অনলাইন মার্কেটিং বেশ জমে উঠেছে।
মানুষজন পাগলের মতো অনলাইন থেকে কিনছে। দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শহরের বহু মানুষ অনলাইনে ব্যবসা করছে। নিশ্চয়ই প্রচুর লাভ হচ্ছে, তা না হলে এত লোক এই ব্যবসায় নামতো না। সবাই কিছু না কিছু করছে, আমি ছাগল হাত পা নিয়ে চুপ করে বসে আছি। অথচ আমি নির্বোধ না। জ্ঞান বুদ্ধি সবই ঠিকঠাক আছে। যেখানেই যাই, শুনি সে অনলাইন ব্যবসা করছে। বেশ লাভ হচ্ছে। আমার এক বন্ধু। গতকাল ওর বাসায় দাওয়াত ছিলো। রাতে বন্ধুর বাসায় খাওয়া দাওয়া করলাম। বন্ধু ভালো চাকরি করছে। পাশাপাশি অনলাইনে ব্যবসাও করছে। ফিল্টার পানির মেশিন বিক্রি করছে। এবং ফার্নিচার বিক্রি করছে। অথচ আমার বন্ধু খালি হাতে ঢাকা শহরে এসেছিলো। উত্তরাতে সে জমিও কিনেছে। দুই বছর পর বাড়ির কাজে হাত দিবে।
সুরভি আর ভাবী অনলাইন থেকে কেনাকাটা করে।
তারা পাগলের মতো অনলাইন থেকে কেনাকাটা করে। জামা, শাড়ি, নানান রকম খাবার ইত্যাদি প্রায়ই কিনে। সেদিন সুরভি অনলাইন থেকে চানাচূর কিনলো। বলল, এই চানাচূর ঘরে বানানো। খেতে ভীষন মজা। ঘি কিনছে অনলাইন থেকে। আমি বললাম, বাজারে তো ঘি পাওয়া যায়। সুরভি বলল, এটা খাটি ঘি। বাজারেরটা খাটি না। মধু কিনলো। সেটাও নাকি খাটি। কোনো ভেজাল নাই। সুরভির এক বোন ইটালী থাকে। সে ইটালী বসে বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে সারাদিন কেনাকাটা করতেই থাকে। একটা শাড়ি কিনলো ৭০ হাজার টাকা দিয়ে। আরেকটা কিনলো ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে। আমাদের বাসার ঠিকানা দিয়েছে। সেলসম্যান এসে দিয়ে গেলো। আমি শুধু অবাক হই ওদের কেনাকাটা দেখলে।
অনলাইন ব্যবসা বেশি করছে মেয়েরা।
মেয়েরা নানান রকম জামা কাপড় নিয়ে লাইভে আসছে। ক্রেতারা এলোমেলো প্রশ্ন করে পন্য কিনে নিচ্ছে। প্রচুর নাকি বিক্রি হচ্ছে। এরকম বেশি কিছু ভিডিও আমি দেখেছি। একটা মেয়ে সুন্দর করে সেজে ভিডিওতে আসে। সে তার প্রোডাক্ট এর গুনগান করে। মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেয়। আধা ঘন্টার মধ্যে ১৫/২০ টা জামা, শাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। যারা বিক্রি করছে পাগলের মতো বিক্রি করছে, যারা কিনছে পাগলের মতো কিনছে। আমি বুঝি না, ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হলেই মার্কেটের অভাব নাই। তবু মানুষ অনলাইন থেকে কিনছে কেন? তারা কাপড় শুধু চোখে দেখছে অনলাইনে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারছে না। বা টায়ালও দিতে পারছে না। ভিডিওতে প্রোডাক্ট দেখা আর হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা এক হলো?
আমি ফেসবুকে মানুষের ব্যবসা দেখি।
এক মহিলা কাঠের দরজা বিক্রি করছেন। নানান রকম ডিজাইন করা দরজা। ভালো বিক্রি হচ্ছে। আরেকজনকে দেখলাম, বিকেলের নাস্তা বানিয়ে বিক্রি করছেন। নুডুলস, পিয়াজু, সমুচা সিঙ্গারা এইসব। সেই মেয়ে পাগলের মতো অর্ডার পাচ্ছে। সাপ্নাই দিতে মেয়েটাকে হিমিশিম খেতে হচ্ছে। এক মহিলা বিক্রি করছে মধু আর ঘি। সেই মহিলা আবার বলছে, অনলাইনে ব্যবসা করছি বলে আমাকে দরিদ্র ভাববেন না। ঢাকা শহরে গাড়ি বাড়ি সবই আছে আমার। একমেয়ে বিক্রি করছে কসমেটিকস। দারুন বিক্রি হচ্ছে। বোরখা, হিজাব, নেইল পলিশ, হাত ঘড়ি, মগ, চা পাতি, বাচ্চাদের জামা কাপড় সহ সবই বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশকে ডিজিটাল বানাবেন। উনি পেরেছেন।
ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে।
তারা ২৫/৩০ জন নিয়ে ট্যুর এ যাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। এই কক্সবাজার যাচ্ছে, সিলেট যাচ্ছে, রাঙ্গামাটি- বান্দরবান যাচ্ছে। দুই তিন দিনের ট্যুরে নাকি তাদের সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা করে লাভ থাকে। সবাই কোনো না কোনো ভাবে টাকা ইনকাম করছেই। আমাদের পাশের বাসার এক মেয়ে, অনলাইনে রঙ পেন্সিল, রঙতুলি, বোর্ড, হাবিজাবি বিক্রি করছে। প্রতিদিনই তার অর্ডার থাকেই। একমেয়ে পদ্মার ইলিশ বিক্রি করছে। আরেকজন মহিলাকে দেখলাম অনলাইনে কোরআন শিখাচ্ছেন। কেউ বসে নেই। এখন সবাই অনলাইন ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। বেশ কয়েকজন চাকরিই ছেড়ে দিয়েছে। পুরোপুরি অনলাইন ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। আমি কি করবো? আমি তো মানুষ। খেতে হয়, পরতে হয়। সংসার আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২০