্রিয় বই আছে। কোনটা রেখে কোনটার নাম বলবে! ঠিক সেভাবেই আমার অনেক গুলো প্রিয় বই আছে। কিন্তু শুধু একটা প্রিয় বইয়ের নাম বলতে বলা হলে, আমি বলব- দত্তা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই। অসাধারণ একটা বই। বইটা যে আমি কতবার পরেছি তার হিসাব নেই। ১৯১৮ সালে 'দত্তা' রচনা করা হয়। আমি হলাম উপন্যাস প্রেমী। যেকোনো ধরনের উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। যারা এখনও 'দত্তা' পড়েন নি, তারা বিরাট ভুল করেছেন। বইটা পড়ার পর আপনার খুব বেশি আফসোস হবে। কেন বইটা আগে পড়েন নি বলে। তবে আগেই বলে রাখি এই উপন্যাস আপনাকে খুব যন্ত্রনা দিবে। গল্পের ট্র্যাজেডি সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রাচীন গ্রীক দার্শনীক অ্যারিষ্টটল বলেছিলেন- সাহিত্যে চরিত্র সৃষ্টি অপেক্ষা প্লটই মুখ্য।

'দত্তা' উপন্যাশের বিজয়াকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।
যদিও এই উপন্যাসের নায়ক নরেন্দ্র। নরেন এবং বিজয়া প্রধান দুই চরিত্র। নরেন বিলেত ফেরত ডাক্তার। 'দত্তা' মানে কি জানেন তো? দত্তা মানে- ''যে মন্দিরে ভক্তিভাবের কারনে স্বেচ্ছায় দেবতার সেবায় নিজেকে অর্পণ করতো তাদের দত্তা বলা হতো। এদেরকে দেবীর মর্যাদা দেয়া হতো''। লেখক শরৎচন্দ্রের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয়, যখন আমি দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ি। স্কুলের পাঠ্যবইতে 'মহেশ' গল্প পড়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শরতবাবু পরিচ্ছন্ন রুচি, সাবলীল ভাষা দিয়ে লেখক চিরকাল পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। লেখক মানুষের হৃদয়ের সূক্ষ্ম অনুভূতি, বিভিন্ন সম্পর্কের স্পর্শকাতর দিকসহ সবকিছু এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যেটা একদম হৃদয় স্পর্শ করে যেতে সক্ষম। তাই হৃদয় যেন কেমন করে ওঠে!

নিজের ও পরিবারের কথা বলতে গিয়ে শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন-
''আমার শৈশব ও যৌবন দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থের অভাবেই আমার শিক্ষা লাভের সৌভাগ্য ঘটেনি'। তৎকালীন সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি, কুসংস্কার, ভন্ডামি ইত্যাদিকে তিনি তাঁর সাহিত্যে চিত্রিত করেছেন। সহজ সরল ভাষায় তিনি বিভিন্ন চরিত্রের দুঃখ-বেদনা, অভাব-অভিযোগ, মননশীলতার জটিল আবর্তে লেখক খুব সার্থকভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরলোকগমন করেন। তাঁর রচনার আজও বর্তমান সমাজে প্রাসঙ্গিক। অবহেলিত নারী সমাজের প্রতি তিনি মমত্ববোধ এবং সহানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। সমাজে অবহেলিত দারিদ্র কিছু না পাওয়া মানুষদের হয়ে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিজের লেখাতে।

