somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৬০

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত শুক্রবার একটা আলোচনায় গিয়েছিলাম।
আমি যেতে চাইনি আমাকে জোর করেই নিয়ে গেছে শফিক। শফিক বলেছে আমি তার সাথে গেলে সে সাহস পাবে। শফিককে সাহস দিতে আমি তার সাথে বাসাবো গেলাম। বাসাবো শফিকের শ্বশুর বাড়ি। শফিক আমার পরিচিত। বহু বছর ধরেই তাকে চিনি। জানি। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর শফিকের শ্বশুর বাড়ি গেলাম। শফিকের বউকে একদিন রাস্তায় দেখেছি। তাছাড়া আমার সাথে শফিকের শ্বশুর বাড়ির কারো পরিচিয় নেই। শফিকের বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হয়েছে। এক ছেলে আছে। ছেলের বয়স এক বছর হয়ে গেছে। শফিকের ছেলেকে দেখতে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম।

দুপুরে আমরা খেলাম।
পোলাউ, গরুর মাংস। রোষ্ট ছিলো- আমি খাই নি। আসলে রোস্টের চেহারা দেখে আর খেতে ইচ্ছা করে নি। খাবারের মান ভালো না। যাই হোক, তবু সামান্য খেলাম। আমরা গিয়েছি মোট দশ জন। সাথে শফিকের বাবা মা-ও আছেন। বড় বোন আছেন। দুই মামা আছেন। শফিকের স্ত্রী পক্ষের বেশ কয়েকজন আছেন। খাওয়া শেষে আলোচনা শুরু হলো। আমি শুকনো সুপারি চাবাচ্ছি। দুই পক্ষের সবার দিকে তাকাচ্ছি। সবাই যেন কেমন ক্ষেপে আছে। সবার চোখে মুখে রাগ-রাগ ভাব। আমি কি বক্তব্য দিবো তাই ভাবছি। শফিক আমাকে বলেছে, তার স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে। আজ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।

ছোট একটা রুমে দুই পক্ষের লোকজন বসেছে।
শফিকের স্ত্রী সোনিয়া বলল- সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আমার স্বামী শফিক একজন ভন্ড এবং ভয়াবহ মিথ্যাবাদী। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সে অতি ধার্মিক হয়ে গেছে। আমাকে নামাজ পড়তে বাধ্য করে। বোরখা পড়তে বাধ্য করে। প্রচন্ড গরমেও আমাকে হিজাব পড়তে হয়। অথচ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না। সে নিজে পুরোপুরি ধর্মের নিয়ম মানে না। কিন্তু আমাকে মানতে বাধ্য করে। সে বলে, আমি তার কথা মতো না চললে আমি জাহান্নামে যাবো। ঘুম থেকে উঠিয়ে আমাকে তাহাজ্জুত পড়তে বলে। অথচ সকালে আমার অফিস আছে। আমার বাবা মারা যায় যখন আমি ইন্টারমিডিয়েট পড়ি। এরপর আমি নিজে টিউশনি করে আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাই। মাস্টার্স শেষ করি। এখন চাকরী করছি।

সোনিয়া আরো বলে-
শফিক আমাকে যে সমস্ত কথা বলেছে সবই মিথ্যা বলেছে। সে চাকরী করে না। অথচ আমাকে বলেছে বড় কোম্পানীতে চাকরী করে। বিয়ে হয়েছে আড়াই বছর হয়ে গেছে- আজ পর্যন্ত আমাকে একটা শাড়িও কিনে দিতে পারে নি। আমার বাচ্চা হলো। হাসপাতালে অনেক টাকা বিল হয়েছে। সে একটা টাকাও দিতে পারে নি। আড়াই বছর হয়ে গেছে বিয়ের কিন্তু আমাকে আজও তুলে নিতে পারেনি। নিয়ে কোথায় যাবে? ঘর ভাড়া নেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। সে নিজেই থাকে বোনের বাড়িতে। গত আড়াই বছর ধরে তাকে আমি নিয়মিত হাত খরচ দিয়ে গেছি। খরচ না দিতে পারলে আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে। এমন কি আমার অসুস্থ মাকে গালি দেয়।

এবার শফিকের পালা-
শফিক বলল- আমি কোরআনের কসম খেয়ে বলছি, নবিজির কসম খেয়ে বলছি- আমি বিয়ের পর থেকে অনেক কিছু দিয়েছি। বহুবার বাজার করে দিয়েছি। শাড়ি দিয়েছি। এক ঝুড়ি আম কিনে দিয়েছি। আমি যদি চাকরী না করি তাহলে এসব কিভাবে দিলাম? আমি কি চুরী করে দিয়েছি? না পচা টমেটো বিক্রি করে দিয়েছি? হ্যাঁ এটা সত্যি এখন আমার চাকরী নেই। আল্লাহ হাজির নাজির- সোনিয়া যা যা বলেছে সব মিথ্যা বলেছে। এজন্য সে জাহান্নামে যাবে। আমি স্বামী হয়েও তাকে বাঁচাতে পারবো না। সোনিয়া মিথ্যুক। আমি তাকে ক্ষমা করলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। সোনিয়া আমার সাথে যে সমস্ত বেয়াদবি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।

এই পর্যায়ে দুই পক্ষ তুমুল লেগে গেলো।
আমি মাঝখানে চুপ করে বসে আছি। দুই পক্ষই অতি কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। একদম বস্তিবাসীর মতো ঝগড়া হচ্ছে। তখন সোনিয়ার মামা বললেন- আমরা সেপারেশন চাই। তালাক। এই রকম ভন্ড আর মিথ্যাবাদী ছেলের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখবো না। সম্পর্ক রাখবো না। যে ছেলে কামকাজ করে না। উলটা শ্বশুর বাড়ির সম্পদ দাবী করে। বসে বসে স্ত্রীর আয় খায়। আবার বড় বড় কথা বলে। ঘটনার এই পর্যায়ে ছেলের মামা বললেন- যা হয়েছে, অনেক হয়েছে। দুই পক্ষেরই দোষ আছে। আগের সব ঘটনা ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবনযাপন শুরু করলেই হয়। আজ আমরা স্বামী স্ত্রীর সমস্যা সমাধান করতে বসেছি। ছাড়াছাড়ির জন্য না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×