আজ কিশোরগঞ্জ গিয়েছিলাম।
না কোনো কাজে না, কোনো দরকারেও না। এমনি এমনি। তবে এভাবে যাওয়াটা উচিত হয়নি আমার। যাই হোক, সকালে হোটেল থেকে নাস্তা খেয়ে সায়দাবাদ গেলাম। সবার আগে দেখি কিশোরগঞ্জের টিকিট কাউন্টার। একটা টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম। আজ আমি শাহেদ জামালের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। কিশোরগঞ্জ যেতে সময় লেগেছে সাড়ে চার ঘন্টা। বাস যাত্রাবাড়ি পার হবার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর ঘুম। একদম ভৈরব গিয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। ভৈরব বাস থেমেছে যাত্রী নামবে-উঠবে। এই ফাঁকে আমি নামলাম। প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে। দুই গ্লাস গেন্ডারিস রস খেলাম। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার রাস্তা বেশ ভালো। দেখে মনে হলো নতুন ঢালাই করেছে।
আজ বাসায় একটা ছোট অনুষ্ঠান আছে।
অনুষ্ঠান রাতে। গত কয়েকদিন ধরেই বাসায় নানান রকম পিঠা ঠিটা বানানো হচ্ছে। কি অনুষ্ঠান, কে আসবে, কে আসবে না- সেসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই। তবে এসব অনুষ্ঠান আমি সাধারনত এড়িয়ে চলি। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার আগে সুরভিকে বলে যাই নি। বাসে উঠে মোবাইলটাও রেখেছি অফ করে। মোবাইল খুলেছি দুপুর তিনটায়। মোবাইল অন করতেই সুরভি'র ফোন। তুমি কোথায়? আমি কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ মানে? সেখানে কেন গেছো? আমি বললাম, রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে? সুরভি রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিলো। একটু পর ভাবী ফোন দিলো। বলল, রাজীব এসব তুমি কি শুরু করছো? আজ বাসায় অনুষ্ঠান। বক বক--- চলছেই। আমি ফোন কেটে দিলাম।
দুপুরে এক হোটেলে খেলাম।
অতি ফালতু রান্না। বলেছে, দেশী মূরগী। মিথ্যা বলেছে। কর্ক মূরগী। ভাতের চাল গুলোও সুবিধার না। টানা দুই ঘন্টা কিশোরগঞ্জ শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নয়, উন্নত শহর নয়। পৌরসভা কিছু কাজ করেছে। কিন্তু কাজ গুলো ভালো হয়নি। শহরে প্রচুর ওষুধের দোকান দেখলাম। ব্যাটারি চালিত অটো দেখলাম অনেক। মোবাইল দিয়ে কিছু ছবিও তুলেছি। ইচ্ছা আছে একটা ছবি ব্লগ পোষ্ট দেওয়ার। আজ কড়া রোদ উঠেছে। পরেছিলাম সাদা শার্ট। শার্ট ভিজে একাকার। অবশ্য এই শার্ট এক বছর আগের বানানো। পড়া হয়নি। আজই প্রথম পড়েছি। সাড়ে তিন বছর আগে একবার কিশোরগঞ্জ এসেছিলাম। আমার এক কলিগের বিয়েতে। সাথে সুরভিও ছিলো তখন। এই শহরের মেয়েরা বোরকা পড়ে।
বিকেল পাঁচ টায় বাসে উঠলাম।
ঢাকা ফিরবো। হঠাত শরীরটা প্রচন্ড খারাপ করলো। প্রেশার মনে হয় বেড়ে গেছে। কিছুক্ষন পর শুরু হলো প্রচন্ড মাথা ব্যথা। যেন মাথা ছিড়ে পড়ে যাচ্ছে! কিছুতেই মাথা ব্যথা কমছে না। বাম চোখটাও প্রচুর ব্যথা করছে। আমার পাশে বোরকা পরা মহিলা বললেন, আপনি এমন করছেন কেন? কি হয়েছে? আমি বললাম, প্রচন্ড মাথা ব্যথা। মহিলা বললেন, এই সূরা পরেন ''বিসমিল্লাহি তুরবাতু আরদিনা বি-রিকাতি বা’দিনা লিইউশফা সাক্বিমুনা বিইনি রাব্বিনা''। ব্যথা কমে যাবে। আমি বললাম, বোন সূরা টূরা জানি না। আইনস্টাইনের সুত্র জানি। সুত্র বললে কি ব্যথা কমবে? মহিলা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকালেন। মহিলা রাগ করে অন্য সিটে গিয়ে বসলেন।
আজ অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি।
এত টাকা খরচ করার মতোন অবস্থা এখন আমার না। আমি চিরজীবনের বেহিসেবি মানুষ। এজন্য আমার বেশ বেগ পেতে হয় প্রায়ই। কত টাকা খরচ করলাম তার হিসাব করাটা দরকার।
সকালের নাস্তা----------------------- ১৩০ টাকা (নেহারি- ৮০ টাকা, দুইটা রুটি- ২০, চা- ১৫, বখশিস- ১৫)
সায়দাবাদ রিকশা ভাড়া-------------- ৬০ টাকা
বাসের টিকিট (যাওয়া, আসা) ---------৫০০ টাকা
দুপুরের খাবার------------------------ ১৩০ টাকা (মূরগী- ১০০, ভাত- ২০, বখশিশ- ১০)
টোটাল চা, সিগারেট------------------ ১১০ টাকা
সায়দাবাদ থেকে বাসা রিকশা ভাড়া--- ৭০ টাকা
সব মিলিয়ে খরচ দেখাচ্ছে ১০০০/- টাকা। অথচ খরচ হয়েছে ১,২৫০ টাকা। আর আড়াই শ' টাকা কোথায় খরচ করলাম তা কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আজিব!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:০১