১। স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছে।
সব স্বামী স্ত্রী'ই ঝগড়া করে। কিন্তু কিছু কিছু ঝগড়া হয় অতি কুৎসিত। শেষমেশ ঝগড়া গালাগালি এবং মারামারিতে শেষ হয়। সেদিন এরকম একটা ঝগড়া আমার চোখের সামনেই হলো। তুমুল ঝগড়া হচ্ছে। ছোট ছোট দুই বাচ্চা বাপ মায়ের ঝগড়া দেখে ভয় পাচ্ছে। তারা কাঁদছে। বাপ মা দুজনেই শিক্ষিত। রুচিশীল। স্বামী অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। স্ত্রীও গালি দিচ্ছে। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙছে। দুই বাচ্চা ভয়ে কাঁপছে আর চিৎকার করে কাঁদছে। সন্তানের সবচেয়ে বড় শাস্তি, বাপ মায়ের ঝগড়া দেখে বড় হওয়া। ওরা কিছু বলে না কিন্তু ওদের জীবনটা ভেতরে ভেতরে বড্ড এলোমেলো হয়ে যায়। ঘটনা চক্রে এই ঝগড়ার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি কাউকেই থামাতে পারছিলাম না। শেষে বাচ্চা দুটোকে নিয়ে আমি বাইরে চলে আসি। চলে আসার সময় দেখলাম, শ্বাশুড়ী চলে এসেছেন। তিনি তার ছেলের বৌ এর চুল ধরে টেনে হিচড়ে বাসা থেকে বের করে দেবার চেষ্টা করছেন। ঝগড়ার সময় একজন সুন্দর চেহারার মানুষকেও দেখতে কুৎসিত লাগে।
২। এই ঝগড়া আমার চোখের সামনে।
স্বামী তার স্ত্রীকে মাগী ছাগী ইত্যাদি বলে ভয়ঙ্কর সব গালি দিচ্ছে। স্বামী লাঠি খুজছে। সে তার স্ত্রীকে মারবে। স্ত্রী অসহায়ের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। তার দুই বছরের শিশু বাবা মার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে। স্বামী বলছে, তোর বাপ খারাপ। তোর মা আরো বেশি খারাপ। স্ত্রী বলছে, খবরদার আমার বাপ মাকে কিছু বলবে না। খারাপ হলো তোমার বাপ মা। আমার ইচ্ছা করে তাদের মুখে গু উড়িয়ে মারি। স্বামী গিয়ে স্ত্রীর মুখে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো। ঠোঁট আর গাল কেটে গেলো। রক্ত পড়ছে। আমি ভাবছি, এই স্বামী নিশ্চয়ই তার স্ত্রীকে ভালোবেসে গালে চুমু খেয়েছেন। যেই গালে চুমু খেয়েছেন সেই গালে থাপ্পড়! আমি ঝগড়ার মাঝখানে থাকলেও আমি কাউকে থামাতে পারছিলাম না। আশেপাশের বাড়িঘর থেকে অনেক কৌতূহলী চোখ উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। কেউ ঝগড়া থামাবার জন্য এগিয়ে আসছে না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমি ঝগড়া খুব অপছদ করি।
৩। 'ছাড়' দেওয়ার মানসিকতা থাকলে ঝগড়া হয় না।
সংসারে শান্তির জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনকেই 'ছাড়' দিতে হয়। কথায় আছে, 'কিছুটা আমি ছাড়ি, কিছুটা তুমি। এভাবেই মিলেমিশে সুখ ডেকে আনি'। ধনীর ঘর থেকে বস্তির ঘর। চাকরিজীবির ঘর থেকে সবজি বিক্রেতার ঘর। সব ঘরেই ঝগড়া হয়। ঝগড়ার শেষ পরিনতি ছাড়াছাড়ি। মানে তালাক। কষ্ট হয় সন্তানের। সন্তান হতাশা নিয়ে বড় হয়। সেদিন দেখলাম, দুজন বয়স্ক স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছেন। অথচ তাদের বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে। এমনকি ছেলে মেয়েদের বিয়েও হয়ে গেছে। তাদের ছেলে মেয়েও আছে। ঝগড়ার সময় বয়স্ক স্ত্রী