ছবিঃ আমার তোলা।
ছোটবেলা বাচ্চারা মা-বাবাকে অনেক রকম প্রশ্ন করে।
আমি কোথা থেকে এলাম? আকাশে চাঁদ ওঠে কেন? রাতে সূর্য কোথায় থাকে? মানুষ মারা যায় কেন? দাদুর চোখে চশমা কেন ইত্যাদি হাজার রকম প্রশ্ন। আমি কখনও ছোটবেলায় বাবা-মা কে কোনো রকম প্রশ্ন করিনি। মাথার মধ্যে হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খেত- কিন্তু কাউকে প্রশ্ন কতাম না। সব প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে নিজের মনের মতোন করে বের করে নিতাম। এমনও হয়েছে- একটা প্রশ্ন মনে জেগেছে- সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি আমি দশ বছর পর। উত্তরটি নিজে নিজেই খুঁজে বের করেছি। কাউকে প্রশ্ন করিনি। যেমন, আজ থেকে বিশ বছর আগের একটি ঘটনা বলি- একদিন বিকেলে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম- আমাদের পাশের বাসায় একটি মেয়ে খুব চিৎকার করছে। মেয়েটাকে অনেক হিংস্র মনে হচ্ছে। মেয়েটাকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে ভূতে ধরেছে। অনেক মানুষ ভিড় করে মেয়েটার চিৎকার এবং কুৎসিত গালাগালি শুনছে। মেয়েটার বয়স ২২/২৪ হবে। সেই ভিড় থেকে একজন বলল- ভূতে ধরা মেয়েটার চোখে সরিশার তেল দিয়ে দাও। অন্য একজন বলল- দু'টা শুকনা মরিচ পুড়ে মেয়েটার নাকের মধ্যে ঢুকিয়ে দাও। আর একজন বলল- রসি দিয়ে বেঁধে ঝাড়ু দিয়ে পিটাও। একজন মহিলা বলল- পানি পড়া ছিটিয়ে দিলেই ভূত ঠিক পালিয়ে যাবে। অনেক বছর পরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম- মেয়েটির কি হয়েছিল।
মানুষ এখন শহর কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।
এই শহরে বড় বড় দালান করা মানুষের সবচেয়ে ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসবে- সব মানুষ গ্রামে ছুটে যাবে। এই শহরের বাতাসে আনন্দ নয় বরং বিষ মিশে আছে। প্রকৃতি থেকে বিছিন্ন হয়ে মানুষ বেশী দিন বাঁচতে পারে না। একদিন মানুষ তাদের সমস্ত ভুল গুলো শুধরে নেবে- তারা গ্রামে ফিরে যাবে এবং বড় বড় দালান সব ভেঙ্গে ফেলবে। শহর থেকে সব কলকারখানা সরিয়ে নেওয়া হবে। রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করবে। নদী-নালা, খাল-বিল ফিরে পাবে তার আপন ঠিকানা।
একটি দেশের জনসংখ্যা কোনো সমস্যা নয় বরং আর্শীবাদ।
যখন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বেশী হয়ে যাবে-প্রকৃতি ভার বহন করতে অক্ষম হয়ে যাবে তখন- প্রকৃতির নিয়মেই লাখ লাখ মানুষ মারা পড়বে। দিন দিন পৃথিবীর ওজন বেড়েই চলেছে! আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই চারদিকে লাখ লাখ মানুষের মরা দেহ পড়ে আছে। কোনো বিজ্ঞানী প্রকৃতির সাথে পারবে না। এইসব নিয়ে শিক্ষিত মানুষেরা ভাবে না। পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের ব্যতয়ই পরিবেশের দূষণ ঘটায় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিপন্ন পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ আইন। বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, পৃথিবীতে যদি আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ বাধে, তবে তা হবে বিশুদ্ধ পানির জন্য।
পৃথিবীর মোট আয়তন ৫১,১০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার।
মোট আয়তনের ২৯ ভাগ স্থল ও ৭১% জল। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ উভয়ই গৃহকাজের ব্যবহৃত পরিত্যাজ্য পদার্থ সাগরে নিক্ষেপ করার ফলে এবং চটকল, কাপড় কল, চিনিকল, তৈল উৎপাদনের কারখানা, চামড়া পাকা করার কারখানা, অস্ত্র তৈরির কারখানা ইত্যাদি বর্জ্য এবং শহরের নালার পানি প্রতিনিয়ত নদীর জলকে দুষিত করে। ১৯৮৬ সালে রাশিয়ায় চেরনোবিল পারমাণবিক দূর্ঘটনার ফলে পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটে। এছাড়া ১৯৬৩ সালে একটি মার্কিন নিউক্লীয় সাবমেরিন আটলান্টিক মহাসাগরে হারিয়ে যায় এবং সাগরে প্রচুর পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়ে পড়ে। সুন্দর জীবনের জন্য তো একটি নির্মল পরিবেশের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি!
সবাইকে নিয়ে বসতে হবে আলোচনা করতে হবে, কনফারেন্স-সেমিনার বৈঠক করে মানূষদের বোঝাতে হবে। সব ইস্যু বাদ দিয়ে পৃথিবীর সব দেশের প্রধান ব্যাক্তিরা মিলে একটা আলোচনায় আসবে- তাদের সবার একমত হতে হবে। পৃথিবীকে বাচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা! রাজনীতিবিদরা কুটনীতি নিয়ে ব্যস্ত। সরকারী আমলা'রা প্রশাসন নিয়ে ব্যস্ত। আর দরিদ্র মানুষ গুলো খাওয়া দাওয়ার বাইরে কিছু ভাবতে চায় না। একবার ভেবে দেখা উচিত- আমাদের কি পৃথিবীর জন্য, গাছের জন্য, নদীর জন্য, নতুন প্রজন্মের জন্য, প্রকৃতির জন্য কিছু কি করার নেই?
