প্রিয় কন্যা আমার-
তোমাকে যেদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় আনি- সেদিন বাসায় একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিলো। তোমার আগমন এবং তুমি বাসায় প্রথম প্রবেশ করছো। প্রথম দিন নানান ব্যস্ততায় অনুষ্ঠান আর করা হয়নি। তাছাড়া তখন বাড়ি ভরতি ছিলো অনেক মানুষজন। তোমার জন্মের ষষ্ঠ দিনের দিন বাসায় ছোট একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলাম। নানান রকম বেলুন আর রঙ্গিন কাগজ দিয়ে ঘর সাজালাম। ছোট্র একটা কেক আর ভাবী পোলাউ কোরমা রান্না করলেন। তোমার মা নতুন একটা শাড়ি পড়লো। আমাকে জোর করে সাদা শার্ট পড়ালো। সবাই মিলে অনেক মজা করলাম। অনেক ছবি তুললাম। তোমার প্রথম অনুষ্ঠানে সাথী আপা ছিলেন। অবশ্য উনি তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিলেন। উনার বাসা থেকে ফোন এসেছিলো। সেদিন তোমাকে প্রথম গোছল করানো হয় সেদিন বাসার সবাইকে আমি মিষ্টি আর লাড্ডু খাইয়েছি।
এই যে আমি এখন লিখছি-
তুমি আমার পাশে শুয়ে আছো মাথার দু'পাশে দুই হাত রেখে। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যেই তুমি হেসে ওঠো। তখন কি যে ভালো লাগে আমার। আবার তুমি কান্না করলে- তোমার কান্না একদম আমার বুকে এসে লাগে। তোমার কান্নায় তোমার চেয়ে বেশী আমায় কষ্ট দেয়। ইদানিং আমি তোমার কান্নার অর্থ বুঝতে শিখেছি। কান্না শুনেই বুঝতে পারি- এখন তোমার ক্ষুধা পেয়েছে। এখন তোমাকে মশা কামড় দিয়েছে, এখন তোমার কোলে উঠতে ইচ্ছে হয়েছে অথবা ডায়পার বদলানোর সময় হয়েছে। তোমার মা আর আমি প্রায় সারারাত'ই জেগে থাকছি। অথচ ঘুমে আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সুরভি ঘুমায় না কারন একটু পর পর তোমাকে দুধ খাওয়াতে হয়। আর আমি ঘুমাই না- তোমাকে যেন মশা না কামড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। সেদিন দেখি, তোমার জামায় একটা লাল পিপড়া। তুমি কান্না করেছো। পিপড়াটা নিশ্চয়ই তোমাকে কামড় দিয়েছে।
আজ তোমার বয়স মাত্র এগারো দিন।
আমি লিখছি আর তোমার দিকে চোখ রাখছি যেন মশা তোমার গায় না বসতে পারে। এই মাত্র তোমার ঘুম ভাঙ্গল। তুমি আড়মোড়া ভাঙছো। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছো। ইচ্ছে মতোন হাত পা ছুড়ছো। তোমার জন্ডিস এখনও ভালো হয়নি। চোখ এখনও অনেকখানি হলুদ। আমার একটা আফসোস আমার বাবা তোমাকে দেখে যেতে পারলেন না। তোমাকে দেখলে তিনি অনেক খুশি হতেন। তোমার জন্মের ২০ দিন আগে আব্বা মারা গেলেন। অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর তোমার দাদা হঠাত মরে গেলো। জানুয়ারীর ২২ তারিখে আব্বার চল্লিশা। সেদিন গরীব দুঃখীদের একবেলা খাইয়ে দেবো। মাদ্রাসার এতিম ছেলেদের খাইয়ে দিবো একবেলা। আমার অনেক দায় দায়িত্ব আছে। অথচ চাকরি হারিয়ে বসে আছি। জমানো টাকাও সব শেষ। তবে তোমার কোনো চিন্তা নেই। কোনো কিছু নিয়েই তোমার কোনো প্রকার বেগ পেতে হবে না। আমি আছি।
তোমার মা খুব নামাজ রোজা করে।
নিয়মিত কোরআন পড়ে। আমার আব্বার চল্লিশা শেষ হয়ে গেলেই তোমার আকিকা দিয়ে ফেলব। একটা ছাগল জবাই করে মাংস গরীব মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দেবো। অবশ্য এখনও কাউকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়নি। এক শ' কেজি মিষ্টি আত্মীয়স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিবো। অবশ্য আব্বা বেঁচে থাকলে সে নিজেই দুই শ' কেজি মিষ্টি বিলাতো। যাই হোক, আমার মা তোমাকে প্রতিদিন দেখতে আসে। সে বেশ অসুস্থ। তারপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে তোমাকে নিচ তলা থেকে ছয়তলা দেখতে আসে। অথচ তাকে ডাক্তার সিড়ি ভাঙতে নিষেধ করেছেন। তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকেন। এবং বলেন, তুমি দেখতে পুরোপুরি আমার মতোন হয়েছো। আমার মতো তোমার হাত-পা। ঠোঁট। আমিও বেশ মিল পাই তোমার সাথে আমার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৩৮