ছবিঃ আমার তোলা।
ফলের দাম বেড়ে গেছে।
পরিবারের জন্য আমাকে প্রতি সপ্তাহে ফল কিনতে হয়। মালটা এখন কেজি ৩০০ শ' টাকা। সাধারনত মালটা ১৫০ টাকা কেজি হয়। হঠাত করে তিন শ' কেন হয়ে গেলো বুঝলাম না। লোকজন তিন শ' টাকা করেই কিনছে। কেউ কিচ্ছু বলছে না। ডাব এর দাম গত এক বছরে অনেক বেড়েছে। এখন একটা ডাব ১২০ টাকা। মালটা না হয় বিদেশী ফল- তাই দাম বেড়েছে। ডাবের দাম বৃদ্ধির কারন কি? ভাবা যায় একটা ডাব ১২০ টাকা! তবু লোকজন ১২০ টাকা দিয়েই ডাব কিনছে। দাম বাড়লে আমাদের দেশে কেউ আন্দোলন করে না। সবাই চুপ করে মেনে নেয়। সরকারের এদিকে কোনো নজর নেই। একটা ডাব ১২০ টাকা বা মালটা কেজি তিন শ' টাকা হবে- এটা কে নির্ধারন করেছে? আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি- বাংলাদেশে কোনো ভালো মানুষ নেই।
আজ দুপুরে আমি হোটেলে খেয়েছি।
হোটেলে প্রচন্ড ভিড়। বসার জায়গা পাওয়া বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার যেন। অতি সামান্য খাবার খেলাম। পুঁই শাক, ডাল আর ভাত। বিল হওয়ার কথা ৫০/৬০ টাকা। অথচ বিল হয়েছে- ১২০ টাকা। আহামরি কোনো রেস্টুরেন্ট নয়। খাবারের মানও ভালো নয়। ভাতের চাল গুলো মোটামোটা। এই হোটেলে আমি আরেকদিন খেয়েছি- রুই মাছ, ডাল আর ভাত। বিল হয়েছে ২৪০ টাকা। অতি সাধারণ খাবার। কোনো স্বাদ নেই। এক টুকরো রুই মাছ। সাথে কোনো তরকারী ছিলো না। সামান্য এক টুকরো আলুও ছিলো না। রেস্টুরেন্টওলারা সামান্য খাবারের এত দাম রাখছে কেন? রেস্টুরেন্ট ব্যবসার কি কোনো নিয়ম নীতি নেই? যা ইচ্ছা তাই-ই দাম রাখতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা বেশী দাম দিয়েই লোকজন খাচ্ছে। দাম নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।
গতকাল সন্ধ্যায় বাটা জুতোর দোকানে গিয়েছিলাম।
বাটার দোকানে বড় করে লেখা বিরাট মূল্য হ্রাস। ৭০% ডিসকাউন্ট। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখেছি- ডিসকাউন্ট না দিলেও যে দাম জুতোর গায়ে লেখা থাকে, ডিসকাউন্ট দেওয়ার পরও একই দাম লেখা। বাটা কোম্পানীর এরকম প্রতারনা করার কারন কি? এপেক্সও একই কাহিনী! ডিসকাউন্ট দেওয়া একটা জুতো হাতে নিলাম। তাতে দাম লেখা ৩৯০০ টাকা। জুতোর কোয়ালিটি দেখে মনে হলো- এই জুতোর সর্ব্বোচ দাম হতে পারে ৩০০ শ' টাকা। তাহলে এত দাম কেন জুতোর? অথবা ডিসকাউন্ট বলার কি আছে? ব্যবসা মানেই কি প্রতারনা? যা কিছু কিনতে যাই- দোকানদাররা ঠকাতে চায়। যেন আমাকে ঠকাতে পারলেই তাদের ব্যবসা সার্থক। প্রতিটা ব্যবসায়ীর মধ্যে এক এরকম চিন্তা ভাবনা। সৎ ব্যবসায়ী বাংলাদেশে নেই।
আমি রেডিমেট জামা কাপড় পড়ি না।
শার্ট প্যান্ট বানিয়ে পড়ি। বছরে তিনবার আমি অনেক গুলো করে শার্ট প্যান্ট বানাই। কাপড়ের দাম রাখে বেশি। তিন শ' টাকা শার্ট পিছের দাম চায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। আবার টেইলার্সে শার্ট প্যান্ট বানাতে গেলেও মুজুরি রাখে অনেক বেশি। একটা শার্ট বানাতে ওদের সর্ব্বোচ আশি টাকা খরচ হয়। অথচ নিচ্ছে ৪৫০ টাকা। একটা প্যান্ট বানাতে ওদের খরচ হয় সব্বোর্চ নব্বই টাকা খরচ অথচ নিচ্ছে ৫৫০ টাকা। কেউ সঠিক দাম নিচ্ছে না। বাংলাদেশটা এরকম হয়ে গেছে- যার যা মন চাইছে, করছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। সরকারের কোনো তদারকি নেই। সরকার ব্যস্ত পরিমনিকে। অথচ বড় বড় রাঘববোয়াল দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে তাদের ধরছে না। সরকারী অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সম্ভব না।
বাংলাদেশ হলো দুষ্টলোকদের দেশ।
আমি দুষ্টলোক নই। আমি অতি সাধারণ এবং সহজ সরল মানুষ। এই দেশে আমি আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না। এটা আমি বুঝে গেছি। এই দেশের প্রতিটা নাগরিক মনে করে কাউকে ঠকাতে পারলেই বুঝি জিতে গেলো। যারা নামাজ পড়ে, মুখ ভরতি দাঁড়ি রাখে- তারাও মানুষ ঠকায়। আমাদের এক আত্মীয় আছে। ব্যবসা করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী দাগ বসে গেছে। অথচ এই লোক ভয়াবহ ভন্ড এবং মিথ্যাবাদী। তার দোকানে সব সময় নকল মাল বিক্রি করা হয়। তিনি তার কাস্টমারদের বলেন- এই নিন ভালো জিনিস। আমি মিথ্যা বলি না। মাত্রই আমি নামাজ পড়ে এলাম। তাকে মানুষ বিশ্বাস করে নকল পণ্য কিনে বাসায় যায়। প্রতিদিন একই ঘটনা। তিনি গর্ব করেন মানুষকে বোকা বানাতে পারেন বলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৪