আজ একটা অন্য রকম ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনা শুরু এভাবে- ফারাজা ক'দিন ধরে খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে করছে না। ভোর পাঁচ টায় কন্যা ঘুম থেকে উঠেছে। কিন্তু তার ঘুম থেকে উঠার কথা ছিলো সকাল আট টায়। প্রতিদিন সে আট টায় ঘুম থেকে উঠে। যাই হোক, তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলো- কিন্তু কিছুই খেলো না। সে বাইরে যেতে চাচ্ছে। তখনও আকাশ ফর্সা হয়নি। ফযরের আযানও দেয়নি। তাছাড়া এই ঠান্ডায় কি করে বাইরে যাই? কিন্তু ফারাজা বাইরে যাবেই। ঘরের ভেতর কন্যাকে কোলে নিয়ে পায়চারি করছি। একসময় কন্যা ঘুমিয়ে গেল। সুরভিও ঘুমালো। কিন্তু আমার আর ঘুম আসে না। একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর আমার ঘুম আসে না। কিছুতেই না।
চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি।
ঠিক করে ফেললাম। সাত টা বাজলে বাইরে যাবো। কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করবো। তারপর হোটেলে সকালের নাস্তা করবো। যেই ভাবা সেই কাজ। বাসা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কমলাপুর রেলস্টেশন গেলাম। সেখান থেকে এলাকায় এসে নাস্তা করতে হোটেলে গেলাম। বেশ আরাম করেই নাস্তা খেলাম। আমাদের বাসার কাছে হোটেল টায় নানান রকম খাবার পাওয়া যায়। সব গুলো খবারই খুব স্বাদ হয়। পরোটা খেলাম তিনটা। ডিম ভাজি আর কলিজা ভূণা দিয়ে। শেষে এক কাপ দুধ চা। হোটেলে যে নাস্তা খেলাম এটা বাসায় বলা যাবে না। সুরভি ভয়ঙ্কর রাগ করবে। ঘরসংসার করলে কতদিক যে সামলাতে হয়।
বাসার কাছে এসে দেখি-
এক বয়স্ক মহিলা আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। খুব কাঁদছে। পরিচিত অপরিচিত কারো চোখের আমি সহ্য করতে পারি না। সকাল বেলা বয়স্ক এক মহিলা কাঁদছে! মহিলার কান্না দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো। আশে পাশে বেশ কিছু মানুষ জমে গেছে। আমি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম- কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে? মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, তার স্বামী অসুস্থ। হাসপাতালে ভরতি। সে গত তিন চার দিন ভিক্ষা করে ৫ হাজার ৬ শ' টাকা পেয়েছে। টাকাটা সে আমাদের বাসার গলিতে কোথাও হারিয়ে ফেলেছে। এখন অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা কিভাবে হবে? টাকার শোকে মহিলা কাঁদছে। খুব কাঁদছে। ৫ হাজার ৬ শ টাকা খুব বেশি টাকা না। আবার কারো কারো কাছে অনেক টাকা। মনে মনে ভাবছি কি করা যায়?
আমার কাছে টাকা নেই।
সকালে ৫ শ' টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। দেড় শ' টাকার নাস্তা খেয়ে ফেলেছিল। ইচ্ছা ছিলো নাস্তায় ৩৫ টাকা খরচ করবো। মহিলা সমানে কেঁদেই যাচ্ছে। কেঁদেই যাচ্ছে। হাহাকার ভরা তার কান্নায়। আশেপাশের লোকজন আগ্রহ নিয়ে মহিলার কান্না দেখছে। মনে মনে ভাবলাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে মহিলাকে দিয়ে দিব। এমন সময় বড় ভাই নিচে নেমে এসে বলল- কি হয়েছে? এত হইচই কেন? আমি ঘটনা বললাম। বড় ভাই পুরো ৫ হাজার ৬ শ' টাকা মহিলাকে দিয়ে দিলো। মহিলা টাকা পেয়ে আরো কিছুক্ষন কান্না করলো। যাই হোক, আমার বড় ভাই সব সময় গরীব দুঃখীদের সাহায্য করে থাকে। করোনার সময় বহু মানুষকে নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সে যাগকে। বড় ভাইয়ের কথা অন্য কোনো সময় লিখব।
মহিলা চলে গেল।
এরপর এলাকার মানুষ চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। এলাকার মুরুব্বীরা বললেন, এই মহিলা ভন্ড। এই মহিলার কাজই হচ্ছে- একদিন একেক এলাকায় গিয়ে কান্না করা। তাকে টাকা দেওয়া ঠিক হয় নাই। ভুল হইছে। অন্যায় হইছে। কেউ কেউ বলছে- টাকা দিয়ে সোয়াবের কাজ করছে। মুরুব্বীরা হইচই করতে করতে একজন আরেকজনের সাথে বিরাট ঝগড়া লাগিয়ে দিলো। ঝগড়ায় দুই দল। এক দল আরেক দলের উপর আঙুল তুলে কথা বলছে। যাই হোক, শেষমেষ অল্পতেই ঝগড়া থামছে। হাতাহাতি হয়নি। হয়তো মহিলা মিথ্যাবাদী। তার পেশাই এরকম। অথবা সত্যিই মহিলার টাকা হারিয়েছে। আমার ধারনা, মহিলা মিথ্যা অভিনয় করেনি। তার কান্না আমি দেখেছি। এই কান্না একদম বুকের ভিতর থেকে উঠে এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৬