
লেখালেখি করার মধ্যে এক ধরনের অকৃত্রিম আনন্দ আছে।
অন্য কেউ সেই আনন্দ পায় কিনা জানি না। আমি পাই। আমি লিখেই অনেক আনন্দ পাই। কিন্তু আমার সেই লেখা পাঠক পড়ে আনন্দ না পেলেও আমার ভালো লাগে। মায়ের ভাষায় লিখতে পারছি এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে! আমার লেখা যদি কেউ না পড়ে তবুও আমি লিখে যাবো। ভালো লিখতে হলে কি কি করতে হয়? বড় বড় লেখকেরা বলেন, প্রচুর পড়তে হয়। ভালো লেখার প্রধান শর্তই হচ্ছে পড়া। জ্ঞানী গুণীরা বলেন, পড়ো বেশি। লিখো কম। শোনো বেশি, বলো কম। আমার মধ্যে এই গুনটা আছে। আমি পড়ি বেশী, এবং বলি কম। শুনি বেশী।
ভালো লেখার জন্য দরকার অনেক অনেক অভিজ্ঞতা।
সব শ্রেনীর মানুষের সাথে মিশতে হয়। মানুষকে বুঝতে হয়। জানতে হয়। চিনতে হয়। সবার আগে একজন ভালো মানুষ হতে হয়। উদার হতে হয়। হৃদয়বান হতে হয়। নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়। কুটিল জটিল লোক ভালো লেখক হতে পারে না। অন্যের পেছনে তারাই লেগে থাকে যারা ভালো লিখতে জানেন না। একজন সহজ সরল মানুষ পারে সহজ সরল করে লিখতে। অতি চতুর লোকের লেখার মধ্যে চতুরতামি এসে যায়। যা পাঠকের মধ্যে বিরক্তির কারন হয়। কোনো কোনো নির্বোধ লোক বলে, তুমি পৃথিবী কতটা দেখেছো? বাঙ্গালী জাতি ছাড়া আর কোন কোন জাতির সাথে মিশেছো? নির্বোধ এটা বুঝে না, তাজমহল নিয়ে লিখতে হলে আগে তাজমহল দেখার কোনো দরকার নাই।
উইপোকা কি বুঝে বই খায়?
নিজেকে শেয়ান ভেবো না। বাপেরও বাপ থাকে। যাইহোক, বাংলা সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য সব পড়তে হবে। দেখার চোখ থাকতে হয়। ভালো করে দেখলে তবেই না লিখতে সহজ হয়। লেখার সময় সহজ ও সুন্দর সব শব্দ ব্যবহার করতে হয়। মাথায় রাখতে হবে, লেখাটা যখন পাঠক পড়বে, পাঠক যেন বিরক্ত না হয়। পাঠককে আনন্দ দিতে হবে। লেখার মধ্যে আকর্ষন করার মতো উপাদান থাকতে হবে। কঠিন শব্দ বা বেশির ভাগ পাঠকের কাছে অপরিচিত শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। পাঠকের আছে অবারিত দ্বার। কাজেই পাঠক ধরে রাখা মুখের কথা নয়। মাথায় কিছু থাকতে হয়। দীর্ঘদিন লেখালেখির মধ্যে টিকে থাকা বিশাল ব্যাপার। সবাই পারে না। হুটহাট এসে অন্যের ভুল ধরা বুদ্ধিমান মানুষের লক্ষন নয়।
এই দেখুন আমি এখন সহজ ভাবে কিছু লিখে দেখাচ্ছি-
দুপুরে টেবিলে খেতে বসেছি একা। বাসার সবাই মেজো ফুপির বাসায় গেছে। মেজো ফুপির মেয়ের জন্মদিন। একাএকা খেতে আমার ভালো লাগে। তাঁরা মধ্যে আজ আবার রান্না করেছে রুই মাছ, পটল দিয়ে। ইদানিং রুই মাছ আমার ভালো লাগে না। অবশ্য এক সময় রুই মাছ আমার ভীষন প্রিয় ছিলো। বয়স যত বারে, মানুষের রুচির তত পরিবর্তন হয়। বিকাল চারটা বাজে। ক্ষুধাও পেয়েছে বেশ। আমার ইচ্ছা করছে এখন তেহারি খেতে। গরম গরম তেহারি। যে তেহারিতে মাংসের পরিমান ঠিকঠাক থাকবে। তেহারিতে মাংসের পরিমান কম থাকলে আমি সেই তেহারি খাই না।
আমি বাইরে বের হলাম।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবো। আমাদের এখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। নাম হচ্ছে ঢাকা হোটেল। ওদের তেহারিটা দারুন হয়। একদম আসল স্বাদ। পর্যাপ্ত মাংস দেয়। সুন্দর করে সালাদ বানিয়ে দেয়। গরম ধোয়া ওঠা তেহারী। হাফ প্লেট ১৭০ টাকা। ফুল প্লেট ২২০ টাকা। আমি ফুলপ্লেট নিলাম। গরম তেহারী। ধোয়া বের হচ্ছে! সাথে কোক নিলাম। ঠান্ডা। খুব মজা করে খেলাম। বেশ তৃপ্তি পেলাম। আমি বিনা দ্বিধায় এই তেহারিকে দশে নয় দিবো। আমি কেন, যে কেউ নয় দিবে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটা বেনসন সিগারেট ধরালাম। আর কি আশ্চর্য নিজেকে আমার একজন সুখী মানুষ বলে মনে হলো! পৃথিবীতে কেউ পুরোপুরি সুখী হতে পারে না। আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, মাদার তেরেসা কেউই পুরোপুরি সুখী ছিলেন না।
তেহারিটা এত ভালো রান্না করেছে যে,
রাতে আবার গেলাম সেই ঢাকা হোটেলে। আবারও তেহারি খেলাম। খেলাম খুব মজা করে। আমি যদি জমিদার হতাম যে বাবুর্চি এই তেহারি রান্না করেছে তাকে একশ' স্বর্ন মূদ্রা দিয়ে দিতাম। এখানেই শেষ না আরো আছে, একশ' মোহর দিতাম। সোনায় বাঁধানো ডাটওলা একটা তরবারি দিতাম। হীরা বসানো একটা আংটিও দিয়ে দিতাম। যা ব্যাটা সুখে থাক। যাইহোক, রেস্টুরেন্টে খেয়েছি এটা অবশ্যই বাসায় গোপন রাখতে হবে। সংসার করলে কতদিক যে সামলাতে হয়! আগামীকাল গ্রামের বাড়ি যাবো। একটা বিয়ের দাওয়াত আছে। ইচ্ছা আছে পদ্মাসেতুটা দেখে আসবো। দুই কন্যাকে সাথে করে নিয়ে যাবো। বড় কন্যার চেয়ে ছোট কন্যা বেশি খুশি হবে, আমি জানি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