মানুষের সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে- কোনো কিছু নিয়ে না ভাবা। আমাদের সময় খুব কম-যা করার এখনই করতে হবে। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে- উদাসীন মানুষ গুলোকে মরুভূমিতে পাঠিয়ে দিতাম। যারা শুধু মাত্র নিজের পরিবার নিয়ে ভাবে- তাদের দুই বছর করে জেল দিতাম। আর যারা জলবায়ু- নদী, গাছপালা এবং প্রকৃতি ধ্বংস করে তাদের দেশ থেকে বের করে দিতাম। পৃথিবীর আসন্ন বিপদ নিয়ে কোনো রাষ্ট্র প্রধানের মাথা ব্যাথা নেই! মানুষ প্রয়োজনে-অপয়োজনে তীব্র শব্দ উৎপন্ন করে চলেছে। ফলে জ্ঞাতসারেই হোক বা অজ্ঞাতে, নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে যাচ্ছে।
বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের ওপর ভরসা রেখে জীবন পার করে দিলে হবে না।
প্রতিটা বিজ্ঞানী ক্ষমতাবা্নদের ইচ্ছায় চলে রোবটের মতন। বিজ্ঞানীদের বুদ্ধি আছে- কিন্তু তারা সেই বুদ্ধি নিজের ইচ্ছা মত ব্যবহার করতে পারে না। তাদের বানাতে হয়- নিউক্লিয়ার বোমা, মরণাস্ত্, মানুষকে অলস করে দেওয়ার যন্ত্রপাতি এবং সস্তা ক্যামিকেল। বিজ্ঞানীরা মানুষকে বোবা বানিয়ে রাখে-চমকে দেয়-নানান ম্যাজিক পণ্য তৈরি করে। মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে- এটা বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানীরা সব পারে।
ঈশ্বর হচ্ছে- বিজ্ঞান।
কিন্তু স্বশিক্ষিত লোক বুঝে বিজ্ঞানের দৌড় কতটুকু! আকাশে রকেট পাঠানো হয়, ঘরে বসে সরাসরি খেলা দেখি- পারমানবিক বোমা বানানো- আহ বিজ্ঞান!! একটা রকেটের নক্ষত্র পথ ভ্রমণ করতে কত সময় লাগে- কি পরিমাণ ফুয়েল প্রয়োজন হয়? কি পরিমান ডলার খরচ হয়! অন্যদিকে পৃথিবীর দরিদ্র দেশ গুলোতে- অশিক্ষা,খাদ্যভাব এবং নানান রোগ- তাহলে কি দরকার আকাশে রকেট পাঠিয়ে কোটি কোটি ডলার খরচ করার। সেই টাকা দিয়ে কি দরিদ্র দেশের মানূষের জীবনযাত্রা সুন্দর করে দেওয়া যায় না? আগে আমাদের কোনটা প্রয়োজন? মানুষের সুন্দর জীবন না নতুন একটা গ্রহ আবিস্কার?
মানুষ যদি আলোর গতি কে ধরতে পারে, তাহলে অনেক কিছুই অল্প সময়ে করা সম্ভব হবে। যদিও আইনস্টাইন বলেছেন- মানুষের পক্ষে আলোর গতি অর্জন করা অসম্ভব। আমাদের প্রকৃতি আগের নিয়ম থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেছে। অনেক কিছুই বদলে গেছে। আর পৃথিবী জুড়ে এই সকল পরিবর্তনের জন্য আমরা মানুষরাই দায়ী। অসচেতনতার কারণে প্রকৃতির অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান আমরা নষ্ট করে ফেলছি। এটা মোটেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের জীব বৈচিত্র্য।
বিজ্ঞানীরা আমাদের হাতে খেলনা দিয়ে- আমাদের কে চুপ করে রাখে।
কিন্তু ইঁদুর মরা গন্ধ কেউ আটকে রাখতে পারে না। আমেরিকা যদি রকেট উৎক্ষেপন বন্ধ রেখে- সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ব্যয় করে তাহলে পৃথিবী বেশী উপকার পাবে। শুধু হাততালি অথবা বাহবা পাওয়ার জন্য লোক দেখানো কাজ করলে পৃথিবীর কোনো উপকারে আসবে না। পৃ্থিবীর বেশীর ভাগ মানুষই আহাম্মক। অস্ত্র বানাতে গিয়ে মানুষ কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে- ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে গিয়ে কত সময় কত জীবনের অপচয় হচ্ছে? এটম বোমা? এক মিনিটেই মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা নাই হয়ে যাচ্ছে! মাটির নীচে তেল ফুরিয়ে আসছে! পৃথিবীর বাতাস বিষ হয়ে যাচ্ছে। বরফ গলে যাচ্ছে। তাহলে কি দরকার আমাদের বৈজ্ঞানিক সভ্যতার? গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এই বিষাক্ত গ্যাস আবার পৃথিবীর উপরিভাগের ওজোন স্তরের সাথে বিক্রিয়া করে তাতে ফাটল ধরিয়ে দেয়। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা। হাজার কোটি বছরের পুরনো হিমবাহ গুলো গলতে শুরু করেছে। তাতে বেড়ে চলেছে সাগরের পানির উচ্চতা। বিশ্বাস করতে ভালো লাগে- পৃথিবীর ভালো করার জন্য যারা ভাবছে- তারা অবশ্যই একটা পথ খুঁজে বের করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৭