শিখার বিয়ে হয়েছে মাত্র একমাস।
সে তার স্বামী সুমনকে কাছে আসতে দেয় না। তার ধারনা তার স্বামী তাকে মেরে ফেলবে। রাতে শিখা ভয়ে অন্য রুমে ঘুমায়। গত একমাস এভাবেই কেটেছে। সুমন শিখাক্বে বুঝাতে সব রকম চেষ্টা করেছে। এবং ব্যর্থ হয়েছে। কতদিন এরকম চলবে সুমন বুঝতে পারছে না। রাতে বাসায় ফেরার পথে স্ত্রীর জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে আসে সুমন। নিজে পছন্দ করে শাড়ি নিয়ে আসে কিন্তু কিছুতেই শিখা স্বামীকে আপন ভাবতে পারে না। শিখা সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে এডাল্ট সিনেমা দেখে। সুমন বলেছে, শিখা চলো তোমাকে ডাক্তার দেখাই। শিখা বলেছে, আমার তো কোনো সমস্যা নাই। ডাক্তারের কাছে যাব কেন? বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী কত আদর সোহাগ করে, কিন্তু তুমি তো আমাকে কাছেই আসতে দাও না। ডাক্তার তোমার সমস্যা দূর করে দিবেন। শিখা বলেছে, ডাক্তার তুমি দেখাও। সমস্যা আছে তোমার।
একদি সুমন শিখার উপর জোর করে।
শিখা তার স্ত্রী। স্ত্রীর উপর তার সম্পূর্ন অধিকার আছে। দুজনের ঝগড়াঝাঁটি আর চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে আশে পাশের বাড়িঘর থেকে লোকজন উঁকি দিতে শুরু করলো। স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছে এটা যেন অনেক আনন্দের বিষয়। আড়িপেতে শুনতে হবে, দেখতে হবে। শিখা একটা পিতলের ফুলদানী সুমনের মুখের উপর উড়িয়ে মারলো। ভাগ্যস সুমন যথাসময়ে লাফ দিতে পেরেছিলো। তা না হলে আজ সুমনের খবর ছিলো। সুমন রেগে গিয়ে শিখার গালে ধাম করে একটা থাপ্পড় দিলো। শিখা ছিটকে পড়লো এবং তার ঠোঁট অনেকখানি কেটে গেলো। গল গল করে রক্ত পড়তে লাগলো। সমুনের রাগ তবুও কমেনি। সে পিতলের ফুলদানী দিয়ে শিখার মাথায় ধাম করে একটা বাড়ি দিয়ে দিলো। শিখা মাথায় হাত দিয়ে মাতিতে পড়ে গেলো। বেশ জখম হয়েছে শিখার। শিখা বলল, এইবার তোর খবর আছে। এইবার তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না হারামী। আমি বুঝে গেছি তুই আমাকে মারতে চাস। গতকাল রাতে তুই ঘুমের মধ্যে আমার মুখে বালিশ চেপে ধরেছিলি।
শিখা সুমনের এই আচরনে প্রচন্ড রেগে গেছে।
সে হাসপাতালে না গিয়ে, সে গেলো থানায়। থানার পুলিশ শিখাকে হাসপাতালে পাঠালো এবং সুমনকে গ্রেফতার করলো। শিখা হাসপাতাল থেকে বাসায় এলো। তার খুব ভালো লাগছে। খালি বাসায় তাকে কেউ এখন বিরক্ত করতে পারবে না। আরাম করে থাকা যাবে। সুমন থানায় মরুক। তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। শিখা চেষ্টা করবে সুমনের যেন কমপক্ষে সাত বছরের জেল হয়। সুমনের কারাগারে গেলেই শিখা তাকে তাকাল দিবে। এবং বাকিটা জীবনটা শিখা আনন্দ নিয়ে কাটাবে। যা খুশি তাই করবে। জীবনে আনন্দের দরকার আছে। ছোট্র একটা জীবন মানুষের। বিয়ের পর থেকেই শিখা একটা রাতেও আরাম করে ঘুমাতে পারে নি। মনে হতো ঘুমালেই বুঝি সুমন এসে গলা টিপে অথবা বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে। বিয়ের পর এরকম স্বপ্ন শিখা প্রতিরাতেই দেখেছে। স্বপ্নে যে তাকে মারতে আসে সে আর কেউ নয় সুমন। বিয়ে আগে এই স্বপ্ন গুলো দেখলে সে আর সুমনকে বিয়ে করতো না।
মামলা কোর্টে উঠেছে।
সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মারাত্মক। সে তার স্ত্রীকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। স্ত্রী কোনো মতে বেঁচে গেছে। তবে মারাত্মক আহত হয়েছে। কপালে চারটা সেলাই পড়েছে। সুমনের উকিল মনে হয় সুমনকে বাঁচাতে পারবে না। এদিকে শিখার উকিল আদালতকে বলেছে, আমার মক্কেল আজ কবরে থাকতো। ভাগ্যজোড়ে বেঁচে গেছে গ্রামের এই সহজ সরল মেয়েটি। সুমন মস্তিস্ক বিকৃত মানুষ। সে শিখাকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতো প্রতিদিন। বালিশ চেপেও মারতে চেয়েছিলো। রাখে আল্লাহ মারে কে! শিখা বারবার বেঁচে গেছে। বুঝা যাচ্ছে, আদালত এবং পুলিশ শিখার পক্ষে। সুমনের উকিল আদালতকে বলেছে, সুমন অতি সাধারণ মানুষ। ভালো মানুষ। চাকরি করছে। সে অনেক ভালো মানুষ। তার কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। শিখা সুমনকে পিতলের ফুলদানী উড়িয়ে মেরেছে। সুমনকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে শিখা সামান্য আহত হয়েছে। শিখা ভালো নারী নয়। তার অনেক ছেলে বন্ধু আছে। শিখা সারাদিন এডাল্ট মুভি দেখে। সুমন অফিসে চলে গেলেই শিখার ছেলে বন্ধুরা বাসায় আসে।
আদালত মামলা রায়েরর ঘোষনা করবে আগামী মাসে।
সুমন আছে কারাগারে। শিখা আছে বাসায়। সে আগের মতোই সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকে। এডাল্ট মুভি দেখে। তার শরীর জাগ্রত হলে সে তার ছেলে বন্ধুদের ফোন করে ডেকে আনে। ইচ্ছে মতো শরীরের আনন্দ উপভোগ করে। একদিন সুমনের উকিল শিখার সাথে দেখা করতে আসে বাসায়। শিখা তাকে বলেছে, আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আপনি আমার উকিল নন। উকিল বলে প্লীজ ম্যাডাম। আপনি আমার কথা শুনুন। আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন। শিখা বলে, সুমন অতি মন্দ লোক। ভয়ঙ্কর। সে ভালো মানুষের রুপ ধরে থাকে। সে আমাকে স্বামী স্ত্রীর সহবাসের নামে শারীরিক অত্যচার করতে চায়। এটা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। উকিল বলে, আপনার বিরুদ্ধে তো অভিযোগ কম না। শিখা বলে, আমার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। সুমনের শাস্তিই হওয়া উচিত। সে দুষ্টলোক। অতি দুষ্টলোক। উকিল বলল, দুষ্টলোক তো ম্যাডাম আপনিও।
(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল।)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৭