রাত দুটা। গভীর রাত।
অর্জুন ছাদে উঠলো। সারা শহর গভীর ঘুমে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, যদি তুমি থাকো, তাহলে দেখা দাও। আকশে, বাতাসে, গাছের ঢালে, কিংবা যে কোনো জায়গায়। আমায় দেখা দাও। নইলে আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো না। নো নেভার। তুমি যা-ই হও, ঈশ্বর হও, ভগবান হও, সর্বশক্তিমান- যা-ই হও দেখা দাও। দেখা দাও। তুমি যে আছো- আমাকে বুঝতে দাও। সাড়া দাও। একবার, মাত্র একবার। আমি কাউকে কিচ্ছু বলব না। মাত্র একবার তোমার অস্তিত্বের প্রমান দাও। এতটুকুতেই আমার শান্তি। বাকি জীবনে আমি আর কিচ্ছু চাই না। অর্জুন বুঝলো আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নাই। আকাশ কিছু বলবে না।
শীতের রাত। চারিদিকে ঘুমন্ত শহর।
অর্জুন একটা বোঝাপড়া করতে চায় ঈশ্বরের সাথে। আজ ঈশ্বর দেখা না দিলে সে আর ইশ্বর বিশ্বাস করবে না। যারা বিশ্বাস করে তাদেরও বিশ্বাস করতে দিবে না। ঈশ্বর না থাকলে এই অর্থহীন জগতের মানে কি? জগতের শেষ কোথায়? মানুষের শেষ কোথায়? একদিন কি মানুষ ঈশ্বরকে ছাড়িয়ে যাবে না? যদি ধরে নিই, ঈশ্বর নেই বা আছে- তবু পৃথিবীতে আমার বা কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমার বিপদে আপদে ফেরেশতা বা জ্বীন এগিয়ে আসে না। অর্জুন একবার টিএসসিতে বসে ছিলো- তখন এক পাগল এসে বলল, সে নাকি আল্লাহকে দেখেছে। অর্জুন বলেছিলো- ঈশ্বরের তো কোনো আকার নেই, তুমি দেখলে কি করে? অথচ প্রফেসর আলতাফ একদিন ক্লাশে বলেছিলেন- ঈশ্বরকে দেখা যায় না। তবে অনুভব করা যায়।
অর্জুন এর বাবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছে। একসময় গ্রামের কলেজে কিছুদিন পড়িয়েছে। অর্জুন তার বাবাকে প্রশ্ন করেছিলো- বাবা ধর্মকর্ম করলে ইহকালে কি উপকার পাওয়া যায়?
বাবা বলেছিলেন- ঈশ্বরে ভক্তি বিশ্বাস থাকা ভালো। কোনো ক্ষতি তো নেই।
অর্জুন বলেছিলো- বাবা আমার যে ঈশ্বরে ভক্তি আসে না। বিশ্বাস আসে না। আমি কি নাস্তিক?
বাবা বললেন, বিশ্বাস তোমাকে শান্তি দিবে। দুশ্চিন্তা কমাবে। আর আস্তিক নাস্তিক বিষয়টা বড় গড়মেলে।
অর্জুন বলল, বাবা তোমার কি কখনও ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করতে ইচ্ছা করেনি?
হ্যাঁ অনেকবার অবিশ্বাস করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। এখন তো শেষ বয়সে এসে ঠেকেছি। আর কয়দিন বাঁচবো? সারা জীবন যখন বিশ্বাস করে এসেছি, তাহলে বাকি ক'টা দিনও বিশ্বাস করে যাই। ক্ষতি তো হচ্ছে না।
অর্জুন নীরাকে প্রশ্ন করেছিলো- তুমি আল্লাহকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করো?
নীরা বলল, কখনও এররকম করে ভেবে দেখিনি।
মানে কি নীরা?
আসলে প্রয়োজন না হলে কেউ কি আল্লাহকে ডাকে?
অর্জুন বলল, বাচ্চাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখার জন্য খেলনার দরকার হয়। ঠিক তেমনি ধার্মীকদের ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখার জন্য কি ধর্মীয় গ্রন্থ গুলো?
নীলা বলল, তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র। অংক, বিজ্ঞান দুটাই ভালো জানো। আমাকে প্রশ্ন করো না। প্রশ্ন করো নিজেকে। যত কঠিন অংকই হোক, তার সমাধান নিশ্চয়ই আছে। তার আগে তুমি মেডিটেশন করো। নিজের অস্থিরতা কমাও।
অর্জুন বলল, গডলেস মেডিটেশন?
নীলা বলল, মেডিটেশনে গডের দরকার কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২২ রাত ১:০৩