somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মাই ফাদার

১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন পর বাবাকে স্বপ্নে দেখেছি।
দুপুরবেলা আমি আরামবাগ থেকে হেটে হেঁটে মতিঝিলের দিকে যাচ্ছি। প্রচন্ড রোদ। তবে বাতাস আছে। তাই ঘামছি না। নটরডেম কলেজের সামনে একলোক আখের রস বিক্রি করছে। এক মগ কুড়ি টাকা। সাথে বরফ দিয়ে দিচ্ছে। কেউ চাইলে কয়েক ফোটা লেবুর রসও দিচ্ছে। খাবো কিনা ভাবছি। এমন সময় দেখি আব্বা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
বলল, খেতে মন চাইলে খা।
আমি বললাম, তুমি খাবে?
না।
আমিও খাবো না।

আমি আর আব্বা পাশাপাশি হাঁটতে থাকলাম।
আব্বা বলল, অনেকদিন মনে হয় সেলুনে যাচ্ছিস না।
না যাই না। আমার মনে আছে। তুমি সব সময় জোর করে আমাকে সেলুনে নিয়ে যেতে। দাঁড়িয়ে থেকে চুল কাটাতে। সেলুনওলা অবাক হতো। এত বড় ছেলের চুল কাটাতে নিয়ে এসেছে তার বাবা। গত আড়াই মাস সেলুনে যাই না। অথচ কেউ চুল কাটার কথা বলেও না।
আব্বা বলল, তুই তো অনেক শুকিয়ে গেছিস রে। গায়ে রঙ কালো হয়ে গেছে।
হ্যাঁ ওজন কমে গেছে। এখন আর নিজের যত্ন নিই না। ইচ্ছা করে না। তাছাড়া আমার দিকে কেউ ভালো করে লক্ষ্য করে না। তুমি হুট করে মরে গেলে। আমার জীবনটা বদলে গেলো।

আব্বাকে বললাম, তোমার মনে আছে। একবার জাহাজে করে সুন্দরবন যাচ্ছিলাম। আমি জাহাজের ছাদে উঠেছিলাম প্রচুর বাতাস ছিলো। বাতাসে আমার চুল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। তুমি পকেট থেকে চিরুনি বের করে আমার মাথার চুল আচড়ে দিয়েছিলে। সেই দৃশ্য দেখে অনেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। এত বড় ছেলের কেউ চুল আচড়ে দেয়! আমার দাঁত ব্যথা করলে কেউ বুঝতো না। কিন্তু তুমি ঠিকই বুঝতে। নিয়ে যেতে ডাক্তারের কাছে। আসলে বাবারা অনেক কিছু বুঝে। তুমি আমাকে খুব বেশি ভালোবাসতে। মনে আছে তোমার তুমি আর আমি প্রায়ই রিকশা করে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম। আইসক্রীম খেতাম।
অনেক কিছুই ভুল মেরে বসে আছি রে।

আব্বা এখন আমার মনে হচ্ছে। তুমি আরো অনেকদিন বেঁচে থাকতে। আমরা কেউই তোমার যত্ন করিনি। তুমি অসুস্থ হলে। অথচ আমরা কেউ তোমার দিকে নজর দেইনি। আর তোমারও দোষ আছে, তুমি ডাক্তারের কছে যেতে চাইতে না। হাসপাতালে থাকতে চাইতে না। তবে তুমি সঠিক চিকিৎসা পেলে আরো অনেকদিন বেঁচে থাকতে। তোমার স্বাস্থ্য ভালো ছিলো। ছোটবেলা থেকেই তোমাকে কখনও অসুস্থ হতে দেখিনি। আচ্ছা, আব্বা মৃত্যুর পর তুমি কেমন আছো?
ভালো আছি। আমার সাথে আমার মা বাবা আছে।
আচ্ছা, ভালো কথা তোর মা কেমন আছে?
মা ভালো আছে। সারদিন নাটক সিনেমা দেখে। লুডু খেলে। প্রতিমাসে ২/৩ বার ডাক্তারের কাছে যায়। অনেক ওষুধ খায়।

আব্বা এখন আমি অনুভব করি বাবাদের অনেকদিন বেঁচে থাকা দরকার। বাবা বেঁচে থাকলে ভরসা পাওয়া যায়। মনে সাহস থাকে। বিপদে আপদে অন্তত একজন মানুষ এগিয়ে আসবে, তাকে না ডাকলেও।
আব্বা বলল, এখন আর এসব কথা ভেবে লাভ কি?
আচ্ছা আব্বা তুমি কি তোমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়েছো?
না নেই নি।
তাহালে ছোট চাচা যে বলে। তুমি টাকা নিয়েছো। সেই টাকার বিনিময়ে তুমি গ্রামের বাড়ি ছোট চাচাকে নিয়ে যেতে বলেছো।
ওরা মিথ্যা বলে।
ছোট চাচা ভয়াবহ মিথ্যাবাদী। আব্বা জমিজমা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
জানি। তুই আমার ছেলে। আমার চেয়ে ভালো তোকে আর কে চিনবে? জানবে? বুঝবে?

