somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

লাবনী তোমাকে ভুলিনি

০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ সংগ্রহ।

তখন আমার বয়স অল্প।
১৮ বছর হবে সম্ভবত। আমি ট্রেনে করে চিটাগাং যাচ্ছি মামার বাসায়। এখনো সেই ট্রেনটার নাম মনে আছে 'তৃনা নিশীথে'। প্রচন্ড শীত। চারিদিকে কুয়াশা। আমার ভাগ্য ভালো, ট্রেনে খুব একটা ভিড় নেই। বাস থেকে ট্রেন'ই আমার বেশী ভালো লাগে। রাতের ট্রেন। ঢাকা থেকে চলেছি চিটাগাং এর উদ্দেশ্যে। আমি একাই যাচ্ছি। এর আগেও আমি অনেকবার একা যাতায়াত করেছি। আমি খুব সহজ সরল ছেলে। দেখতে সুন্দর। পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালো। সব সময় ফিটফাট হয়ে থাকি। লেখাপড়ায় খুব ভালো।

আমি যে ট্রেনের কামরায় উঠেছি।
সেটা একটা কেবিন। কেবিনটা চারজনের। সুন্দর কেবিন। পা ছড়িয়ে শোয়া যাবে আরাম করে। ঢাকা থেকে কোনো প্যাসেঞ্জার উঠেনি। আপাতত আমি একাই আছি কামরায়। সাথে শার্লক হোমস আছে। ব্যোমকেশ আছে- পড়ে রাত ভোর করে ফেলতে পারবো। বাসে বই পড়ে আরাম পাওয়া যায় না। কিন্তু ট্রেনে বই পড়ে আরাম পাওয়া যায়। রাত একটায় ট্রেন কোনো এক স্টেশনে থামলো। আমি নেমে জটপট এক কাপ চা খেয়ে নিলাম। অবশ্য কেবিনেও আমাকে চা, স্যান্ডউইচ দিয়েছিল। সেটা অতি অখাদ্য। আমি জানি ট্রেনের খাবার কখনও ভালো হয় না। রাতে বাসা থেকেই খেয়ে নিয়েছি।

যাইহোক, ট্রেন হুইসেল দিলো।
আমি দৌড়ে ট্রেন উঠে পড়লাম। তখন দেখি, একটা মেয়ে ট্রেনের দরজায় মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার আমার মতোই বয়স হবে। মেয়েটা ভীষণ সুন্দর। মাথা ভরতি সুন্দর চুল। দাতের সেটিং দারুন। মোটা করে চোখে কাজল দেওয়া। কপালে একটা টিপ। পুরো একটা মায়াবতী। মেয়েটাকে দেখে ভালো লাগলো। ছোটবেলা থেকেই সুন্দরের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ। হোক সেটা মানুষ বা প্রকৃতি। আমি ক্লাশে সব সময় সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার পাশে বসতাম। এই অভ্যাস আমার ছোটবেলা থেকেই। আমি মেয়েটাকে বললাম, আপনার মন খারাপ? মেয়েটা বলল, চিটাগাং যাচ্ছি। কিন্তু আমার কামরায় লোকগুলো ভালো নয়। কার্ড খেলছে। হইচই করছে। আমার দিকে নোংরা চোখে তাকাচ্ছে। আমি বললাম, আপনি আমার কামরায় চলে আসুন। কোনো সমস্যা নেই। মেয়েটা আমার চোখ ও হাসি দেখে বুঝলো আমি ভালো মানুষ। মেয়েরা এসব বুঝতে পারে।

মেয়েটা আমার কামরায় এলো।
বলল, আপনি একা যাচ্ছেন? তারপর আমাদের মাঝে অনেক গল্প হলো। আমি অতি অল্প সময়ে আসর জমিয়ে ফেলতে পারি। মেয়েটার নাম লাবনী। আমার চেয়ে বয়সে দুই বছর বড়। অনার্স পড়ছে। সাবজেক্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞান। লালমাটিয়া কলেজ। রাত দুটা। ট্রেন কোনো স্টেশনে থামলেই আমরা দৌড়ে গিয়ে চা খাই। আমার গল্পে, আমার কথায় মেয়েটা মুগ্ধ। আমার অতি তুচ্ছ কথাতেও মেয়েটা খিল খিল করে হাসে। হাসিটা অনেক সুন্দর। একদম বুকে এসে লাগে। মেয়েটা বুঝে গেছে- আমি ভালো ছেলে। সহজ সরল। লোভী নই। মানসিকতা উন্নত। এগুলো মেয়েরা অতি সহজেই বুঝে যায়। এটা মেয়েদের একটা বিশেষ ক্ষমতা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোর হবে।
কুয়াশা ভেদ করে জানালা দিয়ে আপছা বড় বড় পাহাড় দেখা যাচ্ছে। ঢাকা থেকে চিটাগং এ শীত বেশি। হঠাৎ লাবনী আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ভালোবাসার স্পর্শ? কি যে ভালো লাগলো। লাবনীর বক্ষ আমার বুকের সাথে মিশে গেলো। আমরা ঠোটে ঠোঁট রাখলাম। আমরা দুজন এইসব আগে কখনও করিনি। অথচ কোথাও বেগ পেতে হয়নি। কতক্ষণ সময় বয়ে চললো জানি না। শুধু এতটুকু দুজনেই অনুভব করেছিলাম, জান্নাত নেমে এসেছে ট্রেনের এই কামরায়।
তারপর মুহুর্তের মধ্যে সব ঘটে গেল। কেমন একটা ভালো লাগায় সারা শরীর ভরে গেলো। অলসতায় ভরা দুটো শরীর। এরকম আনন্দ আমি আগে কোনোদিন পাইনি। কেমন একটা শিহরণ, কেমন একটা ভালো লাগা সেটা আমি ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না। আমি লাবনীর চোখে মুখে একটা প্রশান্তি দেখলাম। তখন আমাদের মুখে কোনো কথা ছিলো না। চোখ ভরা ঘুম ছিলো। অথচ দুজন ভেবে রেখেছিলাম একসাথে ভোর হওয়ার দেখব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:৫৮
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×