কয়েক বছর আগে টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম-
সেখানে সবাই বলেছিলো- বেঁচে দাও। বেঁচে দাও। আজ বঙ্গবন্ধুকে বেচা হচ্ছে হরদম। যে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে! এখন সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। সহজ সরল সত্য কথা হলো- বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আর পাকি সৈনিকের মধ্যে পার্থক্য তেমন একটা নাই। বঙ্গবন্ধু নামের পাশাপাশি শেখ হাসিনার নামও বিক্রি হচ্ছে বেশ। এমন কি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলের নামও বিক্রি হচ্ছে। কেউ সংগঠন করছে। নাম দিচ্ছে শেখ রাছেল বা শেখ কামাল। আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী। ঠিক তেমনি হাজার হাজার সংগঠন। এসব সংগঠনের সভাপতি আছে। সভাপতি ক্ষমতার জোড়ে ফুটপাত ভাড়া দিচ্ছে। এমন কি চিপাচাপা, দুই তিন হাত জায়গাও ভাড়া হচ্ছে। এডভান্স নিয়ে ভাড়া দিচ্ছে। প্রতিদিন অথবা মাস শেষে ভাড়া নিচ্ছে। আওয়ামীলীগের পাটি অফিস থেকে শুরু পুরো গুলিস্তান এলাকা এই আওয়ামীলীগওয়ালা ও তাদের সংগঠনের সভাপতিদের দখলে। দল এবং সংগঠনের নামে চলছে ফুটপাত দখল এবং চাঁদাবাজি। পশু গুলো দেবতা হয়ে উঠতে চাইছে, শুধু নাম ব্যবহার করে।
গুলিস্তান এলাকায় চলে ক্ষমতার লড়াই।
ফুটপাত দখল নিয়ে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপ ক'দিন পরপর মারামারি কাটাকাটি করে। অবশ্য ফুটপাতের টাকার ভাগ পুলিশও পায়। গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতের টাকা তুলে সুলতান। এই সুলতান পিস্তল নিয়ে বেশ কয়েকবার ধরা খেয়েছে। আগে সে বিএনপি করতো। ফুটপাতসহ বিভিন্ন দোকানে চড়া মূল্যে বিদ্যুতের লাইন দেয় খাজা। খাজা সাহেব আবার গোপাল শাহ মাজারে সপ্তাহে একদিন খিচুড়ি রান্না করে দরিদ্রদের খাওয়ান। খাজা সাহেব গুলিস্তান এলাকার কমপক্ষে দুই শ' দোকানে অবৈধ্য বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। আওয়ামীলীগের কয়েকজন পাতি নেতাও বেশ কিছু দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। বিদ্যু এবং ফুটপাত থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় হয় প্রতিমাসে। এই টাকা কই কই যায় এবং কারা কারা খায় তা কি শেখ হাসিনা জানেন? অথবা বিদ্যুৎ অফিস? বিএনপির আমলে এই টাকা পুলিশসহ পেতো বিএনপির লোকজন। এই ভাবেই তো সারা দেশ চলছে। যুগ যুগ ধরে। পত্রিকায় এসব কথা আসে না কেন? সাংবাদিকরা এসব নিয়ে লিখছেন না কেন! কারন তারাও ধান্ধাবাজ।
খিলগাও রেলগেট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত টেম্পু ভাড়া ১৫ টাকা।
অথচ ন্যায্য ভাড়া হওয়া উচিত ৫ টাকা। তাহলে দশ টাকা বেশি কেন নিচ্ছে? যদিও বলে গুলিস্তান। টেম্পু যায় 'রাজউক' পর্যন্ত। আসল কথায় আসি। প্রতিদিন একটা টেম্পু থেকে ৭০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। পুরো ঢাকা শহরের মধ্যে খিলগাও টু গুলিস্তান এর চাঁদা সবচেয়ে বেশি। এত টাকা গাবতলী বাস টার্মিনাল, সায়দাবাদ অথবা কমলাপুর থেকেও নেওয়া হয় না। টেম্পু গুলো খুবই বাজে ভাবে চালায়। টেম্পু ড্রাইভার টেম্পু চালানোর আগে গাঁজা খেয়ে নেয়। পারলে তাড়া রাস্তাঘাট ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে যাবে। টেম্পুওলাদের চিন্তা একটাই যেভাবেই হোক সারাদিনে অনেক গুলো ক্ষেপ দিতেই হবে। মালিককে দিতে হবে ছয় শ', চাঁদা দিতে হবে সাত শ'। নিজের জন্য রাখতে হবে কমপক্ষে পাঁচ শ' টাকা। টেম্পু গুলো প্রতিদিন অনেক গুলো দূর্ঘটনা ঘটায়। খিলগাও থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত পারমিট আছে মোট ৪০ টা টেম্পুর। অথচ প্রতিদিন চলছে ৯০ টা টেম্পু। এবং কোনো টেম্পুর বৈধ কাগজপত্র নেই। টেম্পু থেকে চাদার টাকা সিটি কর্পোরেশন পায়, পুলিশ পায় এবং স্থানীয় নেতাও পায়।
বহু লোক নদী পথে গ্রামে যায়।
সদরঘাট এলাকায় লঞ্চে উঠার আগেই চাঁদা দিতে হয়। নিজের জন্যও চাঁদা দিতে হয় এবং মালামালের জন্যও চাঁদা দিতে হয়। আপনি যত বড় কুতুব'ই হোন না কেন আপনাকে চাঁদা দিতেই হবে। ধরুন আপনি লঞ্চে উঠবেন। আপনার হাতে একটা টিভি। এই টিভির জন্যও আপনাকে চাঁদা দিতে হবে। চাদার পরিমানও অনেক। পাঁচ শ' টাকা। ধরুন আপনার কাঁধে ব্যাগ। এই ব্যাগের জন্যও চাঁদা দিতে হবে। গ্রামে গেলে সাধারনত মানুষ খালি হাতে যায় না। পরিবারের জন্য কিছু না কিছু নিয়েই যায়। আর লঞ্চে উঠার আগেই ঘাটে আপনাকে চাঁদা দিতেই হয়। এই চাঁদা নিয়ে কোনো রসিদ দেয় না। তাঁরা বলে এই লঞ্চঘাট তাঁরা সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছে। তাই এই ঘাট থেকে লঞ্চে উঠতে হলে টাকা দিতেই হবে। এমন কি আপনি স্টেডিয়াম থেকে টিভি, ফ্রিজ, এসি যা-ই কিনুন না কেন গেট থেকে বের হওয়ার সময় আপনাকে টাকা দিতে হবে। পুরো স্টেডিয়াম এলালায় সব গুলো গেটে লোক দাঁড়িয়ে থাকে টাকা নেওয়ার জন্য।
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৩১