আব্বা আমার খুব আফসোস হয়। তুমি আমার কন্যা ফারাজাকে দেখলে না। ফারাজা জন্মের পনের দিন আগে তুমি মরে গেলে।
কে বলে, দেখিনি? তুই ফারাজাকে নিয়ে সন্ধ্যার পর হাঁটতে যাস। আমি জানি তো। দেখি।
আব্বা তুমি মাঝে মাঝে আমার স্বপ্নে এসো। ভালো লাগে। সাহস পাই।
আচ্ছা, যা তুই চাইলেই আমি তোর স্বপ্নে আসবো। তুই আমার অনেক আদরের সন্তান। একবার স্কুলে এক শিক্ষিক তোকে বোকা বলেছিলো। আমি সেদিন স্কুলে গিয়ে তোর শিক্ষক কে বলেছিলাম। আমার ছেলে বোকা নয়। এবং তোকে বোকা বলার কারনে আমি তোকে অন্য স্কুলে ভরতি করিয়ে দিয়েছিলাম।
হ্যাঁ আব্বা আমার মনে আছে। সেদিন তুমি আমাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে এসেছিলে।

আব্বা তোমার কোনো জিনিসপত্র আমার কাছে নেই। শুধু আছে সৃতি।
তোমার অনেক গুলো হাত ঘড়ি ছিলো। এগুলো কার কাছে?
আমার ভাইদের কাছে।
শুনেছি, গাজীপুরে তুমি একটা পুকুর করেছিলে। মাছ ছেড়ে ছিলে।
এসব কিছু আমার মনে নেই।
আব্বা তুমি মাঝে মাঝে ডায়েরী লিখতে। আমি দেখেছি। তোমার সেই ডায়েরী কার কাছে?
জানি না।
আব্বা তোমার হাতের লেখা অনেক সুন্দর ছিলো। অথচ আমার হাতের লেখা একদম বাজে। জানো আব্বা আমি কিন্তু সিগারেট খাওয়া শিখেছি তোমার কাছ থেকে। তোমার মতো সুন্দর করে সিগারেট খেতে আমি আর কাউকে দেখিনি। তোমার সিগারেট ধরার স্টাইল, ছাই ফেলার স্টাইল- দেখে আমি মুগ্ধ হতাম। শেখ মুজিবও এত সুন্দর করে সিগারেট খেতে পারতেন না।

আব্বা বলল, শোন ভালো থাকিস। আমি চলে যাচ্ছি।
যাওয়ার আগে একবার আমার মাথায় হাত রাখবে? প্লীজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৩:০০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্মে পন্ডিত হতে কতক্ষণ লাগে, ফাইন্যান্সে পন্ডিত হতে কতক্ষণ লাগে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭



আপনি জীবনেও "নামাজের গুরুত্ব" নিয়ে কোন পোষ্ট লেখেননি; ২/১টা কবিতা লিখেছেন, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে লিখেছেন, শেখ হাসিনার রাতের ভোট নিয়ে লিখেছেন, জেনারেল জিয়ার খালকাটা নিয়ে লিখেছেন। আজকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রহস্যের পাখি

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৬


ঢলের নদীতে ভাঙো তুফানের ঢেউ
ঢেউয়ের তুফানে গাঁথো নদীর কুসুম।
রাতের নিগণ্ঠে বেঁধে দিকচক্রবাল
আঁধারের গর্ভে খোঁজো রাতের কুটুম।

তারপর আঁকি
স্বপ্ন নয়, বৃক্ষ নয়, রহস্যের পাখি।
সরল শরীরে ধরে আগুনের দ্রোহ
কী আশ্চর্য ফুটিয়েছ সম্ভেদ মোহ!


কদম্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই রমজানে ব্লগিং আরো বিরক্তিকর হবে.....

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ২:২৩



দুইটা রোজা শেষ। আমার বেশিরভাগ পোস্ট স্মৃতিচারণ মূলক। যারা আমাকে চেনে তারা অনেকেই পোষ্ট পড়তে চায়না। নিক দেখেই বুঝে ফেলে পোষ্টে কি লেখা আছে। রোজা নিয়ে বিশাল স্মৃতিচারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন দায়িত্ব স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৩৫



জাতির জনক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বললেন। অত:পর বিভিন্ন ঘর থেকে হানাদারের উপর হামলা হলো। অবশেষে দিশেহারা হানাদার আত্মসমর্পন করলো।অবশেষে আমরা স্বাধীন হলাম। অবশেষে আমরা স্বাধীনভাবে দূর্নীতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রামাদান ডায়েরিঃ ঢাকায় প্রথম রোজার স্মৃতি

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:১৮

রোজার সময়টা আমাদের বাসার পরিবেশ সব সময় আলাদা হত । রান্না বান্নার দিক থেকে একটা আলাদা আবহাওয়া তৈরি হয়ে যেত আপনা আপনি । রমজানে আমাদের বাসাতেই সব সময় ইফতার তৈরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×