somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন প্রেসিডেন্ট

২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক দুঁদে উকিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় তার বায়োডাটা পূরণ করতে গিয়ে 'শিক্ষাগত যোগ্যতা' কলামে এসে থমকে গেলেন। এমনিতেই তার কপাল জুড়ে কুঞ্চিত বলিরেখা, তার উপর হঠাৎ কলমের হোঁচট খেয়ে বলিরেখার ভাঁজ গুলি আরো প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। জীবনের অনেক কথা মনে পড়ে গেল তার।

সারা জীবনে এক বছর সময় কালও বিদ্যালয়ে যাবার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। হবে কি করে? তার বাবা_ টমাস ছিলেন এক দরিদ্র ছুতোর মিস্ত্রি। তার ওপর দেশজুড়ে রেড ইন্ডিয়ানদের তাণ্ডবে বারবার বাসস্থান বদলাতে হচ্ছিল তাদের। তবুও রেহাই পায়নি তার বাপ দাদারা। একদিন জঙ্গল সাফ করে সেই জমিতে বীজ বুনছিলেন। এমন সময় রেড ইন্ডিয়ানদের আক্রমণে নিহত হলেন তার দাদা। প্রাণ বাঁচানোর দায়ে সবাই পালিয়ে এলেন কেন্টাকি প্রদেশে। প্রাণে বাঁচল বটে কিন্তু জীবিকার পথ এতই দুর্গম যে ঠিকমতো সবার খাদ্য জুটলো না। প্রায়ই উপোস করে দিন কাটাতে হতো সবাইকে।

এমন দুর্দশায় লেখপড়ার কথা কারো মাথাতেই আসল না। মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারালেন। বাবা আবার বিয়ে করলেন এক বিধবা রমণীকে। কিন্তু মানুষটা ছিলেন ভীষণ ভাল। বুঝতেই দিলেন না তিনি যে সৎ মা। তাকে কোলে নিয়ে ছড়া শোনাতেন, ঈশপের গল্প বলতেন, বাইবেলের কাহিনি মুখস্থ করাতেন। কয়লা দিয়ে কাঠের উপর লিখে লিখে অক্ষর জ্ঞান করালেন। এই ভাবেই ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রতি এমন প্রবল আকর্ষণ হল যে মানসিক অস্থিরতা কাটানোর জন্য এমনকি ক্ষিধের যন্ত্রণা ভুলে থাকবার জন্য ইউক্লিডের জ‍্যামিতি চর্চা কিংবা শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ পড়ে তবেই চাঙ্গা হয়ে উঠতেন।

একবার মামাতো ভাই জনের সাথে নৌকা চালানোর কাজে গিয়েছিলেন। প্রতিদিন নৌকা নিয়ে অনেক দূরে স্প্রিং ফিল্ড শহরে যেতেন আর নৌকার মধ‍্যে বসে বসে উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন। যাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন সকলে। এইভাবে এক উকিল তাকে খুব ভালবেসে ফেলেছিলেন। তার হাতে মোটা মোটা বই দেখে ভীষণ লোভ হতো। তার কাছ থেকে আইনের বই চেয়ে নিয়ে পড়তেন। তার বাড়ি যেতে হলে দশ মাইল হাঁটতে হতো তাঁকে। বই পড়ার আনন্দে পথে হাঁটার ক্লেশ অনুমানই করতে পারতেন না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই অর্ধেক বই পড়া হয়ে যেত। আর পথ চলতি মানুষ তার জোরে জোরে পড়া দেখে হাসি ঠাট্টা করতেন। সেদিকে তাঁর ভ্রুক্ষেপ ছিল না। পড়ার আনন্দে ডুবে থাকতেন। মাঝে মাঝে কোনো জটিল সমস‍্যা মাথায় এলে কাগজে লিখে টুপির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন।

এইসব হাজার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন স্মৃতির রাজ‍্যে পা দিয়ে ছিলেন ভুলে গেছিলেন। হঠাৎ ই স্ত্রীর ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলেন। তড়িঘড়ি বায়োডাটা পূরণ করবার জন‍্য ব‍্যস্ত হয়ে পড়লেন আর 'শিক্ষাগত যোগ‍্যতার' স্থানে লিখে দিলেন অসম্পূর্ণ। দপ্তর থেকে ফিরে বাড়ি বসে রইলেন। প্রচারেও বের হলেন না। অন‍্যেরা বহু চেষ্টা করেও তাঁকে পরাজিত করতে পারলেন না। তিনিই হলেন দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন।