উপন্যাসের কাহিনী এই রকমঃ
জগদীশ, বনমালী আর রাসবিহারী তিনবন্ধু। বনমালী বাবু গ্রামের বিশাল জমিদার। বনমালী বাবুর একমাত্র কন্যা 'বিজয়া'। বাপ মেয়েকে অগাধ স্বাধীতা দিয়ে বড় করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর শহর থেকে গ্রামে আসে বিজয়া, এখানে তার বাবার বাল্যবন্ধু রাসবিহারী বাবু তার অনুচ্চারিত অভিভাবক এবং তার ছেলে বিলাসবিহারীর সাথে বিজয়ার বিয়ে প্রায় ঠিক। এমন সময় নরেনের সাথে আলাপ হয় বিজয়ার। নরেন আলাভোলা ছেলে, কিন্তু স্টুপিড নয়; বিজয়া যে তাকে পছন্দ করে সেটা বিজয়া কারণে অকারণে তাকে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু হয় নরেন বোঝে না, নয়তো উল্টা বোঝে।
বিজয়ার বাবার কাছে নরেনের বাবার অনেক ঋণ ছিলো। মৃত্যুর আগে সেই ঋণ শোধ করতে পারেন নি নরেনের বাবা। ফলে বসত ভিটে ছেড়ে দিতে হয় নরেনকে। সামগ্রিক বিচারে দত্তা একটি রোমান্টিক উপন্যাস। দত্তা উপন্যাসটি গ্রামীণ পরিবেশের কুটকৌশল, ষড়যন্ত্র এবং তার মধ্যেই নরেন ও বিজয়ার ভালোবাসা, অভিমান এবং শেষে নরেন এবং বিজয়ার বিবাহে উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।

'দত্তা' উপন্যাস নিয়ে সিনেমা হবে।
এ বছরের শুরুতে কোলকাতায় 'দত্তা' নিয়ে সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিলো। মনে হয় এখন করোনার কারনে সিনেমার কাজ বন্ধ আছে। পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী এবং এটাই তার প্রথম ছবি। ছবিতে বিজয়ার ভূমিকায় অভিনয় করবেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আর নরেনের ভূমিকায় অভিনয় করবেন জয় সেনগুপ্ত। এর আগেও ১৯৭৬ সালে পরিচালক অজয় কর, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের লেখা 'দত্তা' গল্প অবলম্বনে সিনেমা তৈরি করেছিলেন।

'দত্তা' উপন্যাস থেকে কয়েক লাইনঃ
বেলা বাড়িতে লাগিল। কিন্তু যখনই মনে পড়ে সমস্ত কাজকর্মের মধ্যে কোথায় তাহার একটি চোখ এবং একটি কান সারাদিন পড়িয়া আছে, তখন নিজের কাছেই তাহার ভারী লজ্জা বোধ হয়। কিন্তু এ যে কিছুই নয়, এ যে শুধু সেই যন্ত্রটা দেখিবার কৌতূহল, একবার সেটা দেখা হইয়া গেলেই সমস্ত আগ্রহের নিবৃত্তি হইবে, আজ না হয় ত কাল হইবে— এমন করিয়াও আপনাকে আপনি অনেকবার বুঝাইল, কিন্তু কোন কাজেই লাগিল না; বরঞ্চ, বেলার সঙ্গে সঙ্গে উৎকণ্ঠা যেন রহিয়া রহিয়া আশঙ্কায় আত্মপ্রকাশ করিতে লাগিল।
পৌষের মধ্যাহ্নসূর্য ক্রমশঃ এক পাশে হেলিয়া পড়িল; আলোকের চেহারায় দিনান্তের সূচনা দেখিয়া বিজয়ার বুক দমিয়া গেল। কাল যে লোক চিরদিনের মত দেশ ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেছে, আজ সে যদি এতদূরে আসিতে এতখানি সময় নষ্ট করিতে না পারে তাহাতে আশ্চর্য হইবার কি আছে! তাহার শেষ সম্বলটুকু যদি অপর কাহাকেও বেশি দামে বিক্রয় করিয়া চলিয়া গিয়া থাকে, তাহাকেই বা কি দোষ দিবে কে? তাহাদের শেষ কথাবার্তাগুলি সে বার বার তোলাপাড়া করিয়া নিরতিশয় অনুশোচনার সহিত মনে করিতে লাগিল যে মনের মধ্যে তাহার যাহাই থাক, মুখে সে এ সম্বন্ধে আগ্রহাতিশয্য একেবারেই প্রকাশ করে নাই।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:১০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×