১। আদ্ব-দীন হাসপাতালের রাতের দৃশ্য দেখেছেন?
ঢাকার মগবাজার আদ্ব-দীন হাসপাতালের কথা বলছি। আমি দেখেছি। একবার রাত এক টায় আমাকে আদ্ব-দীন হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো। একজন গর্ভবতী নারীকে রক্ত দেওয়ার জন্য। সারারাত আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। হাসপাতালের অবস্থা দেখে আমি প্রচন্ড অবাক! নীচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ শুয়ে আছে ফ্লোরে। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই শুয়ে আছে। দুই বছরের বাচ্চা থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নানান ধরনের মানুষ শুয়ে বসে আছে। কেউ কেউ বউ বাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছে।
এত মানুষ শুয়ে থাকে যে হাঁটার জায়গা পাওয়া যায় না। যারা শুয়ে আছে তারা নিশ্চয়ই রোগীর সাথে হাসপাতালে এসেছে। একজন রোগীর সাথে চারজন পাঁচ জন করে এসেছে। ঢাকার বাইরে থেকে বহু রোগী আসে। রোগীর সাথে রোগীর আত্মীয় স্বজন আসে। ভয়াবহ অবস্থা। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না- এমন অবস্থা। এই রকম অবস্থা নাকি প্রতিটা রাতেই হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে আমি ধন্যবাদ জানাই। তারা যদি তাদের থাকতে না দিতো তাহলে এত এত নারী পুরুষ কোথায় যেতো? সবার তো আর টাকা নেই হোটেলে থাকার।
বিঃ দ্রঃ এক। একসময় আদ্ব-দীন হাসপাতাল ছোট ছিলো। এখন অনেক বড় করা হয়েছে।
দুই। একসময় আদ্ব-দীন হাসপাতালের খরচ অনেক কম ছিলো। এখন অনেক বেড়ে গেছে।
তিন। আদ্ব-দীন হাসপাতালের দাড়োয়ান, নার্স, আয়া ও ডাক্তাদের ব্যবহার ভালো না।
চার। আদ্ব-দীন হাসপাতালে প্রচুর ভিড়, প্রচুর।
২। আমার এক পরিচিত লোক- গত কয়েক বছর ধরে বিরাট ধার্মিক হয়ে গেছে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। মুখ ভর্তি দাড়ি রেখেছে। কথায় কথায় মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ছাড়া কথাই বলে না। ছোট বড় সবাইকে সালাম দেয়। কথায় কথায় কোরআন হাদীসের কথা বলে। এবং সে চায় দেশে জামাত শিবির ক্ষমতায় আসুক। কারন দেশের মেয়েরা সব নষ্ট হয়ে গেছে। তারা কেউ বোরখা বা হিজাব পড়ে না। আমার এই পরিচিত ধার্মিক লোকটি কোনো কারনে এক ওয়াক্ত নামাজ মিস হয়ে গেলে খুব কষ্ট পায়। অথচ এই ধার্মিক একসময় বিরাট বদ লোক ছিলো। শপিং মলে গিয়ে মেয়েদের গায়ে হাত দিতো। সরকারী অফিসের ওয়াশরুমে গিয়ে মেয়েদের নোংরা ছবি আকতো। কুৎসিত ভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতো। পথে ঘাটে মেয়েদের দেখলে কুৎসিত মন্তব্য করতো। মানুষ আসলেই বদলে যায়। একজন দুষ্টলোক ইমানদার হয়ে যেতে পারে।
রঞ্জু নামে আমার এক বন্ধু ছিলো।
বাগেরহাঁট তার বাড়ি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা এসেছিলো। জগন্নাথে অনার্সে ভর্তি হয়। মেসে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। ধর্মীয় সব নিয়ম কানুন মেনে চলে। মুখে সব সময় নূরানী দাঁড়ি দেখেছি রঞ্জুর। চোখে সুরমা দিতো প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাওয়ার সময়। প্রতিমাসে তিন দিনের চিল্লায় যেতো। ইজতেমা কখনও মিস করতো না। সাত দিন আগে ইজতেমা ময়দানে চলে যেতো। বয়স্ক লোকদের সেবা যত্ন করতো। সেই রঞ্জু এখন বদলে গেছে। প্রতিদিন মদ খায়। ঢাকা শহরের সমস্ত বার তার চেনা। অসংখ্য পতিতার সাথে তার গভীর সম্পর্ক। ঢাকায় বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটা মামলাও আছে তার নামে। কেন্দ্রিয় কারাগারে গিয়েছে দুইবার। এখন জামিনে বের হয়ে এসেছে। এখন সে নামাজ রোজা করে না। তার মূখে সুন্নতি দাঁড়ি নেই। মানুষ বদলে যায়।