খবরটা যখন তাঁর কানে এসে পৌছাল তখন তিনি নিজের হাতে ঘোড়া আর গরুর খাবার যোগাড় করছিলেন। যদিও সেই সময় তার রোজগার হতো মাসে পাঁচ হাজার ডলার। তবুও নিজের হাতেই প্রতিদিন তাদের পরিচর্যা করতেন। শুধু পশু প্রেম কেন, মানুষের প্রতিও ছিল অসীম দয়া। তাঁর যে দেহরক্ষী উইলিয়ম স্কট; একদিন পাহারা দেবার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই অপরাধে তার মৃত‍্যুদন্ড হয়। কিন্তু লিঙ্কনই তার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে যুদ্ধে পলাতক বন্দির আত্মীয়দের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন কোনোদিন ফেরাতে পারেননি।

প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর তাঁর বন্ধুরা প্রায়শই তাঁকে শত্রুদের সম্পর্কে সাবধান করে দিতেন। কিন্তু তিনি সেদিকে খেয়াল করতেন না। বরং তাদেরকেই ডেকে এনে মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন। এদের মধ‍্যে অন‍্যতম সিওয়ার্ড ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের প্রধান বিরোধী প্রার্থী, তাকে করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। চেজ ছিলেন বিরোধী দলের প্রধান, তাকে করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।

আমেরিকায় ক্রীতদাস প্রথা ছিল ভয়ংকর অমানবিক। স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় কতগুলো সাদা চামড়ার মানুষ পশুর মতো পায়ে শিকল বেঁধে কালো মানুষেদের কেনা বেঁচা করত। তাদের মুক্তির প্রশ্নে আমেরিকা জুড়ে দেখা দিল গৃহযুদ্ধ। প্রদেশে গুলোও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার জন্য লড়াইয়ে নেমে পড়ল। কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না সেই দুর্যোগ। তারই মধ‍্যে মারা গেল তাঁর জ‍্যোষ্ঠ পুত্র। শোকে কাতর পিতা রাতের অন্ধকারে কবর থেকে তুলে দেখত তার আদরের মানিককে।

১৮৬১ সাল। দ্বিতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বচিত হলেন। হোয়াইট হাউসের গদিতে বসে নিজেই আইন করলেন যার দ্বারা কালো মানুষদের বন্দি করে রাখা বন্ধ হল চিরতরে। বন্ধ হল ক্রীতদাস প্রথা। তবে কথায় বলে, 'যাদের জন‍্য করলে চুরি সেইই বলে চোর'। ১৮৬৫ সালের ১৪ই এপ্রিল। স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসির নাটক দেখতে। হঠাৎই বক্স আসনের দরজা খুলে গেল। গর্জে উঠল আততায়ীর বন্দুক। লুটিয়ে পড়লেন আব্রাহাম লিঙ্কন।

ধরা পড়ল আততায়ী। জন উইলকিস বুথ। ছিলেন একজন সাদা চামড়ার মানুষ। পেশায় ছিলেন থিয়েটারের অভিনেতা। জন ব্রাউনের ফাঁসির সময় ঐ শয়তানটাই তার গলায় পড়িয়ে দিয়েছিল ফাঁসির দড়ি। জানোয়ারটা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিল। একবার ধরাও হয়েছিল সন্দেহ করে। কিন্তু সেদিন লিঙ্কন কাছাকাছি উপস্থিত ছিলেন না। পরে এই ঘটনা শুনে লিঙ্কন বলেছিলেন, পাগল বাবার খ্যাপাটে ছেলে!

সত‍্যিই যদি সেদিনকে লিঙ্কন 'ক্ষমা' নামক ধর্মটার অপব‍্যবহার না করতেন তাহলে আততায়ী কেঁড়ে নিতে পারত না এই মহান মানুষটিকে। আসলে তার শিক্ষা যে 'অসম্পূর্ণ'! একথা তো তিনি আগেই বলে গেছেন এবং জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন!
কি বলেন, তাইনা?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×