প্রিয় কন্যা আমার-
নয় মাসে পা রাখার পরই তোমার জ্বর হলো। এবং খুব ঠান্ডা লেগে গেলো। যখন তোমার জ্বর আসে- হু হু করে বাড়তেই থাকে। রাতে আমি ঘুমাই না। একটু পরপর তোমার কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরের কি অবস্থা। জ্বর যখন বাড়তে থাকলো- আমি তোমার কপালে জল পট্রি দিতে থাকলাম। তাতে তোমার জ্বর কমেছে। আর বাড়েনি। কিন্তু ঠান্ডাটা কিছুতেই কমছে না। নাক দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। সুরভি তোমাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলো। তুমি ডাক্তারকে দেখেই হাসি দিয়ে দিলো। ডাক্তার তোমার হাসি দেখে বললেন- আপনার কন্যার কিছুই হয়নি। দেখুন কি সুন্দর করে হাসছে! তারপরও ডাক্তার তোমাকে একটা ভিটামিনের ওষুধ দিয়ে দিলেন।
প্রিয় ফারাজা তাবাসসুম-
এদিকে তোমার মায়েরও জ্বর, ঠান্ডা, কাশি। এখন অবশ্য সুরভির জ্বর কমেছে। যাই হোক, এবার গত পরশু আমি তোমাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। ডাক্তার তোমাকে দেখলেন। স্টেথোস্কোপ বুকে পিঠে লাগিয়ে দেখলেন। ডাক্তার কোনো সমস্যা খুঁজে পেলেন না। বললেন, এটা ভাইরাস জ্বর। চিন্তার কিছু নেই। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের বাসায় ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন আছে। প্রতিমাসে দুইবার তোমার ওজন মাপি। এখন তুমি আট কেজি। অথচ হাসপাতালে ওজন মাপার পর দেখা গেলো তুমি আট কেজি তিন শ' গ্রাম। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিন শ' গ্রাম বাড়লো কি করে? কিছুই বুঝতে পারছি না। ইদানিং তুমি খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছো। তোমাকে খাওয়াতে বসালেই তুমি দিকদারি শুরু করো।
প্রিয় ফারাজা তাবাসসুম ফাইহা-
কাগজ, টিস্যু এবং ডায়পার তুমি আগ্রহ নিয়ে খাও। এগুলো দেখলে তুমি খুশিতে নাচো। শক্ত করে ধরে খেতে শুরু করো। অথচ খিচুড়ী তুমি খেতে চাও না। নাসপাতির জুস কয়েক চামুচ মুখে দিলেও আপের জুস একদম খাচ্ছো না। প্রিয় কন্যা আমার, এখন তুমি ঘুমাচ্ছো। ঘুমানোর আগে জোর করে তোমাকে কয়েক চামুচ খিচুড়ী খাওয়ানো হয়েছে। তোমার ঘুম ভাঙ্গবে সকাল নয় টায়। অবশ্য ঘুমের মধ্যেও তোমাকে এক দুইবার দুধ খাওয়াতে হয়। এই কয়েকদিন আগে রাত তিনটায় তোমার ঘুম হঠাত ভেঙ্গে যায়। তুমি শুরু করলে কান্না। কিছুতেই তোমার কান্না থামে না। জ্বরে তুমি বেশ কাহিল। আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তোমাকে কোলে নিয়ে এক ঘন্টা হাঁটলাম। তোমার মা চোখে ঘুম নিয়ে জেগে বসে থাকলো।
প্রিয় কন্যা আমার-
এখন তোমাকে বাসার বর্তমান পরিস্থির কথা কিছু জানাই। তোমার দিদা সিটিকর্পোরেশন অফিসে গিয়েছিলো। বাড়ির কর দিতে। সিটি কর্পোরেশনের লোক তোমার দিদার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বলেছে সে সব ঠিকঠাক করে রাখবে। দশ দিন পর তোমার দিদা সিটিকরপোরেশন অফিসে গিয়ে দেখে- যাকে টাকা দেওয়া হয়েছে তার বদলি হয়ে গেছে চিটাগাং। তাকে ফোন দেওয়া হলো। সে বলল, কিচ্ছু করার নেই। এখন আমার চেয়ারে যে বসে তার সাথে যোগাযোগ করেন। তার সাথে যোগাযোগ করা হলো। সেই মহিলাও দশ হাজার নিলো এবং কাজের কাজ কিচ্ছু করলো না। তোমার দিদা সিটিকরপোরেশন অফিসে না গেলেই পারতো। আমরা বাসার কেউ একজন গেলেই বিশ হাজার টাকা গচ্চা যেতো না। চারিদিকে দুষ্টলোক দিয়ে ভরা। ভালো মানুষ নেই বললেই চলে।
প্রিয় ফাইহা-
আমার ছোট ভাইয়ের মেয়ে রোহা। রোহা তোমার চেয়ে ১৭ দিনের ছোট। কিন্তু সে বেশ চটপটে। হামাগুড়ি দিতে শিখে গেছে। হাতের কাছে কিছু পেলেই দাড়াতে পারে। তুমি তোমার জ্বরের কারনে বেশ দুর্বল হয়ে গেছো। তাই হামাগুড়ি দিতে পারছো না। খাট আলমারি ধরে একা একা দাঁড়াতেও পারছো না। অবশ্য এজন্য আমি আপসেট না। কারন আমি জানি এমাসের মধ্যেই তুমি পুরোপুরি হামাগুড়ি দিবে এবং খাট আলমারি বা দেয়াল ধরে একা দাড়াতে শিখে যাবে। ইদানিং আমি রাস্তায় তোমার বয়সী বাচ্চাদের দেখলেই তাকিয়ে থাকি। বাচ্চার মা বাবার কাছে জিজ্ঞেস করি- বয়স কত? ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করে তো? প্রিয় কন্যা আমার, তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন গুলো সত্যি করতে হবে। তুমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও। এখন আমি ঘুমাবো। আবার পরে তোমাকে নিয়ে লিখব।