প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার এখনও আড়াই বছর হয়নি। কিন্তু এর মধ্যে তুমি বেশ কথা বলো। তোমার কোথায় বুদ্ধির ছাপ থাকে স্পষ্ট। আমার তো মনে হচ্ছে আর কিছু দিন পর তোমার সাথে কথায় আমি হেরে যাবো। তোমার মার কাছ থেকে শুনে শুনে তুমি ছড়া কবিতা শিখে ফেলেছো। গানও শিখেছো। মাঝে মাঝে আপন মনে গাইতে থাকো। ইউটিউবে কার্টুন দেখা তোমার অভ্যস হয়ে যাচ্ছে। এমন কি তুমি আমার মোবাইল নিয়ে গিয়ে ইউটিউব দেখো। টিকটক দেখো। ফারাজা, আমার যখন পাঁচ বছর বয়স- তখন মোবাইল ছিলো না। ইন্টারনেট ছিলো না। কম্পিউটার ছিলো না। ঘরে একটা টিভি ছিলো। সেই টিভিতে মাত্র একটাই চ্যানেল। আমি তোমার শৈশব এবং আমার শৈশবের কথা ভাবি। সম্পূর্ন আলাদা। আমার চেয়ে তোমার শৈশব অনেক উন্নত।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
আমি যখন ছোট তখন বাবা মায়ের কাছে চাইতে হতো। কিন্তু তোমার কিছু চাইতে হয় না। চাওয়ার আগে তোমাকে সব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল তোমাকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছিলাম। কেনাকাটার চেয়ে লিফটে উঠতে নামতে তুমি বেশি পছন্দ করো। যাইহোক, ঘটনা হচ্ছে- গতকাল রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ভীষন ব্যস্ত রাস্তা। তুমি আমার কোলে। আমার পাশে আরো তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন। দুজন বোরকা পরা মহিলা এবং একজন পুরুষ পাঞ্জাবী পরা। তারাও রাস্তা পার হবেন। অপেক্ষা করছি কখন সিগনাল পড়বে। ঠিক এমন সময় দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যাক্তি আমাকে ধাক্কা দিলো। আর একটু হলেই গাড়িতে চাপা পড়তাম তোমাকে নিয়ে। যে ধাক্কা দিলো সে বয়স্ক লোক। মুখে দাঁড়ি। মাথায় টুপি। দেখে বুঝা যায় নামাজি মানুষ। বুঝ মানুষের অবস্থা! এই সমাজের মানুষ ভয়াবহ। খুব সাবধান থাকতে হবে তোমাকে। আমার উচিৎ ছিলো দাঁড়িওলা লোকটা একটা থাপ্পড় দেওয়া।
প্রিয় কন্যা আমার-
আমি যখন তোমার সমান ছিলাম। তখন আমার এত অসুখ বিসুখ হতো না। অথচ সারাদিন মাটিতে ধুলো বালিতে খেলা করতাম। তোমাকে এত সাবধানে ও এত যত্নে রাখি তবুও তুমি জ্বর ঠান্ডা বাঁধিয়ে ফেলো। গত সপ্তাহে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। ডাক্তার অনেক গুলো ওষুধ দিয়েছেন। এখন জ্বর নেই। কিন্তু ঠান্ডা আছে। মাঝে মাঝে কাশি দিচ্ছো। ভালো কথা হচ্ছে- ওষুধ তুমি আগ্রহ নিয়ে খাও। তোমারও ওষুধ যথেষ্ঠ আগ্রহ নিয়ে খায়। সুরভি আর আমার তুমি বড় আদরের। প্রচন্ড আদর ভালোবাসায় তুমি বড় হচ্ছো। আমি নিশ্চিত এত আদর ভালোবাসা আমি পাইনি। আদর করবে কে? কারন আমরা চার ভাই ছিলাম। এদিকে মা থাকতো অসুস্থ। আব্বা বাইরে। তবে নানা নানী বেঁচে থাকতে আদর পেয়েছি। আর দাদা দাদীর আদর খুব একটা পাইনি। কারন তাঁরা থাকতেন গ্রামে। তোমার ভাগ্য ভালো। তোমার চাচা চাচী, মামা মামী সকলের আদর ভালোবাসা পাচ্ছো।
প্রিয় কন্যা আমার-
'দ্যা আলকেমিস্ট' নামে একটা বই আছে। ভালো বই। বইটা আমি পড়েছি। তুমিও নিশ্চয়ই বড় হয়ে পড়বে। অবশ্যই পড়বে। তোমাকে অনেক বই পড়তে হবে। যত পড়বে, তত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে 'জ্ঞান'। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর দুনিয়াতে আর কিছু নেই। মানুষের চেয়ে বই উত্তম। মানুষ তোমাকে কষ্ট দেবে। অবহেলা করবে। ক্ষতি করবে। কিন্তু বই তোমাকে কষ্ট দেবে না, অপমান অবহেলা করবে না। ক্ষতি করবে না। বই তোমাকে আনন্দ দেবে, জ্ঞান দেবে। একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে। এজন্য বই কে বন্ধু বানাও। বই কে আপন ভাবো। প্রতিদিন তুমি বই পড়বে যতই ব্যস্ত থাকো। কমপক্ষে দশ পাতা। দ্যা আলকেমিস্ট বইয়ে একটা লাইন এই রকমঃ 'যখন তুমি কোনো কিছু মন থেকে পেতে চাইবে পুরো বিশ্বব্রাক্ষান্ড তোমাকে তা পাইয়ে দেয়ার জন্য ফিসফাস শুরু করবে।' অর্থ্যাত তীব্র ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব।
প্রিয় কন্যা আমার- ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)
আর কিছু দিন পর রমজান মাস শুরু হবে। ইদানিং কেউ কেউ রমজানকে রমাদান বলছে। তবে আমার কাছে রমজান টাই শুনতে এবং বলতে ভালো লাগে। রমজান বলি আর রমাদান বলি রোজা রাখাটাই হচ্ছে আসল। ভাষাতত্ত্ব একটি জটিল বিষয়। প্রত্যেকটি ভাষায় রয়েছে বিদেশি ভাষার শব্দ ভাণ্ডার। কোনো ভাষাই অন্য ভাষা থেকে শব্দ ধার না করে সমৃদ্ধ হতে পারেনি। আমাদের বাংলা ভাষাতে অনেক বিদেশি শব্দ আছে। আমি রোজা রাখতে পারি না। অভ্যাস নেই। যাইহোক, আজ লেখা এখানেই শেষ করছি। তুমি ভালো থাকো। সুস্থ থাকো। আনন্দে থাকো। তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ- জাস্ট নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলুন। তারপর একজন মানবিক ও হৃদয়বান মানুষ হোন। তাহলে জীবন হবে সহজ সরল সুন্দর ও আনন্দময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৫০