somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

লাল চা, লাল আটার রুটি

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

বহু বছর আগের ঘটনা।
এলজিইডি'র ডাক বাংলোয় উঠেছিলাম। শীতকাল ছিলো। খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কাউকে কিছু না জানিয়ে একা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে যাই। একদম ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছে একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। অতি দরিদ্র গ্রাম। গ্রামের অনেকখানি ঘুরে বেড়ালাম। একটাও পাকা বাড়ি দেখলাম। এমিন কি পাকা মসজিদ বা মন্দিরও দেখলাম না। মাটির রাস্তা। রাস্তা ভেজা ভেজা কুয়াশার কারণে। সকাল সাত টা বাজে। এক কাপ চা খাবো কোনো দোকান চোখে পড়লো না। শীতের সকালে এক কাপ চা খেতে না পারলে ভালো লাগে! শহরে তো মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান।

একটা বাড়ির সামনে দাড়ালাম।
আসলে বাড়ি বলা ঠিক না। মাটির ঘর। উপরে ছন। মাটি ফেটে গেছে নানান জায়গা দিয়ে। একদম হত দরিদ্র অবস্থা। আমাদের দেশের মানুষ গুলো খুব বেশি দরিদ্র। উঠানে তিনটা দশ বারো বছরের ছেলে মেয়ে। তাদের পোষাকের অবস্থা শোচনীয়। পায়ে জুতো নেই। কিন্তু তিনজনের মুখে হাসি। আমাকে দেখে তিনজনই দৌড়ে এলো। আমি বাচ্চাদের বললাম, ঢাকা থেকে এসেছি। ডাক বাংলোয় উঠেছি। হাঁটতে হাঁটতে তোমাদের বাড়ির সামনে এলে এসেছি। আমাকে কি এক কাপ আগুন গরম চা খাওয়াতে পারবে? এমন সময় ছেলে মেয়েদের মা ঘর থেকে বের হয়ে এলো। বলল, আপনি বসুন চা দিচ্ছি।

আমি উঠানে বসলাম।
দুই ছেলে মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। মেয়েটা আমার পাশে বসলো। বাচ্চা মেয়েটার মুখ ভীষন রকমের মিষ্টি। আমি বললাম, তুমি যাও, তোমাকে মাকে সাহায্য করো। মেয়েটা বলল, আমি খুব অসুস্থ। মা আমাকে কোনো কাজ করতে দেয় না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বাবা কোথায়? মেয়েটা বলল, বাবা শহরে গেছে। আজ বিকেলে আসবে। আসার সময় আমাদের জন্য রাতা মোরগ নিয়ে আসবে। আমি বললাম, তোমার বাবা কি কাজ করেন? মেয়েটা বলল জানি না। মনে হয় কুলির কাজ। আমি মেয়েটাকে বললাম, কুলির কাজ কি তুমি জানো? মেয়েটা বলল, কষ্টের কাজ। অনেক কষ্ট। আব্বা বলেছে।

দুই ছেলে মিলে মাটির চুলায় আগুন ধরাচ্ছে।
মা আটা মাখছে। মা ছোট ছেলেকে বলল, ঘরের ভিতর থেকে লবন নিয়ে আসো। ছোট ছেলে এক দৌড় দিয়ে লবন নিয়ে এলো। আধা ঘন্টার মধ্যে আমাকে দুটা লাল আটার রুটি আর লাল চা দেওয়া হলো। ঘরে চিনি ছিলো না। তাই চায়ে এক চিমটি লবন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন ভাইবোন লাল চায়ে লাল আটার রুটি ভিজিয়ে খাচ্ছে। শক্ত রুটি আর চিনি ছাড়া চা নিশ্চয়ই খুব মজার কিছু না। অথচ পরিবারের সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যে আমার মায়ের কথা মনে পড়লো। মা খুব সকালে উঠে আমাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে রাখতো। নাস্তার সাথে অনেক কিছু থাকতো।

আমি ডাক বাংলোয় ফিরে এলাম।
গোছল করলাম গরম পানি দিয়ে। ডাইনিং এ খেতে গেলাম। দেখি নানা রকম খাবার। রুটি গুলো খুব নরম। ভাজি, ডাল, ডিমসহ আরো অনেক কিছু। পাউরুটি, জেলিও আছে। চা-কফি দুটাই আছে। বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে। লাল আটার শক্ত রুটি আর চিনি ছাড়া লাল চা। একটা হত দরিদ্র পরিবার। ভাঙ্গা বাড়ি। বাচ্চা গুলোর চোখ মুখ মলিন। পায়ে জুতো নেই। পরিবারের প্রধান ব্যাক্তি শহরে কুলির কাজ করে। আমি ওদের কোনো সাহায্য করি নি। খোজ নিইনি তিন ভাইবোন স্কুলে পড়ে কিনা। দুপুরে আজ ওরা কি খাবে? ঘরে চাল আছে তো? বিকেলে কি বাবা রাতা মোরগ নিয়ে সত্যি সত্যি আসবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৩৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×