আমার শ্বশুর হাসপাতালে।
তার করোনা হয়েছে। তার অবস্থা বেশ খারাপ। অক্সিজেন ছাড়া তার চলছেই না। আমি তাকে দেখতে এখনও যাই নি। আমি গিয়েই বা কি করবো? উনি বারবার বলছেন, আমাকে গ্রামে দিয়ে আসো। ঘুমের মধ্যেও বলছেন, আমাকে গ্রামে দিয়ে আসো। হাসপাতালে আমি মারা যেতে চাই না। সেদিন আমার সাথে তার ভিডিও কলে কথা হলো। উনি কোনো কথাই বলতে পারছেন না। নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। শুধু কাঁদছিলেন। আমি বললাম, আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। অযথা চিন্তা করবেন না। এদিকে সুরভির বড় ভাইও করোনা পজেটিভ। তবে সে ভালো আছে। হাঁটা চলা করতে পারছে। খাওয়া দাওয়াও করতে পারছে। তিনি বাসায় আছেন।
এদিকে আমার আব্বার অবস্থা খুব খারাপ।
গত পরশু রাত তিনটায় আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আব্বা কাউকে চিনতে পারছে না। ডাক্তার বলেছেন, তার পুরো শরীর প্যারালাইস হয়ে যাবার সম্ভবনা আছে। আব্বা দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। গত দুই বছর ধরে তাকে এক, দুই মাস পর পর হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছে। এখন আব্বার অবস্থা খুব বেশী খারাপ। আব্বার বয়স ৬০/৬৫ হবে। দুনিয়াতে আমি বিপদে আপদে একমাত্র আব্বার উপরই ভরসা করি। সে আমাকে প্রচন্ড সাপোর্ট করে। আব্বার সাথে দশ মিনিট কথা বললেই, অটোমেটিক আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেত। কোনো সমস্যাই সমস্যা মনে হয় না।
সুরভি'র শরীরটাও বিশেষ ভালো যাচ্ছে না।
প্রতি মাসে দুইবার করে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। তিনবেলা অনেক গুলো করে ওষুধ খাচ্ছে। প্রতিমাসে নানান রকম টেস্ট করাতে হচ্ছে। পানির মতো টাকা খরচ হচ্ছে। এদিকে বুয়া ঠিক ভাবে আসে না। একদিন আসে তো তিনদিন আসে না। একটা সংসারে তো কাজ কম না। আমি আবার ঘরের কাজটাজ পারি না। এসব কাজ পারলে আমি সুরভিকে সহযোগিতা করতে পারতাম। মা আমাদের চার ভাইকে কোনোদিন ঘরের কাজ করায় নাই। কোনোদিন কাপড় ধুতে নাই। ঘর মুছতে দেয় নাই। রান্নাও করতে শেখায় নাই। মা কোনোদিন আমাদের বাজারও করতে দেয় নাই। যদিও এখন আমি বাজার করতে পারি।
আমার মানসিক অবস্থা ভালো নেই।
মনে হচ্ছে সামনে খুব খারাপ সময় আসছে। খুব খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে। তবে আমি কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিচ্ছি না। আমি বই পড়ছি, মুভি দেখছি, গান শুনছি। বেশ স্বাভাবিক আছি। কারন আমাকে বিধ্বস্ত দেখলে সুরভি মন খারাপ করবে। ঘাবড়ে যাবে। আজ বুয়া আসে নি। তাই সুরভিকে নিয়ে আজ দুপুরে বাইরে খেলাম। ফেরার পথে দুজনে মিলে আইসক্রীম খেলাম বাচ্চাদের মতো। অকারনে রিকশা করে ঘুরলাম এক ঘন্টা। পকেটে টাকা ছিলো না। টাকা থাকলে সুরভিকে অবাক করে দিয়ে বেলীরোড থেকে একটা শাড়ি কিনে দিতাম। মেয়েরা শাড়ি পেলে খুব খুশি হয়।
ছাদে আমার তিনটা বড় গাছ আছে।
আম, পেয়ারা আর লেবু। এবছর একটা গাছেও ফল পাই নি। এর আগের বছর অনেক আম হয়েছিলো। পেয়ারাও অনেক হয়েছিলো। দারুন মিস্টি পেয়ারা। লেবু গাছে অনেক লেবু হয়েছিলো। কি সুন্দর গন্ধ! আমি গাছের বেশ যত্ন করি। সকালে বিকালে নিয়মিত পানি দেই, আগাছা পরিস্কার করি। সার দেই। খুব যত্ন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনটা গাছই মরে গেছে। তিনটা গাছেরই সমস্ত পাতা পড়ে গেছে। পুরো ছাদ গাছের মরা পাতা দিয়ে ভরে গেছে। আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। আজ বিকেলে এক ঘন্টা ছাদে গিয়ে বসে ছিলাম। সুরভি ছাদে চা নিয়ে এলো। বলল, মন খারাপ করো না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৮