রাতে দোয়া কবুল হবার সুযোগ বেশি।
রাতের যে কোন অংশে ঘুম হতে জাগলে যে কোন দোয়া করা যায়। আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। দোয়া কবুল হবার আরো অনেক টাইমের কথা হাদিসে বর্নিত আছে সেইসব টাইমে দোয়া করা যায়। যেমন- বৃস্টির সময়, আযানের সময়, কুরআন খতম করার পর, জুমার দিনের শেষ অংশে, রমজান দোয়া কবুল হবার মাস, রোজাদারের দোয়া কবুল হয়, ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় এবং শবে কদরে দোয়া কবুল হয়।
নবীজি বলেছেনঃ
''যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন''। নবীজি আরো বলেছেন, ''যে সময় তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে।
আউজুবি কালিমাতিল্লাহিত তামমাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।
অর্থঃ ''আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহর সব পূর্ণ কালিমাসমূহের উসিলায়, তাঁর সৃষ্ট সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে''। উক্ত দোয়াটি সকাল-বিকাল তিনবার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা বিষাক্ত ও হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে হিফাজত করবেন। নবী করিম বলেছেন, ''বান্দা যখন সিজদারত থাকে, তখন সে তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা এ সময়ে বেশি বেশি দোয়া করবে।'' সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ।" পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, তার বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল, নবী কারিম- ''যে কোন ধরনের মহামারী থেকে বেচ থাকার জন্য আমাদের কিছু আমল বা দোয়া শিখিয়ে গেছেন''। তার মধ্যে একটি হলো- ''আল্লাহুমা ইন্নী আউযূবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল যূনুনী ওয়াল যূযামী ওয়া মিন ছাইয়িল আসকম''। আরো অনেক দোয়া রয়েছে। সেগুলো আমাদের বেশি বেশি আমল করতে হবে।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর যুগে, এক লোক যার নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ্ আর ডাকনাম ছিল হিমার। এ লোকটি নবীজিকে- কে হাসাত। রসূলুল্লাহ্ শরাব পান করার অপরাধে তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন।
একদিন তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হল। আল্লাহর রসূলুল্লাহ্ তাকে চাবুক মারার আদেশ দিলেন। তাকে চাবুক মারা হল। তখন দলের মাঝ থেকে একলোক বলল, হে আল্লাহ্! তার উপর লা’নত বর্ষণ করুন! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে কতবার যে আনা হল! তখন নবীজি বললেনঃ তাকে লা’নত করো না। আল্লাহ্র কসম! আমি জানি যে, সে আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলকে ভালবাসে।
পৃথিবীতে মানুষের জীবনে কঠিন অবস্থা আসবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ পৃথিবীটা হল একটি পরীক্ষার স্থান যেখানে আল্লাহ মানুষকে নানা রকম বিপদআপদ, ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। সকল সময়ের নিরাপত্তার জন্য মহানবী বলেছেনঃ ''বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়া দুররু মা’আসমিহি শাইআন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়াহুয়াস সামিউল আলীম'' (আমি সেই আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। বস্তুত তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা) যে এই দোয়া সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার বলবে, কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।
মিলাদ এটা একটা বেদাত।
রাসূল থেকে এমন কিছু প্রমাণিত নয়। নতুন ব্যবসা, দোকান যাই হক তা নিজেই দোয়া করতে হবে। যতটুকু সম্ভব কুরআন থেকে সূরাহ ফাতেহা, আল-বাকারাহ পড়া। আর দুই রাকাআত নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কুরআন মাজিদে (সুরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে) মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ''হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন।'' যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের মূল মন্ত্র কী? আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় সকল কাজ হয়ে থাকে বিষয়টা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন, সে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারবে। যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবে, যা মন চায় তাই পরতে পারবে। মানুষ চাইলে মসজিদেও যেতে পারে, চাইলে নাইট ক্লাবেও যেতে পারে। আল্লাহ তাকে বাধা দিবে না।
কারো দোয়া কিংবা বদ দোয়া ব্যাতিত আল্লাহ কোন মানুষের স্বাধীনতায় ব্যাঘাত ঘটায় না। একজন মানুষের জীবনে সবচাইতে বড় অভাব কোনটি? আল্লাহর উপর বিশ্বাসের অভাব। এর কারণেই মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, ফলে তার আকাঙ্খাগুলোও ঠিকমত পূরণ হয় না। ইবাদতে মশগুল হোন। মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করুন। বড়দের দোয়া নিন। তাহলে ক্ষমা পাবেন। দোয়া সবার জন্য করতে হবী। আল্লাহতালা আপনার ইচ্ছা পূরণ করুন। কুরআন মাজিদ মুখস্থ করার তৌফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