somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজকের ডায়েরী- ৯৩

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

আজ একটা অন্য রকম ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনা শুরু এভাবে- ফারাজা ক'দিন ধরে খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে করছে না। ভোর পাঁচ টায় কন্যা ঘুম থেকে উঠেছে। কিন্তু তার ঘুম থেকে উঠার কথা ছিলো সকাল আট টায়। প্রতিদিন সে আট টায় ঘুম থেকে উঠে। যাই হোক, তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো- কিন্তু কিছুই খেলো না। সে বাইরে যেতে চাচ্ছে। তখনও আকাশ ফর্সা হয়নি। ফযরের আযানও দেয়নি। তাছাড়া এই ঠান্ডায় কি করে বাইরে যাই? কিন্তু ফারাজা বাইরে যাবেই। ঘরের ভেতর কন্যাকে কোলে নিয়ে পায়চারি করছি। একসময় কন্যা ঘুমিয়ে গেল। সুরভিও ঘুমালো। কিন্তু আমার আর ঘুম আসে না। একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর আমার ঘুম আসে না। কিছুতেই না।

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি।
ঠিক করে ফেললাম। সাত টা বাজলে বাইরে যাবো। কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করবো। তারপর হোটেলে সকালের নাস্তা করবো। যেই ভাবা সেই কাজ। বাসা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কমলাপুর রেলস্টেশন গেলাম। সেখান থেকে এলাকায় এসে নাস্তা করতে হোটেলে গেলাম। বেশ আরাম করেই নাস্তা খেলাম। আমাদের বাসার কাছে হোটেল টায় নানান রকম খাবার পাওয়া যায়। সব গুলো খবারই খুব স্বাদ হয়। পরোটা খেলাম তিনটা। ডিম ভাজি আর কলিজা ভূণা দিয়ে। শেষে এক কাপ দুধ চা। হোটেলে যে নাস্তা খেলাম এটা বাসায় বলা যাবে না। সুরভি ভয়ঙ্কর রাগ করবে। ঘরসংসার করলে কতদিক যে সামলাতে হয়।

বাসার কাছে এসে দেখি-
এক বয়স্ক মহিলা আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। খুব কাঁদছে। পরিচিত অপরিচিত কারো চোখের আমি সহ্য করতে পারি না। সকাল বেলা বয়স্ক এক মহিলা কাঁদছে! মহিলার কান্না দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আশে পাশে বেশ কিছু মানুষ জমে গেছে। আমি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম- কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে? মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, তার স্বামী অসুস্থ। হাসপাতালে ভরতি। সে গত তিন চার দিন ভিক্ষা করে ৫ হাজার ৬ শ' টাকা পেয়েছে। টাকাটা সে আমাদের বাসার গলিতে কোথাও হারিয়ে ফেলেছে। এখন অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা কিভাবে হবে? টাকার শোকে মহিলা কাঁদছে। খুব কাঁদছে। ৫ হাজার ৬ শ টাকা খুব বেশি টাকা না। আবার কারো কারো কাছে অনেক টাকা। মনে মনে ভাবছি কি করা যায়?

আমার কাছে টাকা নেই।
সকালে ৫ শ' টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। দেড় শ' টাকার নাস্তা খেয়ে ফেলেছিল। ইচ্ছা ছিলো নাস্তায় ৩৫ টাকা খরচ করবো। মহিলা সমানে কেঁদেই যাচ্ছে। কেঁদেই যাচ্ছে। হাহাকার ভরা তার কান্নায়। আশেপাশের লোকজন আগ্রহ নিয়ে মহিলার কান্না দেখছে। মনে মনে ভাবলাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে মহিলাকে দিয়ে দিব। এমন সময় বড় ভাই নিচে নেমে এসে বলল- কি হয়েছে? এত হইচই কেন? আমি ঘটনা বললাম। বড় ভাই পুরো ৫ হাজার ৬ শ' টাকা মহিলাকে দিয়ে দিলো। মহিলা টাকা পেয়ে আরো কিছুক্ষন কান্না করলো। যাই হোক, আমার বড় ভাই সব সময় গরীব দুঃখীদের সাহায্য করে থাকে। করোনার সময় বহু মানুষকে নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সে যাগকে। বড় ভাইয়ের কথা অন্য কোনো সময় লিখব।

মহিলা চলে গেল।
এরপর এলাকার মানুষ চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। এলাকার মুরুব্বীরা বললেন, এই মহিলা ভন্ড। এই মহিলার কাজই হচ্ছে- একদিন একেক এলাকায় গিয়ে কান্না করা। তাকে টাকা দেওয়া ঠিক হয় নাই। ভুল হইছে। অন্যায় হইছে। কেউ কেউ বলছে- টাকা দিয়ে সোয়াবের কাজ করছে। মুরুব্বীরা হইচই করতে করতে একজন আরেকজনের সাথে বিরাট ঝগড়া লাগিয়ে দিলো। ঝগড়ায় দুই দল। এক দল আরেক দলের উপর আঙুল তুলে কথা বলছে। যাই হোক, শেষমেষ অল্পতেই ঝগড়া থামছে। হাতাহাতি হয়নি। হয়তো মহিলা মিথ্যাবাদী। তার পেশাই এরকম। অথবা সত্যিই মহিলার টাকা হারিয়েছে। আমার ধারনা, মহিলা মিথ্যা অভিনয় করেনি। তার কান্না আমি দেখেছি। এই কান্না একদম বুকের ভিতর থেকে উঠে এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×