গতকাল রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি।
সুন্দর স্বপ্ন। স্বপ্নে দেখি আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। স্বপ্নে সব কিছুই সম্ভব। অবশ্য স্বপ্ন আমি ইচ্ছা করে দেখি নাই। কে যেন দেখায়। তাকে দেখা যায়। ছোয়া যায় না। যাই হোক, স্বপ্ন দেখে খুব ভালো লেগেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নিজেকে বেশ সুখী এবং খুশি মানুষ বলে মনে হচ্ছিলো। সুরভি বলল, ফ্রিজ খালি। বাজারে যাও তাড়াতাড়ি। আমি বললাম, দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি বাজারে যাব?! এইসব সস্তা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকলে দেশের কাজ কখন করবো? সুরভি বলল, কি বললে? আমি বললাম, পেস্ট, ব্রাশ দাও। তার আগে এক কাপ চা দাও। তখন ভাবলাম, আমি যদি প্রধানন্ত্রী হই তাহলে দেশের জন্য কি কি কাজ করবো? সেই ভাবনা থেকেই এই পোষ্টের জন্ম। নিজেকে বড় কিছু ভাবতে ভালো লাগে। তুচ্ছ মানুষের শান্তি নাই। তুচ্ছরা চারিদিক থেকেই অবহেলিত। যদিও সমাজে তুচ্ছ মানুষের সংখ্যাই বেশী।
আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবার আগে-
রাষ্ট্রপতি পদটা বাতিল ঘোষনা করবো। রাষ্ট্রপতির কাজ কি? বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে যাওয়া। ফাঁসির আসামীকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া? চিকিৎসার জন্য দল বেঁধে বিদেশ যাওয়া? দরকার নেই আমার দেশে এমন রাষ্ট্রপতির। বাতিল। তারপর আমি ধরবো, সমস্ত দূর্নীতিবাজদের। একজন চোর বা ডাকাত ধরার চেয়ে একজন দূর্নীতিবাজদের ধরা সবচেয়ে সহজ। মানুষ দুটা জিনিস লুকিয়ে রাখতে পারে না। এক, টাকা আর দুই, প্রেম ভালোবাসা। দূর্নীতিবাজরা সবার আগে টিভি চ্যানেল, পত্রপত্রিকা আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে। এবং প্রাডো গাড়ি কিনে। নিজ গ্রামে হেলিকাপ্টার দিয়ে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত দূর্নীতিবাজদের কারাগারে পাঠাবো এবং তাদের সমস্ত অবৈধ টাকা এবং সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে নিবো। এই দূর্নীতিবাজরা দেশটাকে শেষ করে দিলো। এরা দেশের শত্রু। এত এত টাকা দূর্নীতি করে যে, একজন মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচতে এত টাকা লাগে না।
গত বারো বছরে শিক্ষাখাত প্রায় শুয়ে পড়েছে।
আসলে দুই হাজার সালের পর থেকেই লেখাপড়ার মান কমতে শুরু করেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এই প্রশ্নপত্র ফাঁস জেনারেশন দেশের মেরুদন্ডটাই নরবড়ে করে দিয়েছে। একটা অনার্স পাশ ছেলে একটা দরখাস্ত লিখতে গিয়ে তেরোটা বানান ভুল করে। সাংবাদিককে বলে সামবাদিক। দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবো। দরকার হলে বিদেশ থেকে বড় বড় শিক্ষাবিদ নিয়ে আসবো। প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি লেভেল পর্যন্ত প্রতিটা শিক্ষককে ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। অযোগ্য শিক্ষকদের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবো। উন্নত শিক্ষা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এরপর চিকিৎসাখাত ধরবো। এইখাতের কংকালসার অবস্থা হয়ে গেছে। দেশের মানুষ খাদ্য, শিক্ষা আর সুচিকিতসা না পেলে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কি করে? দেশের কোনো মন্ত্রী, এমপি, সচিব কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে পারবে না। বাঁচতে চাইলে নিজ দেশের চিকিৎসাখাত উন্নত করো। যেন দেশের প্রতিটা মানুষ ভাল চিকিৎসা পায়। দেশের চিকিৎসাখাত কোন পর্যায়ে আছে একটা উদাহরন দেই- নায়ক ফারুক অসুস্থ। তার অসুখটা কি দেশের কোনো চিকিৎসক ধরতে পারলো না। শেষে সে বিদেশ গেলো। বিদেশ যাওয়ার পর জানতে পারলো- তার যক্ষা হয়েছে। সরকারী চাকরি মানেই যেন দূর্নীতি। এই ট্রেন্ড পুরোপুরি ভেঙ্গে দেব। এমন নিয়ম করবো- কোনো শালার পুত একটা টাকা ঘুষ খেতে পারবে না। বর্তমানে যারা 'নিরাপদ খাদ্য' চাকরি করে এদের কান ধরে বের করে দিবো। এরা সম্পূর্ন অযোগ্য। এরা নিজেদের জমিদার মনে করে। ঘুষ খায়, মাস শেষে বেতন নেয় অথচ কোনো কাজ করে না। মন্ত্রী এমপি, সচিব, জনপ্রতিনিধি আর সরকারী কর্মচারীরা দেশটাকে নিজের বাপ দাদার সম্পত্তি মনে করে। আরে ব্যাটা তোরা রাষ্টের আর জনগনের চাকর।
যারা রাজনীতি করবে তাদের কোনো সম্পত্তি থাকতে পারবে না।
