বাবা মা দু'জনেই প্রচন্ড রেগে আছেন।
তাদের একমাত্র ছেলে অনিক বিয়ে করে ফেলেছে। রাত এগারোটায় বউ নিয়ে বাসায় এসেছে। অনিকের লেখাপড়া শেষ হয় নি। সে সাউথইষ্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ'তে পড়ছে। অনিকের বাবা রেগে বললেন, হারামজাদা শুওরের বাচ্চা। তুই এক্ষন এই বস্তির মেয়ে নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হ। অনিকের মা বললেন, আমি তোমাদের আমার বাসায় জায়গা দেবো না। তোমাদের চেয়ে পথের কুকুর বিড়াল ভালো। তোমরা এত সেয়ানা হয়ে গেছো- একা একা বিয়ে করে ফেলেছো! অনিকের বউ এর নাম- সীমা। সীমা বলল, আমাদের ক্ষমা করে দিন। অনিকের বাবা মা দু'জনেই বললেন, তোমাদের কোনো ক্ষমা নেই। বের হও আমার বাড়ি থেকে।
কিছু দিন পর জানা গেলো-
অনিক তার বাবার কাছ থেকে দুই মাস পর পর সেমিস্টার ফি'র কথা বলে আশি হাজার করে টাকা নিতো। অনিক তার সেমিস্টারের টাকা ভার্সিটিতে জমা দেয় নি। সেই টাকা দিয়ে সীমার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। একবার তারা কক্সবাজার গিয়েও তিন দিন থেকে এসেছে। টানা এক বছর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে অথচ সে কোনো ক্লাশ করে নি। অনিকের বাবা মার ধারনা তার ছেলের এই অধঃপতের জন্য দায়ী সীমা। অনিকের বাবা মা দু'জনেই বলেছেন- সীমাকে তালাক দাও। অনিক স্পষ্ট বলেছে, সীমা খুবই ভালো একটা মেয়ে। আমি তাকে ভালোবাসি। তালাক দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। অনিকের বাবা মা বলেছেন, এই মেয়ে একটা ডাইনী। সে তাদের ছেলেকে যাদু করেছে। অনিকের দুই বোন আছে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। একজন থাকে চিটাগাং, একজন রাজশাহী।
সীমার বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছেন।
সীমার যখন দশ বছর বয়স তখন তার বাবা মা মারা গেছেন। সীমা বড় হয়েছে তার সেজো মামার কাছে। সেজো মামার আর্থিক অবস্থা ভালো না। সীমা টাকার অভাবে ভার্সিটিতে ভরতি হতে পারে নি। তবে তার প্রেম ভালোবাসা হয়ে যায় অনিকের সাথে। অনিক সত্যিই একটা ভালো ছেলে। সহজ সরল। সে অনিককে কোনো দিনও ছেড়ে যাবে না। অনিকও কোনোদিন সীমাকে ছেড়ে যাবে না। বেকার অবস্থায় তাদের বিয়ে করার কারন হচ্ছে, সীমার সেজো মামা এক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে সীমা বিয়েও ঠিক করেছে। তাই বিয়ে না করে অন্য কোনো উপায় ছিলো না। তবে অনিকের সাথে সীমার বিয়েতে সেজো মামা খুশি। তিনি তাদের জন্য দোয়া করেছেন।
অনিক তার বাপ মায়ের অনেক গালমন্দ শুনলো।
কিন্তু সে বউ নিয়ে বাসা থেকে বের হলো না। বের হয়ে কোথায় যাবে? কোথাও তার থাকা, খাওয়ার জায়গা নাই। কিন্তু অনিকের বাবা মা দুজনেই অনিক আর সীমার উপর প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনা দিতেই থাকলো। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে সারাক্ষণ। সীমাকে কথায় কথায় মাগী বলে গালি দেয়। ঘরের সমস্ত কাজ করায়। ঠিকভাবে খেতে দেয় না। অনিক সব জানে কিন্তু সে অসহায়। একদিন তো অনিকের বাবা মা সীমাকে খুব মারলো। অনিককেও মারলো। এবং রাত এগারোটায় বাড়ি থেকে তাদের বের করে দিলো। সেদিন ছিলো ঝড় বৃষ্টির রাত। এই ঝড় বৃষ্টি তাদের জীবনের আগত ঝড় বৃষ্টিকে থামিয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় নিজের পায়ে উঠে দাড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু অতীত দিনের কথা তারা ভুলে নি।
অনিক আর সীমা'র বর্তমান অবস্থার কথা বলি-
তারা দুইজন'ই এখন খুব ভালো আছে। অনিক লেখাপড়া শেষ করে এখন খুব ভালো একটা চাকরি করছে। সীমাও একটা স্কুলে কাজ করছে। তাদের সংসারে একটা সন্তান এসেছে। তারা খুব ভালো আছে। সুন্দর আছে। সুখে আছে। কিন্তু অনিকের বাবা মা ভালো নেই। অনিকের বাবা ব্যবসায় লস খেয়েছে। অনেক টাকা ঋণ হয়েছে। তারা পাওনাদারের ভয়ে গ্রামে পালিয়ে গেছে। অনিকের বাবা মা এখন ছেলের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চায়। অনিক এবং সীমা তাদের ত্যাজ্য ঘোষনা করেছেন। তাদের বাসায় আসতে স্পষ্ট নিষেধ করে দিয়েছে। কম অপমান, অবহেলা আর কটু কথা বলেন নি। চড় থাপ্পড় পর্যন্ত দিয়েছেন। ঝড় বৃষ্টির রাতে বের করে দিয়েছে। তাদের কোনো খোজ খবর নেয় নি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৭