গত শুক্রবার একটা আলোচনায় গিয়েছিলাম।
আমি যেতে চাইনি আমাকে জোর করেই নিয়ে গেছে শফিক। শফিক বলেছে আমি তার সাথে গেলে সে সাহস পাবে। শফিককে সাহস দিতে আমি তার সাথে বাসাবো গেলাম। বাসাবো শফিকের শ্বশুর বাড়ি। শফিক আমার পরিচিত। বহু বছর ধরেই তাকে চিনি। জানি। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর শফিকের শ্বশুর বাড়ি গেলাম। শফিকের বউকে একদিন রাস্তায় দেখেছি। তাছাড়া আমার সাথে শফিকের শ্বশুর বাড়ির কারো পরিচিয় নেই। শফিকের বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হয়েছে। এক ছেলে আছে। ছেলের বয়স এক বছর হয়ে গেছে। শফিকের ছেলেকে দেখতে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
দুপুরে আমরা খেলাম।
পোলাউ, গরুর মাংস। রোষ্ট ছিলো- আমি খাই নি। আসলে রোস্টের চেহারা দেখে আর খেতে ইচ্ছা করে নি। খাবারের মান ভালো না। যাই হোক, তবু সামান্য খেলাম। আমরা গিয়েছি মোট দশ জন। সাথে শফিকের বাবা মা-ও আছেন। বড় বোন আছেন। দুই মামা আছেন। শফিকের স্ত্রী পক্ষের বেশ কয়েকজন আছেন। খাওয়া শেষে আলোচনা শুরু হলো। আমি শুকনো সুপারি চাবাচ্ছি। দুই পক্ষের সবার দিকে তাকাচ্ছি। সবাই যেন কেমন ক্ষেপে আছে। সবার চোখে মুখে রাগ-রাগ ভাব। আমি কি বক্তব্য দিবো তাই ভাবছি। শফিক আমাকে বলেছে, তার স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে। আজ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।
ছোট একটা রুমে দুই পক্ষের লোকজন বসেছে।
শফিকের স্ত্রী সোনিয়া বলল- সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আমার স্বামী শফিক একজন ভন্ড এবং ভয়াবহ মিথ্যাবাদী। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সে অতি ধার্মিক হয়ে গেছে। আমাকে নামাজ পড়তে বাধ্য করে। বোরখা পড়তে বাধ্য করে। প্রচন্ড গরমেও আমাকে হিজাব পড়তে হয়। অথচ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না। সে নিজে পুরোপুরি ধর্মের নিয়ম মানে না। কিন্তু আমাকে মানতে বাধ্য করে। সে বলে, আমি তার কথা মতো না চললে আমি জাহান্নামে যাবো। ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে তাহাজ্জুত পড়তে বলে। অথচ সকালে আমার অফিস আছে। আমার বাবা মারা যায় যখন আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়ি। এরপর আমি নিজে টিউশনি করে আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাই। মাস্টার্স শেষ করি। এখন চাকরী করছি।
সোনিয়া আরো বলে-
শফিক আমাকে যে সমস্ত কথা বলেছে সবই মিথ্যা বলেছে। সে চাকরী করে না। অথচ আমাকে বলেছে বড় কোম্পানীতে চাকরী করে। বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হয়ে গেছে- আজ পর্যন্ত আমাকে একটা শাড়িও কিনে দিতে পারে নি। আমার বাচ্চা হলো। হাসপাতালে অনেক টাকা বিল হয়েছে। সে একটা টাকাও দিতে পারে নি। আড়াই বছর হয়ে গেছে বিয়ের কিন্তু আমাকে আজও তুলে নিতে পারেনি। নিয়ে কোথায় যাবে? ঘর ভাড়া নেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। সে নিজেই থাকে বোনের বাড়িতে। গত আড়াই বছর ধরে তাকে আমি নিয়মিত হাত খরচ দিয়ে গেছি। খরচ না দিতে পারলে আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে। এমন কি আমার অসুস্থ মাকে গালি দেয়।
এবার শফিকের পালা-
শফিক বলল- আমি কোরআনের কসম খেয়ে বলছি, নবিজির কসম খেয়ে বলছি- আমি বিয়ের পর থেকে অনেক কিছু দিয়েছি। বহুবার বাজার করে দিয়েছি। শাড়ি দিয়েছি। এক ঝুড়ি আম কিনে দিয়েছি। আমি যদি চাকরী না করি তাহলে এসব কিভাবে দিলাম? আমি কি চুরী করে দিয়েছি? না পচা টমেটো বিক্রি করে দিয়েছি? হ্যাঁ এটা সত্যি এখন আমার চাকরী নেই। আল্লাহ হাজির নাজির- সোনিয়া যা যা বলেছে সব মিথ্যা বলেছে। এজন্য সে জাহান্নামে যাবে। আমি স্বামী হয়েও তাকে বাঁচাতে পারবো না। সোনিয়া মিথ্যুক। আমি তাকে ক্ষমা করলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। সোনিয়া আমার সাথে যে সমস্ত বেয়াদবি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।
এই পর্যায়ে দুই পক্ষ তুমুল লেগে গেলো।
আমি মাঝখানে চুপ করে বসে আছি। দুই পক্ষই অতি কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। একদম বস্তিবাসীর মতো ঝগড়া হচ্ছে। তখন সোনিয়ার মামা বললেন- আমরা সেপারেশন চাই। তালাক। এই রকম ভন্ড আর মিথ্যাবাদী ছেলের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখবো না। সম্পর্ক রাখবো না। যে ছেলে কামকাজ করে না। উলটা শ্বশুর বাড়ির সম্পদ দাবী করে। বসে বসে স্ত্রীর আয় খায়। আবার বড় বড় কথা বলে। ঘটনার এই পর্যায়ে ছেলের মামা বললেন- যা হয়েছে, অনেক হয়েছে। দুই পক্ষেরই দোষ আছে। আগের সব ঘটনা ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবনযাপন শুরু করলেই হয়। আজ আমরা স্বামী স্ত্রীর সমস্যা সমাধান করতে বসেছি। ছাড়াছাড়ির জন্য না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৬