
মানুষের সর্বশেষ গন্তব্য মৃত্যু।
আগামীকাল যে আত্মহত্যা করবে তার মৃতদেহের জন্য মানব-সভ্যতার তরফ থেকে দুঃখ বা সমবেদনা না জানিয়ে- ধিক্কার ও ঘৃনা। কোনো মানুষই ধোয়া তুলসী পাতা না, অলি-আউলিয়াও না। আমিও না, আপনিও না, যে আত্মহত্যা করে সে-ও না। চাঁদ জড় পদার্থ হয়েও যদি তার কলঙ্ক থাকতে পারে, আমরা তো গতিশীল জীব! ভুল ত্রুটি থাকবেই। চাঁদের অবস্থানের সাথে আত্মহত্যার কিছুটা সম্পর্ক আছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে আমাদের সারকেইডিয়ান রিদমের পরিবর্তন হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বেঁচে আছি কেন?
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। এবং বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। শুধু হতাশা নয়, একজন মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে নিঃসঙ্গ হলে তবেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কোরআনে লেখা আছে- 'আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০]
কেউ হঠাৎ করে আত্মহত্যা করে না।
আত্মহত্যা নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখেছি,পড়েছি। সবার জীবনেই কোনো না কোনো সময় হতাশা আসে, দুঃখ আসে। কিন্তু আত্মহত্যার মতন চরম অবনতি খুব কম জনেই বেছে নিতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি যে, আমরা সফল হবো, আমদের সবাই চিনবে, জানবে, একটু অতিরিক্ত কদর করবে, সম্মান করবে। কে না চায় এই সম্মান, যশ, খ্যাতি? যে ব্যক্তি যত বেশি পরিচিত মানুষদের নিকট তাদের কাজ, কথা, চিন্তা সবকিছুতেই জনসাধারন কি ভাববে, কি বলবে এসব চিন্তা মারাত্নক প্রভাব বিস্তার করে।
প্রতিটা আত্মহত্যাই আসলে হত্যা।
'আমার হৃদয় এর ভিতর। সেই সুপক্ক রাত্রির গন্ধ পাই আমি।' এ লাইনটা লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মত লেখকও আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের এক সবল, সজীব ও পরিচ্ছন্ন সমাজের দরকার। যে সমাজ ও রাষ্ট্র সবচেয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে। আমি বলতে চাই- মানুষ তুমি। বাঁচতে শিখো। কেউ পাত্তা না দিলে নিজের মনটাকে বিভিন্নভাবে শক্ত করো। পৃথিবীতে কত কিছু করার আছে! বই আছে, গান আছে, মুভি আছে। কতশত ঘুরে বেড়ানোর জায়গা আছে। মানুষ তুমি নিজেকে শেষ করে দিও না।
আত্মহত্যা একটা প্রবণতা।
আর এই আত্মহত্যা প্রবণতা জন্মায় মানসিক রোগ থেকে। আমি যে স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই সেই স্তরে আমি এত বছরেও পৌঁছতে পারিনি। হতে পারে আমি উচ্চাভিলাষী। এবার আমি যদি বলি যে, সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে না পারার জন্য কাল আমি আত্মহত্যা করব। পৃথিবীর কেউ জানুক কিংব না জানুক আমি জানি। আমার জীবনে আমিই সুপারস্টার। আমিই হিরো। আপনার জীবনে আপনি সুপারস্টার। আপনি হিরো বা হিরোইন। সুতরাং প্রেক্ষাপট যাই থাকুক না কেন! মানসিক যন্ত্রণা যতটাই তীব্র হোক না কেন! আত্মহত্যার ঘৃণ্য অপরাধ করলে মৃত্যুর পরেও অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মৃত্যুর পরও ভোগ করতে হবে আত্মহত্যা করার জন্য ধিক্কার। তীব্র যন্ত্রনা।
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