তাদের সব সম্পত্তি সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে রাজনীতিতে নামতে হবে। যেহেতু তারা দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করবেন সেহেতু তাদের কোনো সম্পত্তি থাকতে পারবে না। যে টাকা সেলারি পাবে সেই টাকা দিয়ে তাদের চলতে হবে। পরের ধনে পোদ্দারি চলবে না। জমিদারগিরি চলবে না। যদি রাজী থাকো তাহলে এবার করো রাজনীতি। দেখি, তোমার দেশের প্রতি কত ভালোবাসা? অযোগ্য মন্ত্রী, এমপি আর সচিবদের কান ধরে বের করে দেওয়া হবে। ইনু, মিনু, হানিফ, হাছান মাহমুদ, শাহজাহান সিরাজ এই টাইপ লোক রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এদের আগম্বড় বেশি। কিন্তু ভালো কাজ নেই। এক কথায় যারা দেশের জন্য কোনো উন্নয়ন করেনি তাদের কান ধরে বের করে দেওয়া হবে। মুখের কথায় চিড়া ভিজে না। দরকার কাজ। ভালো ভালো কাজ। শুধু টিভি চ্যানেলের সামনে বড় বড় কথা। যারা আমাকে, মানে প্রধানমন্ত্রীকে লোক দেখানো খুশি করতে চাইবে তারা সবার আগে বাদ যাবে। ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে খবরের কাগজে জন্মদিনের শুভেচ্ছা না জানিয়ে সেই টাকা দিয়ে তো চারজন দরিদ্র লোককে ব্যবসা ধরিয়ে দেওয়া যেত। তেলবাজি সম্পূর্ন বাদ দিতে হবে। এই ধরনের চাটুকার রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য কি কি কাজ করেছে, সেটা বলে না। দেশ নিয়ে তাদের চিন্তার কথা বলে না। শুধু মাইক হাতে পেলেই- প্রধানমন্ত্রীর গুনগান। এইসব নির্বোধদের দিয়ে দেশের উন্নতি সম্ভব না। তোর নিজের কথা নেই? তুই কি কি কাজ করলি ক্ষমতায় থেকে সেটা বল।
যারা ধর্ষন করবে।
বিচার, আইন তাদের দরকার নাই। তাদের ধরে সোজা ক্রস ফায়ার। যারা দেশের জন্য কাজ না করে সম্পদের পাহাড় গড়বে তাদের ধরে বাকি জীবনের জন্য সোজা কারাগারে রাখা হবে। যে সমস্ত সরকারী আমলারা নিয়মিত বেতন নেবে। ঘুষ খাবে কিন্তু কাজ করবে তাদের ধরে সোজা কারাগারে। অনেক বড় বড় সরকারী অফিসার কাজের কাজ কিচ্ছু করে না। ভুংভাং করে শাখা অফিস বানিয়ে সেখানে রাজত্ব করছে, ক'দিন পর পর সরকারী টাকায় পরিবার নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের জন্য দুপুরে খাবার আসে শেরাটন হোটেল থেকে অথবা কোনো দূর্নীতিবাজ রেডিসন থেকে খাবার কিনে তাদের পাঠান। তাদের ধরে নিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। যারা অফিসের কাজ বাদ নিজের অফিস রুমটাকে ব্যাক্তিগত রুম হিসেবে ব্যবহার করছে- তাদের কানে ধরে প্রেসক্লাবের সামনে নিয়ে উঠবোস করাবো। অফিসে কাজ না করে সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত। অফিস সাহিত্য করার জায়গা না। একটা দেশের উন্নতি তখনই হবে, যখন যে যার জায়গা থেকে তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবে। সরকার তোমাকে গাড়ি দিয়েছে, বাড়ি দিয়েছে- দিয়েছে অনেক টাকা সেলারি। আর তুমি কাজ না করে অফিসের মধ্যে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করো। সেই আলোচনা ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়ো। সরকারী অফিস কি এসব করার জন্য নাকীরে হারামজাদা। সাহিত্য করে নিজের অপকর্ম ঢাকতে চাও?
প্রতিটা সরকারী আমলার জবাবদিহি করতে হবে।
লিখিত আকারে সে কি কি কাজ করলো তা দিতে হবে প্রতিমাসে। প্রতিটা মন্ত্রী, এমপি এবং জনপ্রতিনিধিরও প্রতিমাসে সে কি কি কাজ করলো তার তালিকা দিতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিমাসে একবার জাতির সামনে বলবে সে দেশের জন্য কি কি কাজ করছে এবং করতে যাচ্ছে। অতীতে যারা দেশের জন্য কাজ করেছে, কি কি কাজ করেছে তার জবাবদিহিতা করতে হবে। জবাবদিহিতায় গড়মিল থাকলে তাদের শাস্তি পেতে হবে। প্রতিটা জেলাপ্রশাসক সরকার থেকে গাড়ি বাড়ি ইত্যাদি নানান রকম সুবিধা পেয়ে থাকে। তারা কি কি কাজ করেছে সেই তালিকা দেশ বাসীকে জানাতে হবে। তাদের এত এত সম্পত্তি কিভাবে করলো তা জাতিকে বলতে হবে। যারা চাটুকার আর দালাল এরা দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের শাস্তি পেতে হবে। এমনকি যারা রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদেরও ছাড়া হবে না। দেশের কোনো ছাত্র রাজনীতি করতে পারবে না। দেশে ছাত্রদের কোনো দল থাকবে না। এক কথায় ছাত্র রাজনীতি বন্ধ। তারা শুধু লেখাপড়া করবে। এই করোনার মধ্যেও পুলিশের ঘুষ নেওয়া বন্ধ নাই। এখনও ফুটপাতের প্রতিটা দোকান থেকে টাকা নিচ্ছেই। এমন কি পুলিশ বেশ্যাদের কাছ থেকেও টাকা নেয়। আমি প্রধানমন্ত্রী হলে এসব অন্যায় করতে দেওয়া হবে না। নো নেভার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৭