সে শুধু চলে। তার মেধা নেই, জ্ঞান নেই।
হিংসা নেই কিন্তু একটা শরীর আছে। সে বেশী দূর পর্যন্ত দেখতে পায় না। তার কাছে সূর্য অথবা জোছনা রাতের কোনো প্রার্থক্য নেই। সে বধির, তার কোনো ধর্ম নেই। তাই ঈশ্বর নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে তার ক্ষুধা আছে। তার আনন্দ নেই, বেদনা নেই, প্রেম ভালোবাসা নেই। তবে তার ভয় আছে, ঘুম আছে। মাটির গভীরে তার বাসা। পেট ভরা থাকলে সে লম্বা ঘুম দেয়। সে স্বপ্ন দেখতে জানে না। ক্ষুধা পেলেই সে মাটির গর্ত থেকে বের হয়। ব্যাঙ, ইঁদুর সামনে যা পায় খেয়ে নেয়। খাবার গিলতে তার ভীষন কষ্ট। শীত, বর্ষা বা গ্রীষ্ম প্রতিটা ঋতু সে টের পায়। অনেক সময় খাবারের ঘ্রান পেলেও তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আমার দোষ কি জানো সুরভি?
আমি সব কিছুই অল্প অল্প করে জানি। কোনোটাই পুরোপুরি জানি না। বা জানার চেষ্টা করি না। কারন আমার কোনো ইচ্ছাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। জ্যোতিষ শাস্ত্র কিছুটা শিখেছিলাম। আমি শুধু মেয়েদের হাত দেখতাম ঘরে বাইরে, ক্লাসে। খুব ভাব নিয়ে, কখনও কখনও ভ্রু কুচকে দু চারটে কথা বলে দিতাম। দুই একটা মিলে যেত। আর আমার নাম ছড়িয়ে যেত একপাড়া থেকে আরেক পাড়াতে। একসময় প্রতি বছর গ্রামে যেতাম। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই গ্রামে যেতাম। গ্রামের স্কুলে বিশাল এক মাঠ আছে। সেই মাঠে ফুটবল খেলতাম। আমি ফুটবল বেশ ভালোই খেলি। অনেক কাপ আর মেডেল জিতেছি। একবার আমার পায়ে বল এলে আমি খিচে দৌড় দিতাম বার পোষ্টের দিকে। যাইহোক, গ্রামে গিয়ে নীলার হাত দেখলাম। আমার হাত দেখার প্রতিভা দেখে নীলা মুগ্ধ!
গ্রামে একটা মেয়েকে আমার খুব ভালো লাগতো।
মেয়েটার নাম নীলা। নীলার বাবা ছিলো হাই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক। খুব ভালো লোক ছিলেন। তিনি আমার আব্বার বন্ধু ছিলেন। দুজনকে প্রায়ই দেখতাম বাজারে চায়ের দোকানে বসে গল্প করছে। বিকেলে আমি যখন মাঠে ফুটবল খেলতাম, তখন নীলা তার বান্ধবীদের সাথে এসে মাঠের কোনায় বসে থাকতো। মাঠের পশ্চিম পাশে ছিলো পদ্মানদী। হু হু করে বাতাস আসতো। নীলাকে দূর থেকে দেখতাম, ভালো লাগতো। তখন ছোট ছিলাম প্রেম ভালোবাসা সঠিক বুঝতাম না। এযুগের ছেলেমেয়েরা ভীষন পাকনা। কিন্তু আমরা ছিলাম সহজ সরল। কারন আমাদের সময় ইন্টারনেট ছিলো না, ডিশ লাইন ছিলো না, মোবাইল ফোন ছিলো না। অনেক গুলো টিভি চ্যানেল ছিলো না।
রাতের খাবার খেয়ে উঠানে শীতল পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছি।
দাদী আমাদের গল্প শুনাচ্ছেন। মুগ্ধ হয়ে দাদীর গল্প শুনছি। হঠাত শুনি নীলাদের বাড়িতে খুব চিলাচিল্লি হচ্ছে। আমরা সবাই দৌড়ে নীলাদের বাসায় গেলাম। জানলাম বাথরুম থেকে ঘরে আসার পথে একটা সাপ নীলাকে কামড় দিয়েছে। নীলার বাবা তখন গ্রামে ছিলো না। ঢাকায় গিয়েছিলেন। পাটি বিছিয়ে নীলাকে উঠানে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার জ্ঞান নাই। সারা শরীর কালচে হয়ে গেছে। নীলার ফুপু নামকরা এক ওঝাকে খবর দিলেন। ওঝা এসে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো। ধূপ জ্বালালো। ওঝা নীলাকে ঘিরে ঘুরতে শুরু করলো। আর মন্ত্র পড়তে লাগলো। এবং ওঝা বলল, ভিড় কমান। অনেক সময় লাগবে বিষ ছাড়াতে। জাত সাপের কামড়!
পরের দিন সকালে আমি গেলাম নীলাদের বাসায়।
দেখি নীলা উঠানে বসে আছে। তার মন খারাপ, সে কাঁদছে। আমি বললাম, কি হয়েছে কাদছো কেন? নীলা কিছুতেই বলে না। আমার মন বলছে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে এগেছে। অনেক জোরাজুরি করার পর নীলা বলল, আমাকে বিষাক্ত কোনো সাপ কামড় দেয় নাই। ঢোড়া সাপ আমার পায়ের উপর দিয়ে গিয়েছিলো। পুকুরে এরকম সাপ কত দেখেছি! কিন্তু রাতের অন্ধকারে হঠাত খুব ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। অথচ এই ধরনের সাপকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ওঝা সাপের বিষ নামার নাম করে সারারাত আমাকে রেইপ করেছে। নীলার কান্না দেখে আমার ভীষন কষ্ট লাগলো। এই লজ্জার কথা কাউকে বলা যায়? আমি আর স্কুলে যাবো না নীলা বলল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৬