বলছে, আমি দেখে শুধু তোমার সংসার করে গেলাম। স্বামী বলছে, এখানে তোমার কোনো বাহাদূরী নেই। কারন আমি তোমাকে এতটা বছর সহ্য করে গেছি। স্ত্রী বলছে, তুই যে কত বড় হারামী আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে! আমার সমস্ত গহনা তুই বিক্রি করেসিছ। সেই টাকা অন্য মেয়েদের পেছনে খরচ করতে লজ্জা লাগে নাই। এক কথায়, দুই কথায় তুলুম লাগালাগি। এই ঝগড়া আমার নিজের চোখে দেখা। কেউ ঝগড়া করলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রেশার বেড়ে যায়।
৪। এই ঝগড়া আমাদের পাশের বাসায়।
আমি সিগারেট খাওয়ার জন্য ব্যলকনিতে এসে দাড়িয়েছি। ঘরে তো আরাম করে শুয়ে বসে সিগারেট খাওয়ার দিন শেষ। স্ত্রী বলছে, আমার বাপ মা গরীব হলেও খাট আলমারি, টিভি, ফ্রিজ সবই দিয়েছে। সেসব নিতে লজ্জা করে নাই? স্বামী বলছে, আমি তো কিচ্ছু চাই নাই। তারা নিজ থেকেই দিয়েছে। না, তারা ভালোবেসে দেয় নি। তোমাদের কথায় আমার বাপ মা বুঝতে পেরেছে তোমরা লোভী। তাই আমার দরিদ্র বাপ মা ধারধেনা করে এসব দিয়েছে। স্বামী গেলো রেগে। কি আমরা লোভী? খানকি মাগী আজকে তোকে জন্মের শিক্ষা দিবো। বলেই, ঘর থেকে তাদের তিন বছরের বাচ্চাকে বের করে দিলো। দরজা লাগিয়ে স্ত্রীকে মারছে। খুব মারছে। আমি ব্যলকনি থেকেই তাদের বলছি, প্লীজ থামুন। ঝগড়া ভালো না। আমার কথা কেউ শুনছে না। স্ত্রীকে মেরে আধামরা করে ফেলছে স্বামী। স্ত্রী লজ্জায় অপমানে গলায় ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস নিতে গেলো। এমন সময় শ্বাশুড়ি এলো। শ্বাশুরি এসে বলল, তুহিনের মা তোর মরতে ইচ্ছা বাপের বাড়ি গিয়া মর। তুই এখানে মরে তো আমাদের বিপদে ফেলবি। শেষে থানা পুলিশ নিয়ে টানাটানি। কোন অলুক্ষনে যে ছেলেরে তোর মতো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম! আহারে আমার ছেলের জীবন আমিই নষ্ট করে দিলাম!
৫। সব স্বামী স্ত্রী'ই হয়তো ঝগড়া করে।
আমি সুরভির সাথে কখনও ঝগড়া করি নি। সুরভিও আমার সাথে কখনও ঝগড়া করে নি। ঝগড়া বিহীন ৬/৭ বছর পার করে দিলাম। আমার মা একদিন বলল, তোদের কোনোদিন ঝগড়া করতে শুনলাম না। তখন আমি মনে মনে বলি- মা বিয়ের সময় মনে মনে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি আমার সংসার জীবনে কখনও ঝগড়া করবো না। ছোটবেলা থেকেই তোমাদের ঝগড়া দেখে দেখে বড় হয়েছি। তাই ঝগড়ার প্রতি আমার ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঠিক করেছি আমি কখনও ঝগড়া করবো না।
আমার ঝগড়া না করার পেছনে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা হুমায়ূন আহমেদের। ধানমন্ডি গিয়েছিলাম। তখন হুমায়ূন আহমেদের সাথে দেখা। তিনি একটা নাটকের শূটিং করছিলেন। তিনি আমাকে ইশারা দিলেন। আমি তার পাশে বসলাম। তিনি বললে, বিয়ে করেছো? আমি বললাম, না। শোনো আমি তোমাকে বলে রাখি। সংসার জীবনে শান্তি চাইলে শুধু 'ছাড়' দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কিছুটা তুমি ছাড় দিবে। কিছুটা তোমারে স্ত্রী ছাড় দিবে। তাহলে দেখবে সংসারে অশান্তি হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৩