ভূত প্রেত তো লোকজন আজকাল বিশ্বাস'ই করে না। অনেকে হেসে উড়িয়ে দেয়। আমি বলি, এই দুনিয়াতে ওরাও আছে। আমি টের পাই। আমরা আছি, ওনারাও আছেন। চোখের আড়ালে তো রোগের জীবানুও থাকে।
একবার দিনাজপুর গিয়েছি। বিশাল এক বাড়িতে উঠেছি। এই বাড়িতে পঞ্চাশ জন মানুষ অনায়াসেই থাকতে পারে। বাড়ির সামনে বড় বাগান। বাড়ির পেছনে বিরাট পুকুর। সারাবাড়ি জুড়ে নানান রকম গাছপালা। এত বাড়িতে থাকে মাত্র তিনজন লোক। স্বামী স্ত্রী আর এক বুড়ো কাজের লোক।
আমাকে বিশাল এক রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই। হারিকেন জ্বলছে। নতুন পরিবেশে আমার ঘুম হয় না। তাছাড়া রাত জাগতে আমার ভালোই লাগে। দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আমি আবছা আলোতে বাইবেল পড়ছি। বাইবেল পড়লে অস্থিরতা কমে।
বুড়ো কাজের লোকটা আমাকে খাবার পানি দিয়ে গেলো। আর বলল, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন। এই বাড়িতে ভূত প্রেত আছে। রাতের বেলা ওরা বের হয়। সারাবাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। জেগে থেকে তাদের বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আমি বুড়োর কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম। আমি শহরের আধুনিক ছেলে। এইসব ভূত প্রেত আমার কাছে আসবে না। আমি বাইবেল পড়ায় মন দিলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমি ছাড়া এই ঘরে অন্য কেউ আছে!
আমার সারা শরীর শিরশির করতে লাগলো। কপালে ঘাম জমলো। হাত পা কেমন অসার হয়ে যেতে লাগলো। গলা শুকিয়ে গেলো। বাইবেলে মন দিতে পারছি না। প্রথম অভিজ্ঞতা তো!
নিজেকে বুঝালাম, ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। বিপদে মাথা ঠান্ডা না রাখলে ভুলভাল হবে নিশ্চিত। সব কাজেই বুদ্ধিটা ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু কিছুতেই ঘরের চারদিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণ পর নিজেকে নিজে বুঝালাম, ভূত প্রেত আমার মতো শান্ত, নিরীহ মানুষকে মারবে কেন? ওদের লাভ কি? কিছুটা সাহস সঞ্চয় হলো। চারদিকে ভালো করে তাকালাম। হারিকেনের আলোয় স্পষ্ট কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু জানালার দিকে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। সাদা শাড়ি পরা। মেয়েটা কুচি ছাড়া শাড়ি পরেছে। আমার চোখের বিভ্রম নয় তো!
চোখ কচলে ভালো করে দেখলাম। আমি জানি মানুষ যখন খুব ভয় পেয়ে যায়, যখন বুঝে আর রক্ষা নাই। সময় শেষ। ঠিক এই সময়টাতেই হঠাৎ সাহস বেড়ে যায়। তখন বিনা দ্বিধায় বলা যায়- আয় শালা কে কি কিরবি! আসলে এটা সাহস নয়। সাময়িক গাড় ত্যারামী।
সাদা শাড়ি পরা মেয়েটা চেয়ারে বসলো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। মনে হচ্ছে আমার স্ট্রোক হয়ে যাবে। হাত পা কাপছে। মেয়েটা ইশারায় আমাকে বাইবেল টা দেখালো। যেন বললো, মুসলমান হয়ে কোরআন বাদ দিয়ে বাইবেল কেন?
আমার ভয় কমতে শুরু করলো। হাত পা কাপানি বন্ধ হয়েছে। আমি প্রস্তুতি নিলাম মেয়েটাকে কিছু বলল। কিন্তু মেয়েটা আমার চোখের সামনে মিলিয়ে গেলো। আমি হারিকেন নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন বুড়ো কাজের লোককে ঘটনাটা বললাম। বুড়ো গম্ভীর মুখে বলল, বাইবেল পড়ার দরকার নেই। আমার কাছে কোরআন আছে, নিয়ে পড়েন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:০৫